জঘন্য-তন্ত্র – মাহবুব শাহরিয়ার

জঘন্য-তন্ত্র

আমি যহন এক কলকি গাঞ্জা খায়া আমার মাঝে নাই, তখনই দেখি প্যাঁচাটা আর ধোলাইখাল নয়া রাস্তার ঘোড়া হীরালাল হাইকোর্টের সামনে দিয়া কথা কইতে কইতে যায় ঢাকা ক্লাবের দিকে। আমি এক চোখ কোনোমতে খুইলা কইলাম, ‘কই যান’। তারা কইলো, ‘চোপ হালার উন্দা কুনহানকার’। আমি আবার চোখ বন্ধ কইরা হারায়া গেলাম।

খানিক বাদে দেখলাম মুখে গামছা বানতে বানতে ধোলাইখালের চ্যাতা রাম পাঠাটাও যাইতাছে ভ্যা ভ্যা করতে করতে। এইবার আর টিকতে না পাইরা আমি ভাবের জগত থেইকা বাইর হয়া দৌড়ায়া রাম পাঠারে ধরলাম, ‘কই যায় ভ্যা’? ভ্যা শুইনাই তো চেইত্যা ফায়ার, ‘চোপ ভ্যা, কালকা আমাগো হাতিরে অপমান করছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। পুলিশ আইনা কান ধইরা বাইর কইরা দিছে’। আমি তো অবাক, একি হুনলাম !!! আমাগো এত্ত বড় সাইজ হাতিরে কানে ধইরা বাইর করলো কোন হ্যাডোমে? ভ্যা আর কোনো কথা না কইয়া দৌড়াইতে থাকলো।

আর তো থাকন যায় না। আমিও দিলাম ভ্যা এর পিছন দিয়া দৌড়(আমার ভাষায় লোড়)। লোড়াইতে লোড়াইতে আয়া দেহি ঢাকা ক্লাব এর উলটা দিকে শিশু পার্কের সামনে সমস্ত পশু সমাজ ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড লয়া খাড়ায়া স্লোগান দিতাছে “উদ্যানে গলফ খেলা , চলবে না চলবে না । উদ্যান কারো বাপের না , এই উদ্যান ছাড়ুম না” আরো নানান চিল্লা চিল্লি। হ্যান্ড মাইক লয়া হাজারীবাগের খরগোশ মৌসুমী লাল ওড়না উড়ায়া দৌড়াইতাছে আর চিল্লাইতাছে। চাইরদিকে শাহবাগ আর রমনা থানার পুলিশ সতর্ক অবস্থান লয়া খাড়ায়া রইছে, কয়টা সুন্দরী মহিলা পুলিশও দেখলাম চোখে মুখে কঠিন ভাব আনার চেষ্টা করতাছে মাগার সাইডের পোলা পুলিশগো দিকেও মাঝে মাঝে তাকাইতাছে। সমস্ত মিডিয়ার লোকজন আইসা হাজির। মতিকন্ঠ থেইকা শুরু কইরা দৈনিক মগবাজার এর সমস্ত সাংবাদিক, আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন-ও বাদ নাই। এযে বিশ্রি অবস্থা! আবার জলকামানও আছে দুই দিকে দুইটা।

এর মইধ্যে হীরালাল হঠাত চেইতা চিহিইইইই কইরা ডাক দিয়া দৌড় দিলো ঢাকা ক্লাবের গেটের দিকে। আর যায় কই, নগদে পুলিশের বাঁশি আর লাইগা গেলো হুড়াহুড়ি ,চিল্লাচিল্লি। পুলিশ আর সাংবাদিকের লোউড়া লৌড়ি। এই গরমের মইধ্যে লাঠি পেটার সপা সপ আওয়াজ, ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক আর টিভি সাংবাদিকের লাইভ টেলিকাস্ট শুরু।

