বিটুইন ডিভাইন স্পেস এবং পার্থিব রহমতের বোমা

বাসের জানালা সব ঠিক আছে নাকি তাই চেক করা এখন সকল বাসযাত্রীর আত্মরক্ষার প্রথম কর্তব্য। যেই সিটে বসলাম, সেই জানালার অনুপস্থিতি দারুণ বিপাকে ফেলে দিল। কোন দ্বিতীয় চিন্তা ছাড়া নেমে পড়লাম।
হাঁটি হাঁটি পা করে ১০-১৫ সেকেন্ড হতে না হতেই ঐ বাসের আশেপাশে চিৎকার সারা রাস্তা জুড়ে। কোন এক ভালবাসার আদম সন্তান নাকি রহমতের ফল ছুঁড়ে দিয়েছেন তার প্রেমিকা নাগরিকদের উদ্দেশ্যে।
যাই হোক, কোথাও নাজিল হলনা কোন বোমা। কোন শহীদও দেখলাম না। ভাবছেন, বেঁচে গেছি? নারে ভাই, বোমাতঙ্কের নাগরিক স্পেসে প্রবেশ করেছি। আমার সিক্সথ সেন্স কে তাই পুরো ক্রেডিট দিতে পারছিনা।
পুরো ক্রেডিট এই বাস্তবতার। আমার সাইকি, আমার বোমাতন্ত্র, আমার গণতন্ত্র সব জারিত হচ্ছে, রান্না হচ্ছে, রসায়িত হচ্ছে।
স্বয়ং ওয়াল্টার হোয়াইট ব্যাখ্যা দিতে পারবেনা এই রসায়ন এর গুঢ় রহস্য কি?
কত গ্রেগর সামসা, কত সাফির, কত শত শাপলা শালুক এই ডিভাইন স্পেস এ ঘুরে বেড়াবে অনন্তকাল!!!
নিত্য (অ)বাস্তব একটা ছোট গল্প
কানের মধ্যে হেডফোন গুঁজে নিজের ব্যর্থতা গুলো নিয়ে নিজের সাথে নিজের খুনসুটি করছিলাম রিক্সায় বসে। গান বাজছিল রিসেন্ট এক হিন্দী সিনেমার। আমার হতাশা গুলোর সাথে মানিয়েই গানটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক-এর মত বাজছিল। যাক, নিজের জীবনের মুহুর্তগুলোকে নাটকীয় করে তোলার ক্ষেত্রে অন্তত ডিরেকশনটা দিতে পারছি।
পাশ দিয়ে আচমকা পুলিশের এক প্রিজন কাভার্ড ভ্যান তার বিকট সাইরেন বাজিয়ে পাশ কেটে গেল। চোখ পড়ল দুই তরুণের দিকে। একজন ভোলা-ভালা চশমা আঁটা পড়ুয়া টাইপের, আরেকজন একেবারে পুরোদস্তুর আরবান শ্রমজীবী, বাসের হেল্পার বা কোন new wretched of Dhaka city.
মাথার মধ্যে তখনি আরেকটা সিনেমা খেলে গেল। ঐ দুই জন বন্দী কাভার্ড ভ্যানে গল্প করছে: ভদ্র ছেলেটার টপিক – “বাসায় মা-বাবা চিন্তা করবে, যদি ছাড়া পায় তবে কি করে তাদের সে বুঝাবে সে রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজ আসলেই করেনি”।
অন্যদিকে, ঐ বাসের হেল্পার গুডি বয়-এর এসব টেনশন এর আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। বলছে, “এরকম আমার হরহামেশা হয়। এবং একটু পরেই আমি বের হয়ে যেতে পারব এই ভ্যান থেকে”।
……
আমার রিকশার সাথে তাদের ভ্যানের দূরত্ব বাড়ছে তো বাড়ছে। স্পিড ডাইমেনশন বলে কথা! তারা আমার নিকটে ছিল বলে যা একটু সহমর্মিতা আমার মধ্যে কেঁদে উঠেছিল। কত কিছু ভেবে ফেললাম ঐ দুই বন্দী অভাগা দের নিয়ে।
রিকশা আস্তে আস্তে চলছে আর আমার মন থেকে বিদায় নিচ্ছে তারা।
আধা ঘন্টা পর আমি মতিঝিল পৌঁছালাম। বিশাল আকার সিটি সেন্টার এর সামনে এক ‘আনারস মামা’ বসে। তার আনারস না খেয়ে আমার অফিসে ঢোকা হয়না। যথারীতি তার যাযাবর ভ্যান গাড়ি’র সামনে দাঁড়াতেই আমার চক্ষু কপালে উঠল: আনারস মামার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের কাভার্ড ভ্যানে বন্দী ঐ হেল্পার টাইপ ছেলেটা!
