রিমোট – আল-বিরুনী প্রমিথ

“তোর বড় বোন স্যুটকেস আর রাসেলকে সঙ্গে করে গত পরশু বাসায় চইলা আসছে। আমরা অনেকবার কি হইছে বলার পর একসময় বললো জামাইরে একবারে ছাইড়া দিয়া তোর ভাগনীরে সাথে কইরা এইখানে আসছে। তোর দুলাভাইয়ের সাথে এক মহিলার কেচ্ছাকাহিনী গেলোবার শুনছিলি না? সেই ঘটনা নাকি আরো বহুদূর গড়াইছে। তোর আপারে নাকি জামাই মাইরধরও করছে। এই নিয়া সারা বাড়িতে বহু টেনশন। তোর বোন বাড়ি আইসাই তোর কথা খুব বলতেছে। পরীক্ষার কোন ঝামেলা না থাকলে তুই জলদি বাড়ি চইলা আয়। এইদিকে তোর মায়েও মেয়ের এই অবস্থা দেইখা খুব ভাইঙ্গা পড়ছে। শরীরের প্রেশার দুইদিন ধইরা হাই। উপরেরটা একশো পঞ্চাশ আর নিচেরটা নব্বই। তুই পারলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চইলা আয়”।
তিন ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনে বাপের কণ্ঠে শোনা বাক্যাবলি, সময়ের সাথে সাথে যা নিজস্ব বেদনায় জাহাঙ্গীরকে রক্তাক্ত করতে শুরু করেছে তাকে বুকে করে সে সুমির ছিপছিপে শরীরের সাথে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। নির্বাক।

“তাইলে কবে বাড়ি যাবা, ঠিক করছো কিছু?”

একসাথে থাকলে এমন কোন অপ্রত্যাশিত ক্ষণে নীরবতা কাউকে না কাউকে ভাঙতেই হয়। সুমির কণ্ঠ তাদের মধ্যকার পারস্পরিক স্তব্ধতা ভাঙ্গলেও সেটায় এক ধরণের কর্কশ ভাব টের পেয়ে জাহাঙ্গীর আহত হয়। দুই বছর হলো তাদের প্রেম হয়েছে। সুমি কিছু সান্ত্বনার বাক্যও তো বলতে পারত। জাহাঙ্গীর নিজের বড় বোনের কথা তার কাছে কি বলেনি? ছোটবেলা থেকে শুরু করে তিন বছর আগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় বড় বোনের সাথে, তখনকার স্মৃতিকথা পর্যন্ত সব উগরে দিয়েছে। সেই মানুষের জীবনে এতো বড় বিপর্যয়, অথচ সব জেনে প্রতিক্রিয়া কী দেখালো? মানুষ নয় যেন কাক ডাকছে এমন গলায় জিজ্ঞেস করা যে সে কবে বাড়ি যাবে। কিছুক্ষণ আগেই যে গাছের গুঁড়িকে পরম আশ্রয় ভেবে তাতে হেলান দিয়ে বসেছে তাকে জাহাঙ্গীরের দুর্বিষহ এক ভার মনে হতে থাকে। চোখের দৃষ্টিতে রাগ ঠিকরে বেরুতেও বেরোয়না। সুমির স্বগতোক্তি তা হতে দেয়না।

“তোমার দুলাভাই আস্ত অমানুষ” – সুমির কণ্ঠে নিজের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি অনুভব করলে জাহাঙ্গীরের আক্রোশ ডাইভার্টেড হয়। সীমা যা বলছে সেটা আসলে বলতে গেলে কিছুই বলেনাই। তার নিজের দুলাভাই, শুনতে খারাপ শোনালেও সত্য লোকটাকে চুতমারানীর বাচ্চা বাদে কখনো অন্য কিছু মনে হয়নি জাহাঙ্গীরের। তার বোনটার সাথে যেদিন খচ্চরটার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেইসময় সে নিতান্তই বাচ্চা ছেলে। সবে তার তখন বাল গজাতে শুরু করেছে। এমন বয়সে, হবু দুলাভাইকে তার পছন্দ হয়নি এই কথা বাপ-মাকে বললে তারা সেই কথায় গুরুত্ব দেবে কেন? জাহাঙ্গীর কথাগুলো অব্যক্তই রেখেছিলো। কিন্তু তাতে কী লাভ হলো?

