১.ঢাকা গেট : জরাজীর্ণ সুন্দর
বাংলা একাডেমির রাস্তা পার হবার সময় দোয়েল চত্বর মুখীন হয়ে একেবারে শেষ প্রান্তে ‘ঢাকা গেট’টা নজরে আসে অনেক কষ্ট করে।
মুঘল বা নবাবী আমলের দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে হুমকি দেয়না এই গেটটা। গাছের আড়ালে আশ্রিত আছে সুশোভিত, শান্ত।
জীর্ণ শীর্ণ ‘ঢাকা গেট’ এভাবে আছে দেখেই এত নস্টালজিক ফ্যান্টাসি থেকে ভাললাগছে তাকে। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে থাকারও কিছু ক্রাইটেরিয়া লাগে, তাই না?
যেভাবে জেলখানার প্রাচীর, এপোলো হসপিটাল, যমুনা কমপ্লেক্স দেখে নিজেকে ইনফেরিয়র সাবজেক্ট মনে হতে থাকে—-ঠিক সেভাবেই এই ‘ঢাকা গেট’ হয়তো তখনকার শাসক-শাসিত সম্পর্ক নির্ধারণে ক্লাসিক ভূমিকাটি পালন করত।
স্যরি ‘ঢাকা গেট’, তোমার সংস্কার উন্নয়ন চাইনা, তোমাকে এভাবে জরাজীর্ণ দেখে যে করুণা অনুভূতি কাজ করছে তাই অনেক বাস্তবসম্মত এবং সুন্দর!

২.নীলক্ষেতঃ ভালবাসা’র উর্বরা (!!) স্বপ্নভূমি
রিকশায় করে নরকে যাবার কালে বৃষ্টি এসে হাজির। বলল : নীলভূমি (নীলক্ষেতে) তে কিছুক্ষণ তোমার ব্যস্ত সময় দিয়ে যাও।
নামলাম এবং এক খাবার দোকানে বসে কিছু খাবার কালে দোকানের সব হতাশ নাগরিকগুলোকে আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। সবার জীবনের বেকারত্ব গুলো নিয়ে মনে মনে কী বুনন করছিল কে জানে !
পাশের এক ছেলে বিসিএস প্রস্তুতির বই কিনে বান্ধবী কে ফোন দিল। না চাইতেও এই ‘কম স্পেস’ এর শহরে আমার আড়ি পাতা হয়ে গেল।
ছেলেটা মেয়েটাকে বলছিল : ‘এই বিসিএস টা হলেই তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব। আমরা বিয়ে করব। …..
বৃষ্টি ঐ ছেলের স্বপ্ন কে বিভোর করে তুলছিল। এও আফসোস করল, কেন ৩৫ তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেনা !
এরকম আরো দু এক জন তরুণ তরুণী ঐ দোকানে এসে বৃষ্টির কথা শুনছিল। বৃষ্টি তাদের সুযোগ দিল স্বপ্ন দেখার। তারপর এই বৃষ্টি উধাও হয়ে আকাশেই রয়ে যাবে। মাটিতে নামবে কদাচিৎ।
নীলক্ষেত নামটার সাথে এই নগরীর আমার তোমার টানা হ্যাঁচড়ার জীবন বেশ মিলে যায়। ভালবাসার নীল রঙকে চাষ করতে আসি। আমি, তুমি, তোমরা—আমরা

৩.আর্বান এলিয়েনেশন : কালেক্টিভিটি ভয় পাই!
রাত ১১ টা/সাড়ে ১১ টা’র দিকে এই নির্মম ব্যস্ত ঢাকা আস্তে আস্তে ক্লান্ত হতে থাকে। তখন সব রুটের বাসগুলো শেষ ট্রিপ চালিয়ে দিন সমাপনীর হর্ণ বাজাতে থাকে। কিছু বাসে দেখা যায় অর্ধেক যাত্রীই ধরেনা।
তখন সবযাত্রীরা একাকী সিট-এ বসে নগর সোডিয়াম আলোয় অবলোকন করে চলে পথশিশুর ঘুম, ট্রাফিক পুলিশের আলস্য এবং অপেক্ষারত রাজা-রাণী দের। কেউ না পারতে ঐ সব বাসে পাশাপাশি বসেনা।
অদ্ভূত এক ব্যাপার। দরকার পড়লে বাসের শেষ সিট বা চাকার উপরে একা বসব তাও কোন ‘নাগরিক’ এর পাশে এই ‘নাগরিক’ বসতে চায়না।
নগরী মানে আমার কাছে একা একা কথা বলা, নিজের সাথে নিজের। হোক সে অতিঅস্তিত্ববাদী চিন্তা, নেই কোন কালেক্টিভিতে অংশ নেবার বিন্দুমাত্র অভিপ্রায়, সমষ্টি বলতেই বুকের মাঝে কেঁপে উঠে ‘সিন্ডিকেট’ এর মতন যুথবদ্ধ স্বার্থান্বেষীর দল।
নিজের কোন শক্তি আদৌ আছে কি???—তখনি স্বপ্ন দেখে উঠি CAST AWAY সিনেমার দ্বীপে অথবা LIFE OF PI এর মাংসাশী দ্বীপে বসে প্রার্থনা করছি!!!


[ইলিয়াছ কামাল রিসাত : সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে কর্মরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]