![ইন্টারস্টেলার দূরত্ব [প্রাপ্তিসূত্র: http://www.google.com/url?sa=i&rct=j&q=&esrc=s&source=images&cd=&cad=rja&uact=8&ved=0CAQQjBw&url=http%3A%2F%2Fwww.hdwallpapers.in%2Fdownload%2Finterstellar-3840x2160.jpg&ei=uT_eVMr1FpKjugTF-oCQCw&bvm=bv.85970519,d.c2E&psig=AFQjCNFgBV65Pwc9Gjd-u3q3N46eTH4SbA&ust=1423937831821138]](https://noynumberbus.files.wordpress.com/2015/02/interstellar-3840x2160.jpg?w=723&h=407)
এই ভালবাসার পৃথিবীর বাইরে আর কোন বাসযোগ্য স্থান আছে নাকি সেই অভিযানে যাওয়া অভিযাত্রীর একজন ছিল ড. মান। তার উক্তি দিয়ে এই সিনেমার মর্মার্থ তুলে ধরা যায়। সে ড. কুপারকে বলছে, এই অভিযানে তো শুধু যন্ত্রই পাঠানো যেত। কিন্তু পাঠায়নি কেন? পাঠায়নি বরং, মানুষকেই পাঠাতে হয়েছে। কারণ যন্ত্রের মৃত্যুভয় নেই, সারভাইভাল ইন্সটিঙ্কট নেই। এইটা আছে শুধু মানুষের।
এই মানুষ বড়ই বিচিত্র, যে ভালবাসার বাইরে এক পাও এগুতে পারেনা। এই ভালবাসা কত ধরণের: নিজের প্রতি নিজের, পিতা সন্তানের ভালবাসা, প্রেমিক যুগলের ভালবাসা, মনুষ্য ভালবাসা!
পুরো ইন্টারস্টেলার সিনেমার বৈজ্ঞানিক সব বাতাবরণের মোড়কে যে আন-এভোয়েডেবল ‘ফিকশন’টা লুকিয়ে আছে তা হল: ‘ভালবাসা’ নামক আশ্চর্য প্রদীপ। পৃথিবী ধ্বংসের পরে মনুষ্যজাতি কোথায় যাবে, অন্য কিছুর সন্ধানে গিয়ে যে টাইম-স্পেস ডিসপ্লেসমেন্ট-এর কারণে যে তৃতীয় মাত্রার অনুভবের ভাঙন হবে, তার সমস্ত নিদর্শন বা গল্পের উপাদান, এর অংশ হলেও যে কারণে সিনেমাটা আমার হৃদয় ছুঁইয়ে দিল সেই কারণে ল্যাপটপ খুলে লিখতে বসেছি।
যারা এই লেখা পড়ছেন তাদেরকে সিনেমার গল্প বলতে বসিনি আমি। বলতে বসেছি অনুভূতির কথা। এই সিনেমার কিছু কাব্যিক দৃশ্য লেখার মাঝে খুব ইন্টারফেয়ার করছে। ড. কুপার মানে ম্যাথিউ যখন আরেক এক্সপার্ট সাইন্টিস্ট রমিলিকে নভোযানে কথা বলার এক ফাঁকে তার কানে হেডফোন গুঁজে দেয় যেখানে বাজছিল পৃথিবী নামক নস্টালজিয়া গ্রহের ‘পাখির গান, বৃষ্টির শব্দ’।
চোখ বন্ধ হয়ে কান্না জমে আসে এবং গলায় আটকে থাকে ত্রস্ত অপারগ পৃথিবীচারীর মতো যখন একটা বার ভাবি এই পাখির গান, ফুলের সুরভী, বৃষ্টি পতনের শব্দ আমি কখনো আর শুনতে পাবনা, মৃত্যুর পর। আবার যখন ভাবি, এই পৃথিবী যেদিন বিলীন হবে সেই পৃথিবীর নস্টালজিয়া মানুষ কি অবাধ্য বোধোদয়কে পাশ কাটিয়ে নতুন দিকে যাত্রা শুরু করবে?