পিছে চায়া দেহি মংলার বিপ্লবী রাজহাঁস ওয়েস্টার্ন মিলন ‘লাগারে কাদিরা’ কয়া চিল্লান দিয়া এক পুলিশের বিচি লক্ষ কইরা দিলো ঠোকর। আমি হপায় লোড় দিমু ইমুন সমে এক পুলিশ পিছন দিয়া আমার কলার পাকড়াইলো আর আমি নগদে শার্টের বুতাম খুইলা পুলিশের হাতে শার্ট দিয়া লোড় শুরু, বাবা আপনা প্রাণ বাঁচা। এক লোড়ে গিয়া উঠলাম শাহবাগ পুলিশ লাইনের সামনের ওভার ব্রিজে। পুরা কাহিনীটা দেহন দরকার এইখান থেইকা।

এইবার কাহিনী অন্যরকম, সব গিয়া জমছে রমনার গেটে। আর এই পাড়ে পুলিশ ঢাকা ক্লাব রক্ষায় ব্যস্ত। পুলিশের ভাব টা ইমুন যে ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সূচাগ্র মেদিনী’। রমনার গেট থেকা আরমানি টোলার দামড়া ষাঁড় ইস্কা হমানে তার ঘাস এর বস্তার ভিত্রের থেকা ইটা বাইর কইরা পুলিশ রে মারতাছে আর লগে যোগ দিছে হীরালাল, পশু হাসপাতালের হাইব্রিড কুত্তা জোলা, কলতাবাজারের সাদা মোরগ রন্টু আরো বহুত পশু সমাজের সদস্যরা।

আর এইদিক থেইকা পুলিশও পালটা আক্রমণ করতাছে তাগো ইট পাটকেল মাইরা। সাইডে শাহবাগ থানার সেকেন্ড অফিসার আজগর(হালায় একটা ফাউল)। এই আজগইরারে দেখলেই মনে হয় চান্দাবাজ, আমারে একদিন পিকক থেইকা টি এস সি যাওনের সমে ধইরা থানায় নিয়া আটকায়া স্টমাক ওয়াশ করবার চাইছিলো। পরে ৫০০ টেকা দিয়া ছুইটা আইছি, আমার এক নম্বরের চোক্ষের বিষ হালায়।

আতখা এস আই আজগররে দেখলাম দৌড় দিয়া সামনে গিয়া টিয়ার শেল চার্জ করনের অনুমতি দিলো আর নগদে ঠাশ ঠাশ আওয়াজ আর কয়টা টিয়ার শেল ধোয়ার ল্যাংজা লয়া রমনা পার্কের গেটের দিকে ছুইটা গেলো। কতক্ষণ চুপ সব, তারপর মিডিয়ার ভাষায় ছত্রভংগ হয়া গেলো আর এস আই আজগর এর ঠোঁটে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি, ভাবটা ইমুন যে ‘বহুত চুদুর বুদুর করছো হোগার পো, যাও বাইত্তে যাও’। মাগার ২ মিনিট এর মাথায় আওয়াজ পাইলাম আবার ‘লাগারে কাদিরা’। হায় হায়, মংলার বিপ্লবী ওয়েস্টার্ন মিলইন্যা আবার চেইত্যা গেছে। পিছন দিকে হাতে গ্যাস পুড়ানের লেগা মশাল জ্বালায়া হীরালাল ও হাজির। সব পশু সমাজ আবার একলগে হইছে। এরা তো বহুত মুসিবত দেহা যায়। আবার টিয়ার শেল চার্জ, আবার ধোঁয়া, আবার ইট পাটকেল। চলছে মারামারি, গ্যাস, জলকামান আর সাউন্ড গ্রেনেড মাগার পশু সমাজ পিছে যায়না। এরা গেরিলার মতন, ভিজা ছালা হাতে প্যাচায়া গরম টিয়ার শেল আবার পুলিশ রে উপহার দিতাছে।

