ডোয়েলিং ইন বাংলাদেশ: লিভিং বিসাইড দীপেশ (পর্ব ১)
দীপেশ চক্রবর্তীর ‘Provincializing Europe’ বইটার ব্যাপারে প্রথম শুনেছিলাম আমার প্রিয় কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান-এর কাছ থেকে।
শাহবাগ-ইস্যুতে প্রিয় বাংলাদেশের ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে রীতিমত ট্রায়াল-চুলচেরা ইতিহাস কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছিল। বঙ্গীয় মুসলমান বলতে যে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ দুই ধরণের ‘জাতীয়তা’র জন্য একবার ১৯৪৭-এ এবং আরেকবার ১৯৭১-এ সংগ্রাম করল, যেই মুসলমান সমাজ ২০১৩ সালে শাহবাগ-এর পর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা সংগ্রামকে ইসলামের ‘অপোজিশন’ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল।
মোটা দাগে একে আমি ‘মুসলমান সমাজ’ বলছি তার কারণ প্রথম দিকে এই শাহবাগ আন্দোলনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ থাকলেও নাস্তিকতার ‘ধোঁয়া’ উঠার পরে সকল অংশগ্রহণকারী মুসলমান (ফিসিক্যাল-ভার্চুয়াল) আস্তে আস্তে কেটে পড়ল এবং তওবা তওবা শুরু করল। আমার কাছের এক ছোট ভাই তো রীতিমত আরও বেশি ধার্মিক হয়ে পড়ল, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে!
সমস্যা গভীর হতে থাকে যখন গ্রামীন কওমি মাদ্রাসার বিশাল নিম্নবিত্ত শ্রেণীর বাসিন্দাদের এই শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে হেফাজত-এর ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা-আন্দোলন শুরু হল। এরই মাঝে ঘটল মহাবিপত্তি যেদিন চাঁদে দেখা গেল সাঈদীকে!!! এরপর অনেক ধরণের রি-অ্যাকশন আসা শুরু হয়। অনেকে বলছিল, নিম্নবর্গীয় জীবনে এমন সাবকনশাস লেভেলে সাঈদীকে দেখার ঘটনা ছোট করে দেখার কিছু নেই।
দীপেশ এই জায়গায় বেশ ভাল ক’রে হাজির হন। বাংলাদেশের এই ভূখন্ডে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের ইসলাম-মানস বা কলকাতার মধ্যবিত্ত হিন্দু-মানস-এর একটু গভীরে প্রবেশ করলে এ-ধরণের চৈতন্যের খোঁজ পাওয়া যায়।
ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্ট-এর লেবাস ধরে এই ধরণের মানসকে হুট করে মনে হতে পারে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘মূর্খতা’। কিন্তু এইযে একে অসংগতি বলছি, এর গ্লোবাল ক্যাপিটালিস্ট রাজনীতিটা তখন ভুলে যাই। জন লকের ‘মডার্ন সাবজেক্ট’ যখন বলে যে যৌবনে পৌঁছার পরে যার-যার পিতার নির্দেশ/আদেশ থেকে সন্তান মুক্ত। সে নিজেই সার্বভৌম। সে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিবে। তার সাথে অন্য ভাইয়ের ভ্রাতৃত্ববোধ তার ফ্যামিলি লিনিয়েজ দিয়ে হবেনা বরং সামাজিক স্বার্থ চুক্তির ভিত্তিতে।
এই জন লককে ভারতীয় মোটা কন্টেক্সট-এ হাজির করলে দেখা যায়, এখানকার পরিবার তিন ধরণের কর্তব্য পালনে পৃথিবীতে এসেছে: দৈবকর্ম (ঈশ্বর-এর জন্য), পিতৃকর্ম (পারিবারিক বংশক্রম-এর লিগ্যাসি বহন) এবং সবশেষে বিশ্বকর্ম (পার্থিব কাজকর্ম)।
এত বহুধা বর্তমানে বসবাসকারী এই ভারতীয় জনগণ, জন লকের মত অতীত-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেনা। কোনভাবেই পারছেনা। দক্ষিণ এশিয়া বলি, লাতিন আমেরিকা বলি, মোদ্দা কথায় এককালের সকল ঔপনিবেশিক অঞ্চল-এর সংস্কৃতি-আঞ্চলিক দর্শন-নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেমওয়ার্ক কোনভাবেই সম্পূর্ণভাবে তথাকথিত ইউরোপিয় অ্যানালাইটিক্যাল রিজন-এ নিজেকে সঁপে দিতে পারেনা।
এই সঁপে দিতে না-পারার ফল হিসেবে অনেক ধরণের রাজনীতি হাজির আছে সারা বিশ্বে। বেশির ভাগ যে রাজনীতি, তা হচ্ছে ‘আফসোসের রাজনীতি’। যেমনঃ আমাদের বুর্জোয়া শ্রেণী পশ্চিমের মত বিকশিত/শৃঙ্খলিত/ফ্যাসিলিটেটিভ নয় তাই আমাদের দেশে আনইভেন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে।
এইসব আরও অনেক ধরণের রাজনীতি শেষমেষ সংগ্রাম-এর রাজনীতির দোহাই দিয়ে (একে দীপেশ নিন্দা করছেন না, বলছেন অসম্পূর্ণ) নির্মোহ অতীতগুলি এড়িয়ে যেতে চায়, মুছে দিতে চায়।
তাই দীপেশ-এর প্রতি আমার প্রথম কুর্নিশ: তিনি এই ‘লিভিং’-এর সত্যকে কোন আবরণ ছাড়া মুখোমুখি হতে বলছেন।
দীপেশ-এর পুরো বইটা নিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে লিখব। না-লিখলে আমার দীপেশ বোঝাপড়াটা অতলে হারিয়ে যাবে। এবং দীপেশকে নিয়ে সকলের বোঝাপড়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
![শাহবাগ আন্দোলনের একটি মূহুর্ত, ২০১৩ [ফটোগ্রাফার অভিজিৎ নন্দী কপিরাইট ত্যাগ করেছিলেন এই ছবিটার সেই সময়ে ফেসবুকে। প্রাপ্তিসূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/2013_Shahbag_protests#mediaviewer/File:Shahbag_Projonmo_Square_Uprising_Demanding_Death_Penalty_of_the_War_Criminals_of_1971_in_Bangladesh_32.jpg]](https://noynumberbus.files.wordpress.com/2015/02/shahbag_projonmo_square_uprising_demanding_death_penalty_of_the_war_criminals_of_1971_in_bangladesh_32.jpg?w=723&h=482)

[ইলিয়াছ কামাল রিসাত: সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষে ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে কর্মরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ]
[…] [পর্ব ১-এর লিংক। বাসে যান্ত্রিক কলকব্জা বিকল থাকায় প্রায় এক বৎসর আগের দেয়া লেখাটা, প্রকাশ করা গেলো। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ] […]
LikeLike
[…] [পর্ব ১-এর লিংক। বাসে যান্ত্রিক কলকব্জা বিকল থাকায় প্রায় এক বৎসর আগের দেয়া লেখাটা, প্রকাশ করা গেলো। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ] […]
LikeLike