এই সিনেমাতে সব চরিত্র এই ‘নস্টালজিয়া’ আক্রান্ত এবং ‘প্রবৃত্তি তাড়িত’ এক-একজন আবেগী মানুষ। এই মানুষের আবেগের পরশ পাথর ছোঁয়ায় পৃথিবীও হয়ে গেছে যেন আবেগী ‘স্পেস’। পৃথিবী যদি বসবাসের অনুপোযোগী হ’য়ে উঠে তবে আমরা নতুন যে ‘নিরালোক’-এ বসবাস করব, সেই স্পেসটা গড়ে উঠবে যেন পৃথিবী নামক গ্রহের পারসেপশন-এর আদলে।
ড. কুপার হঠাৎ ক’রে কেমন নিরাশ এক ভঙ্গিতে বলে উঠে, এমন পারফেক্ট স্পেস হয়তো আর পাবনা।
এই যে হারিয়ে যেতে পারে বা যাবে, তার পরবর্তীতে মানুষ কী নিয়ে বেঁচে থাকবে? পরিচালক নোলান পুরো সিনেমাতেই এই বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন ভালবাসা নামক উচ্চমাত্রার মধ্যে যেখানে এই ‘ভালবাসা’ মহাবিশ্বের সকল সময়, গতি, মহাকর্ষ নামক সকল মাত্রাকেই অতিক্রম ক’রে অন্য মানুষের সাথে ‘কমিউনিকেট’ করতে পারে।
আমরা যদি আরেকটা নতুন ‘নিরালোক’-এ গিয়ে পাড়ি দেই তবে সে জায়গার ভিত্তিভূমি হবে একমাত্র ভালবাসা। তবেই এ পাখির গান, বৃষ্টির ঝড়ো পতন আর হাওয়ার মাদল আবারো শুনতে পাব।
এই পৃথিবী কত মহাযুদ্ধ, বিভীষিকা, কতো শ্রেণী সংগ্রামের সময়ের সাক্ষী হয়েও ভালবাসাকে এমন মহিমান্বিত করে তুলতে পেরেছে যার কারণে অনুভব ক’রতে পারে এক ‘অ্যাফারমেটিভ নস্টালজিয়া’। এই নস্টালজিয়ার এমন সঞ্জীবনী শক্তি যা সময়-স্থান-এর ডিসপ্লেসমেন্ট তোয়াক্কা করেনা। পৃথিবী বেঁচে না-থাকলেও বেঁচে থাকে এই পৃথিবীর ভালবাসা, শুধুই ভালবাসা।
জীবনানন্দের ‘আবহমান’ কবিতার প্রতিটা লাইন মনে হয় নোলান তার ‘ইন্টারস্টেলার’ নামক দৃশ্যকাব্যে রূপায়িত করেছেন:-
“আমাদের মণিবন্ধে সময়ের ঘড়ি
কাচের গেলাসে জলে উজ্জ্বল শফরী;
সমুদ্রের দিবারক্তে আরক্তিম হাঙরের মত;
তারপর অন্য গ্রহ নক্ষত্রেরা আমাদের ঘড়ির ভিতরে
যা হয়েছে, যা হতেছে, অথবা যা হবে সব এক সাথে প্রচারিত করে।
সৃষ্টির নাড়ীর ‘পরে হাত রেখে টের পাওয়া যায়
অসম্ভব বেদনার সাথে মিশে র’য়ে গেছে অমোঘ আমোদ;
তবু তারা করে নাকো পরস্পরের ঋণশোধ”
![ইন্টারস্টেলার টাইম ইনফোলজির গ্রাফ [প্রাপ্তিসূত্র: http://i.imgur.com/PyZLE7q.jpg]](https://noynumberbus.files.wordpress.com/2015/02/pyzle7q.jpg?w=723&h=241)

[ইলিয়াছ কামাল রিসাত : সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে কর্মরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]