
[ লেখক শহীদুল জহিরের জন্ম ১৯৫৩ সালের এগারোই সেপ্টেম্বর, মৃত্যু আজ থেকে ঠিক ৭ বছর আগে – ২০০৮ সালের তেইশে মার্চ। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ – ‘পারাপার’, ‘ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প’, ‘ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প’; প্রকাশিত উপন্যাস – ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’, ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’, ‘মুখের দিকে দেখি’ ও ‘আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু’। শহীদুল জহিরের প্রতি ভালবাসা – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]
লেখাটা আমার নিজের বোঝাপড়া পরিষ্কারের জন্য। কোন এক লেখকের লেখা পড়ে সেই লেখা নিয়ে কিছু লিখতে চাওয়ার ব্যাপারটা বুঝার অবকাশ থাকে। সব লেখা পড়েইতো আর নিজের কিছু লেখার ইচ্ছা জাগেনা। এই যে আমি শহীদুল জহির এর ‘ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প’ বইয়ের দু’টি গল্প নিয়ে আমার অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা, বিশ্লেষণ উগড়ে দিচ্ছি এই কী-বোর্ডের বাটনে, এটা একটা সেন্সেশনাল প্রক্রিয়া।
অবশ্যই তাঁর লেখা আমার মনে স্থান করে নিয়েছে। কেন নিয়েছে—সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই এই লেখা লিখতে বসেছি।
তার কিছু কমন টেন্ডেন্সি আছে যেমন : বাক্যে উত্তম, মধ্যম, নাম পুরুষে বহুবচন ব্যবহার করা, দীর্ঘবাক্য ব্যবহার, সম্ভাব্যতার যত শব্দ আছে তার প্রায় সবটাই একই বাক্যে ব্যবহার, টাইম-স্পেস মার্জ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তাঁর এসব টেন্ডেন্সি নিয়ে অনেক বড় বড় লেখক অনেক লেখায়, বক্তব্যে বলেছেন।
বিশেষ করে শহীদুল জহির তার নিজের যে ভাষাশৈলী বা স্টাইল নিজের করে গড়ে নিয়েছেন তা খুবই Dominating এবং তার পরবর্তী যারা লেখক তাদের কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করবেই! তার ভাষা সংগীতের মত অনুভূতির একটা ঘোর তৈরি করে যা পুংখানুপুংখ ভাবে বুঝতে চাওয়ার থেকে গায়ে মাখিয়ে, হৃদয়ে আলিঙ্গন করে থাকতে বেশি ভাল লাগে।
‘কোথায় পাব তারে’: নিত্যতা বনাম অনিত্যতা?
খেয়াল করুন, ‘কোথায় পাব তারে’ গল্পের প্রথম অংশ :
“দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা পুনরায় এক জটিলতার ভেতর পড়ে এবং জোড়পুল ও পদ্মনিধি লেনের, ওয়ারি ও বনগ্রামের, নারিন্দা ও দয়াগঞ্জের লোকেরা তাদের এই সংকটের কথা শুনতে পায়; তারা, ভূতের গলির লোকেরা বলে:
আমরা পুনরায় আবদুল করিমের কথায় ফিরে যেতে চাই, কারণ কয়েকদিন থেকে আমরা মহল্লায় শুনতে পাচ্ছিলাম যে, সে ময়মনসিংহ যাচ্ছে; কিন্তু আমরা তার এই কথাকে গুরুত্ব না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই।”
একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের লোকেরা তাদের গতানুগতিক জীবনধারায় এক ধরণের ব্যত্যয় অনুভব করতে থাকে এবং তা সামষ্টিক ভাবেই ভাবে এবং এই সংকটের কথা আশেপাশের এলাকাতেও জানাজানি হয়ে যায়। এরকম একটা টানা বাক্যে যে অঞ্চলের বা সমাজের কথা বলা হচ্ছে তাদের Collective Consciousness এবং সেই সাথে তারা যে নতুন এক জটিলতার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে তা এতই status-quo বিরোধী যে অন্য প্রতিবেশী অঞ্চলেও জানার বাকি থাকেনা।
পাঠক আরও অবাক হয়ে যাবে জটিলতার উৎস-কারণ জানতে পেরে। আবদুল করিম ময়মনসিংহ যাবে-এটাই একটা জটিলতার বিষয়। এ থেকে কয়েকটা ব্যাপার বেশ উদ্দীপক ভাবে প্রতিভাত হয় : সে অঞ্চলের মানস, সমাজ গঠন, সমাজ মনোগঠন এবং রহস্যময়তা!