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম: তোমার সাথে যে ভদ্র করে ছেলে ছিল ও কোথায়? সে রহস্যময় হাসি দিতে লাগল কিছু না বলেই। আনারস বানিয়ে দিল। অন্যদিনের মতই সুস্বাদু। কিন্তু আমার মাথায় তখন অন্যকিছু।
যাবার বেলায় ঐ ছেলেটা বলে উঠল: মামা, নিজের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন, দিন কাল একটু আজিব চলতাসে!
প্রথম বেতন
বাপের হোটেল থেকে হোটেল আল সালাদিয়া তে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদার্পন!!! বাপের হোটেলে জীবন বুঝে উঠতে পারিনাই…বাপ সবসময় রঙিন চশমা পরাই দিয়া রাখছিল…
আল সালাদিয়া তে সব কান্না-হাহাকার-পোকামাকড় সমেত অযাচিত আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে থাকা যায়…কিন্তু রঙিন চশমা মিস করি…রঙিন চশমা ভালবাসি – বাবা কে ভালবাসি!
(মার্চ ১২, ২০১৪)
আট বছর আগের একদিন ও মাহবুব শাহীনের ট্রেন যাত্রা
‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় জীবনানন্দ আত্মহত্যাকে স্বাগত জানালেন নাকি তিরষ্কার করলেন তা নিয়ে সমালোচক মহলে ব্যাপক বিতর্ক:
যারা তিরষ্কার তারা উল্লেখ করেন এই প্যারা:
“তবুও তো প্যাঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায়- অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।”
যারা স্বাগত তারা উল্লেখ করেন:
“চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
একগাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা একা;”
আপাতদৃষ্টিতে কবিতায় আত্মহত্যাকে কোন CHOICE মনে হয়না।

I am lying on Rail Line. The Train is coming. And I am going to kick out bloody myself, the useless eater.
Once I’ve posted a comment ” I should leave” then after I posted ” I have to leave”. Some of you asked me- “From where & where will you go?”
I don’t know where I am going. But I am leaving. Leaving useless myself forever. Good bye, good bye forever.
Almighty Allah bless you all. “
বরং এক ধরণের বীক্ষা মতন লাগে। আল্ট্রা-পজিটিভ বা অতি পরিপূর্ণ জীবনে সব অর্জনের পরে মৃত্যু স্বাদ খানি বাকি থাকে বলে কবিতার নায়ক দড়ি হাতে অশ্বত্থের নিচে বুদ্ধের বোধি লাভের মত মৃত্যুকে বুঝতে চায়।
এই আত্মহত্যা চরম ভোগবাদী সমাজ বা সমৃদ্ধির সমাজে ঘটে থাকতে পারে বা জীবনানন্দ অনেক সুদূরদর্শী দেখে একুশ শতকে মৃত্যু কোন ধরণের সেলিব্রেশন হতে পারে তার রূপরেখা দিয়ে গেছেন। এই কবিতার আত্মহত্যা এক ধরণের মেটামরফোসিস।
এই আত্নহত্যা’র সাথে মাহবুব শাহিনের আত্মঘা্ত-এর কোন সম্পর্ক নেই। তার গত দুই তিন মাসের স্ট্যাটাসগুলো খেয়াল করলেই বুঝা যায়, তার ক্যারিয়ার জনিত কোন চাওয়া পাওয়া নিয়ে সে চরম রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছিল।
অতি-ঋণাত্বক আত্নহত্যা! হা হা হা …বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করাটা আজকাল একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। নীরবে কত মাহবুব শাহীন ঝরে যাবে!! কেউ টের পাবেনা। পাঠ্যপুস্তকে নীতিশাস্ত্র ঢুকিয়েও কোন লাভ হবেনা।
এই রাষ্ট্র যে ধরণের অত্যাচারী, তাতে Mar Adentro (The Sea Inside) সিনেমার মত কড়া আইন প্রয়োগ করতে পারে যে, আত্মহত্যা বন্ধ করতে আইন করা হবে। তাও রেহাই পাবেনা।
কারণ এরা জীবনানন্দের ‘বিপন্ন বিস্ময়’ দেখার কোটি কোটি বছর পিছনে পড়ে আছে। এরা রুটি রুজিই এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি, মৃত্যুকে সেলিব্রেট করবে কিভাবে???
বিপন্ন বিস্ময় অনুভব করতে যেদিন মানুষ চাইবে সেদিন অন্য ইতিহাস শুরু হবে।
(এই ব্যাখ্যা আমার নিজস্ব, কেউ দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন, দরজা খোলা)
(জুন ৪, ২০১৪)
[ইলিয়াছ কামাল রিসাত : সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে কর্মরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]