শাহবাগ মোড় এর দিকে হঠাত সাইরেন। চায়া দেহি ডি আই জির গাড়ি। নগদে এস আই আজগইরা হাতে ওয়ারলেস লয়া লোড়, মনে হয় প্যান্টে পেশাব কইরা দিছে ডি আই জির গাড়ি দেইখা। লম্বা স্যালুট দিয়া ডি আই জির গাড়ির দরজা খুইলা আজগইরা তার টুপি টাপি ঠিক ঠাক কইরা খাড়ায়া গেলো। ডি আই জি হন্তদন্ত পুরা। হন্তদন্ত তো হইবোই, তার সংসার চলে যাগো টেকায় তাগো কেলাবে হামলা। পেটে লাথি পইড়া যাইবো কেলাবের মেম্বাররা চেইতা গেলে। মাসোহারা বন্ধ হইলে পোলায় কেমনে পড়বো আম্রিকায় এই চিন্তায় সে পেরেশান।

আজগর নগদে সব রিপোর্টিং দিলো তারে। ওয়ারলেসে তারা সমস্ত উপ্রের মহল আর গোয়েন্দা সংস্থার লগে আলোচনা কইরা রমনা থানারে জানাইলো কাকরাইল মসজিদের গেট দিয়া ঢুইকা পশু সমাজ রে আক্রমণ করতে। আমি এর মইধ্যে সুনসান দেইখ্যা এক লোড়ে রাস্তার থেইকা আমার শার্টটা আইনা পিন্দা লইলাম। হায় হায় পকেটে রিজলার প্যাকেট টা আছিলো, হারায়া গেছে। যাউক তবু শার্টটা পাইছি।

আমিও অপেক্ষা করতাছি কহন আইবো কাউন্টার এটাক রমনা থানার। আর একটু পর পর ডাইল বাগাড় দেওনের মতন ইট পাটকেল পড়তাছে রাস্তায়। হালারা ক্লান্ত হয় না।

পুলিশ দেখলাম হঠাৎ চুপ, খালি কিছু পুলিশ নিরবে গিয়া টেনিস ফেডারেশনের সামনে সতর্ক অবস্থানে খাড়ায়া। এপিসি দুইটা একটু সামনে আইলো আর ওইদিক থেকা কয়টা ইটা আইসা পড়লো এপিসির সামনে। মাগার এপিসি থেইকা ফায়ার হইলো না। খালি চায়া দেখলাম একটা পুলিশ ফুলের মার্কেটের উপ্রের থেকা হিরোইঞ্চি কাউয়া নান্দু রে ধইরা আইনা ভইরা দিলো প্রিজন ভ্যানে।

ঠাশ, ঠাশ, ঠাশ কয়েকটা আওয়াজ। এইটা তো টিয়ার শেলের আওয়াজ না। গুল্লি করে কে???
পুলিশ এহনো চুপ। রমনার দিকে চায়া দেখলাম সবাই লোড়াইতাছে হমানে। মাগার হইলো টা কি? পুলিশও তো দেহিনা! আজব কারবার। এইবার সাহস কইরা আমি পথচারী ভাব লয়া সাইড দিয়া হাঁটা দিলাম। শিশু পার্কের পিছন দিয়া রাস্তাটা পার হয়া রমনার দেয়াল টপকায়া ভিত্রে ঢুইকা গেলাম আর যা দেখলাম।
২০-২৫ টা হোন্ডা ভর্তি পোলপান, সবার হাতে কিছু না কিছু একটা আছেই। আবার কয়জনের হাতে পিস্তল। এরা সব পশু সমাজরে পিটায়া ছাড়খাড় করতাছে আর তাগোরে পিছন দিয়া পাহারা দিতাছে রমনা থানার পুলিশ। পিছন থিকা কিয়ে জানি গুতা দিলো, চায়া দেহি এক দামড়া মাস্তান। লাঠি নাচায়া কয়, ‘বিপ্লব চোদাইতে আইছস বেঙ্গির পোলা’। আমি কইলাম বড়ভাই, ‘আইছিলাম প্রেমিকারে লয়া , সে তো গ্যাস গুস খায়া কই জানি ভাগছে। আমি তো এইসব বুঝতাছিনা’। সে কইলো, ‘যা ভাগ, প্রেম চুদাইতে আইছো না চুম্মা চাট্টি করবার আইছো সব ই বুঝি’। আমিও আস্তে সাইড হয়া গেলাম ।