অপর পাশ থেকে জাহাঙ্গীরের মনের তল সুমি কিভাবে খোঁজে সেই বলতে পারে। তবে এই মুহূর্তে জাহাঙ্গীরের দুলাভাইয়ের দুর্নাম গাইতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তা শুনে জাহাঙ্গীরের রাগ বাড়তেই থাকে। ধারাবাহিক।

বদমাইশের বদমাইশ ঠিকাদারি ব্যবসা করেই নিজেকে কেউকেটা ভাবতো। বিয়ের পরে প্রথম যেইবার তার বোনসহ তাদের বাড়িতে এলো সেদিন জাহাঙ্গীরের বাপ-মাও বুঝে গিয়েছিলো। টাকাপয়সা হয়েছে বটে কিন্তু ভেতরে তাদের জামাই এখনো আস্ত খচ্চর। মেয়ের জামাইয়ের জন্য কী যত্ন করে ফিরনি রেঁধেছিলো তার মা বলতে গেলে হাতেই নিলোনা। শ্বশুরবাড়িতে প্রথমবার এসেই কেউ সারাক্ষণ শুধু নিজের ব্যবসার গুণগানই করে নাকি? বাপের সমতুল্য শ্বশুরের কাছে কত বড় বড় কথা। আমার অমুক জায়গায় বাড়ি হচ্ছে, তমুক ব্যাংকে এতো টাকা আছে। খাইষ্টা কোথাকার। শেষবার বাড়ি গেলে দ্বিতীয় দিনে রাত ঘন হয়ে আসছে এই সময়ে জাহাঙ্গীরের মা ছেলের ঘরে এসে দেখে অনেকদিন পরে বাড়ি এসে ছেলে হাঁটাহাঁটি করছে। দীর্ঘশ্বাস চাপা গলায় জাহাঙ্গীরকে ফিসফিস ডাকে,

“হাঁটাহাঁটি না করে ঘরে আয়। তোর সাথে তোর বাপের আর আমার কথা আছে”।

এক বিবাহিতার সাথে কিভাবে তার দুই চোখের পিরিতি পাতিয়েছে তার বিষাক্ত বিবরণ শুনে মা-বাপের উপরেই রাগটা ঝাড়বার তীব্র ইচ্ছা হয়েছিলো। আকাশে তখন অন্ধকার বসত গেড়েছে। চারপাশে গাছের পাতার ফিসফাস ছাড়া দ্বিতীয় কোন শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। জাহাঙ্গীর অমীমাংসিত রাগ ও ব্যাখ্যাতীত মমতার মিশেলে নির্মোহ থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু সফল হয়নি।

“এখন তাইলে আপার কি হইবো? এইভাবে কারো সাথে থাকা যায়?”, জাহাঙ্গীর কান্না চাপতে প্রাণপণ চেষ্টা করে।

জাহাঙ্গীরের বাপ শূন্য চোখে আশার আলো আনতে চেষ্টা করে। বলে, “তুই এখনই খামাখা এতো চিন্তা করতে শুরু করে দিছোস। আমরা কিছু একটা তো করমুই। তোর আপারে আমরা সারাজীবন এমনে থাকতে দিমু নাকি?”। নিজের উচ্চারিত শব্দসমূহে জাহাঙ্গীরের বাপ নিজেই অবিশ্বাস করে। ঘরে উপস্থিত বাদবাকী দুজনেও সেই অবিশ্বাস টের পায়, তবে তা কেউ-ই বক্তাকে জানাবার প্রয়োজনবোধ করেনা।
“তুমি বাড়ি যাও। ফিরা আসলে তোমারে বলবো একটা টিউশনি জোগাড় কইরা দিতে। খরচে আর কুলাইতে পারতেছিনা”। জাহাঙ্গীর বাপ–মায়ের উদ্বিগ্নতা থেকে প্রেমিকার সংকটে ফিরে আসে। দপ করে জ্বলে উঠে। ঘৃণিত দুলাভাইয়ের দাম্ভিকতা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন করা শ্যালকের মধ্যে নিমেষে সঞ্চারিত হলে সে রুষ্ট গলায় বলে উঠে,