সব লেখাতেই একটা সাধারণ গল্প-কাঠামোতে ভিত্তি করে এগিয়ে যেতে থাকে এবং simultaneously অন্য অনেক শাখাগল্প-উপগল্পের সম্ভাব্যতা তৈরি করতে থাকেন শহীদুল জহির।
কোথায় পাব তারে গল্পটায় নিত্যতার বিচিত্র সারভাইভাল ক্ষমতা! পরিবর্তনের অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও আবদুল করিম তার আকাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে ব্যার্থ হয়। কেন ব্যর্থ হয়, তা ‘আমি’-পাঠক এর উপর ছেড়ে দেয়া হয়। ‘শেফালি’র বাড়ির নির্দেশিত ঠিকানায় যেতে যেতে এক সময় সে যখন জুতা খুলতে যায় জুতায় তখন শক্ত গিট্টু লেগে যায়। গিট খুলতে গিয়ে করিম এর যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়। এর পরে করিম আর শেফালির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়না, কেন? যে শেফালির কাছে যাবার ঘোষণা তার এলাকাতে এতদিন জারি রেখেছিল, সেই যাবার ঘটনা নিয়ে করিম এর পুরো সমাজ-কাঠামো জড়িয়ে পড়ে গভীর ভাবে। পুরো সমাজ নানা কল্পনার আশ্রয়ও নেয়, সে (করিম) কেনইবা শেফালির কাছে যেতে চায়? শেফালি নামের এক মেয়ে বন্ধু তার কিভাবে হল? সে কি আসলেই কোন কাজে যাচ্ছে? তার এই যাওয়াতে কি ঐ এলাকার আবদুল আজিজ ব্যাপারি ও অন্য অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে?
এত সব দোলাচল ও সম্ভাবনা জাগানোর পরেও করিম ফিরে আসে সেই যাত্রা থেকে মাঝপথে। এই ফিরে আসা কি এক ধরণের ব্যর্থতা যা ব্যক্তিক আবার সামষ্টিক? এ কি বহুদিনের রীতি না ভাঙবার অভ্যস্ততা থেকে? বর্তমানে বহাল রীতির বাইরে যাওয়ায় যে একটা ডিজঅর্ডার তৈরি হবে তাকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেনা ভেবে সে ফিরে আসে? লৌকিক আচার কি তার মনে জুতার গিট্টু হয়ে ধরা দিল?
আবদুল আজিজ ব্যাপারি নামের মুরুব্বির যে অভ্যস্ত জীবন যাপন তাই কি এই প্রজন্মের করিম নিজের জীবনের নিরাপদ কিন্তু অমোঘ নিয়তি বলে মেনে নেয়? ‘কোথায় পাব তারে’ র ‘তারে’ টা কি? ——–পরিবর্তন/প্রগতি/নতুনত্ব/বিপ্লব??
‘আমাদের বকুল’: প্রতীকের সাথে বসবাস
এই গল্পে সুহাসিনীর আকালু তার বউ ফাতেমা কে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই আমরা জানতে পারি সে আসলে নিখোঁজ। এই নিখোঁজ হওয়ার কারণ উদঘাটনের থেকে গল্পে বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে ‘ফাতেমা-আকালু’র বিবাহের ইতিহাস ও ভূমিহীন দিনমজুর এর জীবনবৃত্তান্ত। শহীদুল জহির তাদের বিবাহের ইতিহাস বলতে গিয়ে সেই সমাজের নিত্য ঐতিহ্যর প্রতি সেখানকার মানুষের বিশ্বাস-আচারকে তাদেরই বাস্তবতা রূপে হাজির করেন তার বর্ণনায় যেখানে যৌতুক রূপে পাওয়া একটা ধূসর রঙের বাছুরের সাথে আকালুর বউ ফাতেমার সাযুজ্য খুঁজে পায় সুহাসিনীর লোকেরা :
“তখন একদিন আইজ্জল প্রামাণিকের (শ্বশুর) দেয়া বকনাটা গরম হয়; ফাতেমা সেদিন সন্ধ্যায় রাস্তা থেকে গরু ঘরে আনতে গিয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করে। পরদিন আকালু গ্রাম পাঙ্গাসি নিয়ে গিয়ে ফাতেমার এই কাজলা গাইকে পাল দেখিয়ে আনে এবং এর কিছুদিন পর আকালু ফাতেমার গর্ভবতী হওয়ার খবর পায়। এই দুই যুবতী প্রাণীর একসঙ্গে গর্ভধারণের ঘটনায় আকালু হয়তো অবাক হয়না, অথবা হয়তো হয়; কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পর যখন উভয়েই যমজ বাচ্চা প্রসব করে তখন আকালুর শুধু একার নয়, সুহাসিনীর সকল লোকের বিস্ময় হয়; তারা আকালুকে বলে, ক্যারে, তর হশুরতো দেখি তক ভালই ম্যায়া দিছে, দুই জন একই রকম দেইখতে, আবার দুই জনেই একসঙ্গে দুইখান কইরা বাচ্চা দেয়!!”