হোন্ডা সব এক লগে স্টার্ট দিয়া আবার হাওয়া হয়া গেলো। আমিও আস্তে আস্তে সামনের দিকে গেলাম। কেউ নাই ময়দানে, খালি কয়টা স্যান্ডেল, মাথার টুপি, আর একটা ওড়না। এই ওড়না তো আমাগো হাজারীবাগের খরগোশ মৌসুমীর। তাইলে কি মৌসুমী এরেস্ট? চাইরদিকে খুঁজলাম, কোনোহানে দেখলাম না মৌসুমীরে। আরেকটু সামনে গেলাম, কেউ নাই। পায়ে কি জানো লাগলো। আয় হায়, এইটা তো হীরালালের পায়ের নাল। হীরালাল রে ও তো পরে দেখলাম না। এরা সব কই গেলো। আর মংলার বিপ্লবী ওয়েস্টার্ন মিলনের তো কোনো দেহাই নাই।

ড্রয়িং - মহসিন রাহুল, ২০০৪
ড্রয়িং – মহসিন রাহুল, ২০০৪

আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। বাড়িত আয়া খাওয়া দাওয়া কইরা বিকালে একটা দেশালের জয়েন্ট বানায়া খাইতে খাইতে চিন্তা করতাছি আর মনটা খারাপ হইতাছে।

রাইতে খাওনের পরে টিভির সামনে বইলাম নিউজ দেখতে। প্রথমে আইলো সিরিয়ার আইসিসের মারামারি, আফগানিস্তানে আফিমের চাষে ইউ এস মেরিনের অভাবনীয় সাফল্য, হেপাজতে ইসলামের গণতান্ত্রিক ইসলামী দল গঠনের প্রত্যাশা, এর পরে ঢাকা ক্লাবের নিউজ।

শিরোনাম : ঢাকা ক্লাবে দুষ্কৃতিকারীদের হামলা। ৪ জন গ্রেফতার, পুলিশি হেফাজতে মৌসুমী নামে একজনের মৃত্যু। তাদের কাছ থেকে নাকি ব্যাপক পরিমাণ বোমা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের প্রেস কনফারেন্স-এর ছবিতে দেহাইলো হীরালাল মাথায় ব্যান্ডেজ, ওয়েস্টার্ন মিলন এর উপ্রের ঠোঁট ভাঙ্গা আর ধোলাইখাল এর রামপাঠা ভ্যা তার ছিড়া দাড়ি লয়া টেবিলের সামনে সাজাইনা কয়টা লাল টেপ মারা জর্দার ডিব্বা, কত্তটি চাপাতি, ক্ষুর এইসব লয়া খাড়ায়া রইছে। আর মৌসুমীর লাশ এর ছবি ঘোলা কইরা দিলো।
আমি পকেট থেইকা রিজলা বাইর কইরা একটা জয়েন্ট বানায়া খায়া ঘুমাইতে গেলাম।

সকালে সম্ভবত ঢাকা ক্লাবের প্লেয়াররা উদ্যানে গলফ খেলবার গেছিলো।


ফটো - আম্মান হোসেইন (Amman Hossain)
ফটো – আম্মান হোসেইন (Amman Hossain)

[ মাহবুব শাহরিয়ার – লেখক, ফটোগ্রাফার। নিবাস পুরান ঢাকা। তার আরো লেখা পড়তে চাইলে, দেখুন – http://laljiperdiary.com/2014/08/14/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8-%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D/ – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

One comment

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s