“এইখানে পড়তেছো তিন বছর হইলো। ফকিন্নি স্বভাব ছাড়তে পারলানা। তোমারে টিউশনি করতে হইবো ক্যান? টাকাপয়সার সমস্যা হইলে আমি আছি কী করতে? হলে থাকি, পড়াশোনা করি, আসা-যাওয়ার খরচ আমার তো লাগেইনা। খরচের পরেও যা থাকে সেটা দিয়াও তোমার ভালো চইলা যাইবো। প্রেমিকারেই যদি টিউশনি কইরা খরচ চালাইতে হয় তাইলে পলিটিক্স আর করি ক্যা্ন, চুড়ি পইরা ক্লাস করতে গেলেই পারতাম”। জাহাঙ্গীর দুঃসহ পারিবারিক সংকটের খোলস ছেড়ে নিদারুণ এই পুরুষালী শহরে নিজের দাপুটে ইমেজে প্রত্যাবর্তন করে।

সন্ধ্যা প্রায় শেষ হয়ে হয়ে রাত্রি হতে চলেছে। এই সময় ফিসফিস স্বরে বলা কথাও ঘাসের কণার কাছে পর্যন্ত সশব্দে পৌঁছায়। চারপাশে কৌতূহলী অগণিত মানুষজনের কান খাড়া করে তাদের বাক্যালাপ শোনার প্রয়োজন পড়েনা। সুমির চোখের নিচের রেখায় যেই কাঁপুনি দেখা দেয় তার খোঁজ অস্থিরমতি প্রহরে জাহাঙ্গীর পায়না। দুই বছরের প্রেমিক নাকি হল পলিটিক্স করা কোন উচ্চাকাঙ্খী অচেনা যুবক? সুমির কাছে দ্বন্দ্বটা তীব্র হয়ে উঠলে অনুভব করে হলে ফিরে যাওয়াটাই বোধহয় সমাধান।

রোকেয়া হল থেকে মল চত্বরের ভেতর দিয়ে আসতে ততক্ষণে বাতাসে শীতের প্রলেপ। করুণ সুরে একটা কুকুর দূরে কোথায় ডেকে উঠতে উঠতেই জাহাঙ্গীর ফের ঠিকাদারি ব্যবসায়ীকে নিয়ে অবসেসড হয়ে পড়ে।

কি বজ্জাত। তার ভাগনী নাজিফার জন্মের সময়ে জাহাঙ্গীর এখনো মনে করতে পারে তার আপার এখন যায় তখন যায় অবস্থা। সিজারিয়ান অপারেশনের কথা সবাই বলছিলো। তারা তো বটেই, ডাক্তার পর্যন্ত। খবিশটার বাপ, যার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বললেই বোঝা যায় এরকম আস্ত খাইষ্টার জন্ম কিভাবে হয়েছে সেও পর্যন্ত ছেলেকে মিনমিন স্বরে বলছিলো,

“সিজারিয়ানটা করাইয়া ফ্যাল বাবা। বউমার অবস্থা দেখতাছোস না? দেরী করলে আল্লায় না করুক ভালোমন্দ কিছু হইয়া যাইবার পারে”।

নিজের জন্মদাতাকেও অবজ্ঞা করতে ছাড়েনি লোকটা। ডান হাতটা শূন্যে নাড়িয়ে দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে এই ভঙ্গিতে বলেছিলো, “আরেকটু দেখিনা। এক কথায় সিজারিয়ান কইলেই তো হয়না। এগুলা ডাক্তারগো পয়সার ধান্দা। টাকাপয়সার কথা মাথায় রাখেন আপনে কিছু? যত্তসব”।

