তারকোভস্কির ‘দ্য মিরর’ : ‘জন্ম মানে ঘুমিয়ে পড়া’
যে কোন মানুষের মনোভূমি অশান্ত হলে সে চায় চিৎকার করতে, চিৎকার অনুরণনের জন্য যে হাওয়া দরকার গমের বা বাজরা ক্ষেতে-তা ভ্যান গগের হোক আর তারকোভস্কির হোক— তা না থাকলে সে আর্তনাদ কেউই শুনতে পাবেনা।।
সকাল থেকে আমার ভাবে—বুদ্ধিতে—চিন্তা—মননে দমকা এক নিষেধাজ্ঞা এল; হাজার চেষ্টা করেও হৃদয়ের আগুনের কেরোসিনের নীল রঙ আর সাদা হলনা।
ক্লান্ত বিপর্যস্ত মন তখন-ই ড্রাইভ থেকে তারকোভস্কির ‘দ্য মিরর’ দেখতে বসল।
এই সিনেমাটা নাকি পৃথিবীর যত ধরণের অটোবায়োগ্রাফিক্যাল শিল্পকর্ম আছে তার মধ্যে অগ্রগণ্য। সিনেমা’র মূল চরিত্র হয়তো শুধু তারকোভস্কি নিজেই শুধু নন, বরং মানব মনের ‘স্মৃতিপট’ঃ এই পটে শুধু আমি বাস করেনা। বাস করে অতীত, তারও অতীত, আনফুলফিল্ড desire, ঘটমান বর্তমান, দাহকালের সংকট, মৃত্যু মৃত্যু আর মৃত্যু।
জন্ম-মৃত্যু নিয়ে তলস্তয়-এর একটা উক্তি তারকোভস্কি কোট করেছিলেন তার ‘টাইম উইদিন টাইম’ বইয়ে, এর আংশিক অনুবাদ আছে শাহাদুজ্জামান-এর ‘বায়োস্কোপ, চলচ্চিত্র প্রভৃতি’ বইয়ে। ঐ বই থেকেই এই অংশ নেয়া।
“জন্ম মানে ঘুমিয়ে পড়া; তারপর এই জীবন জুড়ে যা কিছু ঘটে তা সব স্বপ্ন। মৃত্যু মানে ঘুম থেকে জাগা। কেউ যদি অল্প বয়সে মারা যায় তাহলে বুঝতে হবে যথেষ্ট ঘুম হবার আগেই তাকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যে আত্মহত্যা করেছে সে দুঃস্বপ্ন দেখছিল যার সমাপ্তি সে টেনেছে; কারণ সে জেনেছে সে যে ঘুমাচ্ছিল এবং সচেতনভাবে সে তার ঘুম ভাঙিয়েছে”
এর পরেই তারকোভস্কি লিখছেনঃ এত কাল যাবত মানুষ এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে তবু এখনো সে নিশ্চিত হতে পারলনা তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী? কী অর্থ তার জীবনের? এ বড় আশ্চর্য হেয়ালি!!!!
এই বঙ্গ তারকোভস্কি’র যুগে কবে প্রবেশ করবে জানিনা, তবে সেরকম অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে, জিহাদের মৃত্যু পাইপের গাঢ় অন্ধকারের মত।
০৫/০১/২০১৫
[ইলিয়াছ কামাল রিসাত – সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ইংরেজী দৈনিক অবজারভারে কর্মরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]