কী ছোটলোক, কী ছোটলোক!!! জামাইয়ের মুখে এই কথা শুনে নার্সিংহোমে তার বাবা মূর্ছা যায় অবস্থা। রড দিয়ে লোকটাকে পেটাতে ইচ্ছা করেছিলো জাহাঙ্গীরের। তার লক্ষ্মী বোনটা কিভাবে এই শুয়োরের বাচ্চাটাকে সহ্য করতে পেরেছে ভাবতেই চিড়বিড়িয়ে উঠেছিলো।

“স্লামালিকুম জাহাঙ্গীর ভাই। কই যান?”, হলের ছোটভাই শফিকের বিনীত কন্ঠের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর মাখো মাখো বাস্তবে ফিরে আসে। কিছুটা স্বস্তিও কি ফিরে পায়না?

“আরে শিমুল আছো কেমন, এইদিকে দেখিইনা তোমারে”, জাহাঙ্গীর সপ্রতিভ হয়, “হলে যাইতেছি। রাত তো কম হয়নাই। সাড়ে আটটা বাজছে। আমারে তো ভুলেই গেছো। দেখা সাক্ষাত দাওনা”। কথার আড়ালেও যেই কথা থাকে সেটা অনুজের কাছে ঠিক ঠিক পৌঁছে দিয়ে জাহাঙ্গীর গোপন আরামের নিঃশ্বাস ফেলে।

“আরে জাহাঙ্গীর ভাই কী বলেন। আমার ছোট ভাইয়ের হলের সিটের সময়ে কি কষ্টটাই না করলেন। আপনারে আমি ভুলে যাবো, বস?”, শফিকের গলায় বিনয় এই ফুরফুরে বাতাসে গলে গলে পড়ে ।

পরিষ্কার সমর্পণের এই পর্যায়ে এসে তাকে তো ছেড়ে দেওয়াই যায়। জাহাঙ্গীর হৃষ্টচিত্তে শফিককে ফেলে সামনে এগোয়। আজকে দুপুরে ভাত খেয়ে একটু ঘুম দেবে ভাবছিলো সেই সময়ে যে বাপের ফোনটা এলো – “তোর বড় বোন স্যুটকেস আর রাসেলকে সঙ্গে করে গত পরশু বাসায় চইলা আসছে। আমরা অনেকবার কি হইছে বলার পর একসময় বললো………….”। ধুর বাল। সেই থেকে সারাদিন কি বাজেটাই না গেলো জাহাঙ্গীরের। সুমির সাথেও আজকে ঠিক জমলোনা। গতকালকে তাকে হলে ছেড়ে দিয়ে আসবার পরে ভেবেছিলো আজকে দেখা হলে গলায় আগ্রহ এনে তাকে জানাবে রুম্মান ভাই পরের সপ্তাহে দশ দিনের জন্য ইন্ডিয়া যাবে। সেই সময়ে তার বাসা পুরাটাই ফাঁকা। উদার কণ্ঠে কতোদিন জাহাঙ্গীরকে লোকটা বলেছে, “দরকার পড়লে কোন সংকোচ করিসনা, আমাকে বললেই ব্যবস্থা করে দিবো”। বলে সাথে সাথে হো হো করে হেসেছে। এইসব কথা সুমিকে আজকে বলা যেতোনা? এখন তো আর জাহাঙ্গীরকে অবিশ্বাস করার কিছু নেই। দুই বছর হলো সম্পর্ক হয়ে গেছে। তার খরচের প্রায় পুরোটাই জাহাঙ্গীর বহন করে। খুব বেশি প্রেম উথলে উঠলে জাহাঙ্গীর যখন আর নিজেকে সামলাতে পারেনা তখন দয়া করে নয় মাসে ছয় মাসে একবার রাতে ফুলার রোডের ফুটপাথে কিংবা কার্জন হলের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে গিয়ে একটু ঘষাঘষি ছাড়া সুমি অন্য কিছু এলাউ করেনি। রুম্মান ভাইয়ের ফাঁকা বাসায় তার আর সুমির রুমডেটিঙের স্বপ্ন চোখে নিয়ে জাহাঙ্গীর হাঁটতে হাঁটতে বিজনেস ফ্যাকাল্টি অতিক্রম করে যায়।

সূর্যসেন হলের গেটের ঠিক সামনে জব্বার মিয়ার কাছ থেকে দুইটা গোল্ডলিফ নিয়ে জাহাঙ্গীর নাতিশীতোষ্ণ মনে ঢোকে। প্রবেশ করতেই ডানে বিশাল এক পোস্টা্রে পেছনের খালি অংশটা ঢাকা পড়ে যায়। সতেরোদিন পরে তার ছাত্র সংগঠনের জন্মবার্ষিকী। পোস্টারের ডিজাইনটা তারই প্ল্যান করা। পোস্টার না বলে মানপত্র বলা ভাল।

টিভি রুমে হইহল্লার আওয়াজে জাহাঙ্গীর সচকিত হয়ে উঠে। আজকে ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা আছে। এতোক্ষণে মনে পড়লো। রুমের ভেতরে গেলে হালকা নীল রঙের জীর্ণ দেওয়াল, ভেতরকার ভ্যাপসা গন্ধ এবং নীরবতা বাদে অন্য কিছুই জাহাঙ্গীরকে অভ্যর্থনা জানায়না। পেছনে যারা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছিলো তাদের অনেকেই হলের সিনিয়র এক নেতাকে দেখে নিজেদের উল্লাস গিলে নেয়। কারণে অথবা বিনা কারণেই। তবে জাহাঙ্গীর ভীতির এই স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশকে উপভোগ না করে পারেনা। তার প্রতি অগণিত মানুষের চোখেমুখে এই ভয়ের জন্য সে কম কিছু তো কষ্ট করেনি। হলে ভর্তি হবার পরে প্রথম এক বছর জাহাঙ্গীর সিনিয়র ভাই তো সিনিয়র ভাই ডাইনিং রুমে পর্যন্ত মাথা নিচু করে খাওয়া শেষ করে চুপচাপ উঠে যেতো। চোরের মতো।

জাহাঙ্গীর একেবারে সামনে চলে যেতেই একজনে বিনা কথায় তার হাতে টিভির রিমোট তুলে দেয়। এতক্ষণে এই হাবার দল টেলিভিশনে কি এক হিন্দি কমেডি ছবি দেখছিলো। মেদসর্বস্ব কোন এক নায়িকার উন্মুক্ত শরীর দেখেই হই হই করে উঠেছিলো। হলের হোমরাচোমরা বড় ভাই এসে চ্যানেল বদলে ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে আরম্ভ করলে মাত্রই কোন হিন্দি ছবির নায়িকার শরীর দেখে তারা মোহিত হয়েছে বেমালুম ভুলে গিয়ে উপস্থিত প্রত্যেকে নিখাদ ক্রিকেটবোদ্ধা হতে মনোনিবেশ করলে জাহাঙ্গীরের মোবাইলটা বেজে উঠে। বাপের ফোন। পোলায় কবে বাড়ি ফিরবে নির্ঘাত সেটা জানতেই ফোন দিয়েছে। কিন্তু পাশে–পিছনে বসে থাকা অগণিত ভীত চোখজোড়া থেকে নিজের চোখ সরিয়ে এই মুহূর্তে বাপের ফোন ধরে কাঠ কাঠ গলায় তার বাড়ি আসবার তারিখ জানাবার কোন প্রয়োজন জাহাঙ্গীর বোধ না করলে তার ফোন অবিরাম বাজতেই থাকে।

DSC_1606


DSC_1008[আল-বিরুনী প্রমিথ – গল্পকার। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : ‘এসকেপিস্ট ‘। ]

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s