এইসব অতিলৌকিক বাস্তবতায় বেড়ে উঠা গল্পটা শেষদিকে যে পরিণতি নেয়, তা বেশ আগ্রহোদ্দীপক। আকালুর সন্তান বকুল এবং আমির হোসেন এর কাছে তাদের মায়ের অস্তিত্ব জানান দেয় বিচিকলা গাছ হিসেবে। সন্তানদের মনে মায়ের প্রতীক বিচিকলা গাছের অস্তিত্ব হিসেবে হাজির হয় গ্রামের বুড়ো ইমাম মোহসীন আলির মারফত।
‘বিচিকলা গাছ না মরা মানে তাদের মা বেঁচে আছে’—এই বিশ্বাসে তাদের দিনাতিপাত হয়। শেষ দৃশ্যে মেয়ে বকুল তার বয়ঃসন্ধির প্রথম ক্ষণে রক্ত দেখে আঁতকে উঠে বিচিকলার ঝোপের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে আর মা মা বলে কাঁদে।
সাদামাটা ভাবে চিন্তা করতে গেলে, বকুলের মা ফাতেমা কেন নিখোঁজ হয় সেই প্রশ্নটাই মুখ্য। এর উত্তর পাবার জন্য গল্পে তিন চার ধরণের সম্ভাব্যতা শহীদুল তৈরি করেন : আকালু তাকে বেচে দিয়েছে, ফাতেমা মাদ্রাসার ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেছে, আকালু তাকে খুন করেছে ইত্যাদি।
গ্রামীন প্রেক্ষাপটে নারীর নির্যাতিত অবস্থাকে তিনি গৎবাঁধা মডার্নিটি বনাম ট্র্যাডিশন দিয়ে চিন্তা করছেন না। তথাকথিত ‘পিছিয়ে পড়া’ সমাজ ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে বোঝার চেষ্টা এখানে আছে। বিচিকলা গাছ যে একবার ফল দিয়ে আবার জন্মায়, এই ধাঁধাটা বকুলরা না বুঝলেও তাদের বাবা আকালু পরিষ্কার করে যে ইমাম মোহসেন আলি তাদের সাথে তামাশা করেছে। তাই সুহাসিনীর লোকেরা যে অজ্ঞানতা বা কুসংস্কারের দুনিয়ায় ডুবে থাকে ব্যাপারটা শুধুই তা নয়।
বয়ঃসন্ধির প্রথম ক্ষণে বকুল বাস্তব ‘মা’-এর অনুপস্থিতিতে তার প্রতীক ‘কলাগাছ’-এর কাছেই ফিরে যায়। এই প্রতীকের সাথে বকুলের বসবাসটা অনেকটা তার নিজের অস্তিত্বের উদ্বোধন।
অস্তিত্বের উদ্বোধন পর্যন্ত দেখানোটা এক ধরণের সাহিত্যে একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেখানে জীবনের জয় দেখানোটাই যেন কর্তব্যবোধের ব্যাপার! এই জায়গাতেই শহীদুল জহির এর সাথে অন্য লেখকের ‘জীবনবোধ’ এর পার্থক্য। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, “জীবনকে জয়ী করাই সাহিত্যের কাজ না, জীবন জয় এবং পরাজয়ের চাইতে বড় কিছু, সাহিত্যের কাজ এই জীবনকে ধারণের চেষ্টা করা”।
‘আমাদের বকুল’ এর শেষ প্যারাটা উদ্ধৃত না করে পারছিনা : “পরদিন সকালে গ্রামের যারা আকালুর ভিটার পিছন দিকে যায় তারা বিচিকলার ঝোপের কাছে বকুলের রক্তাক্ত শাড়ি পরে থাকতে দেখে; সুহাসিনীর লাল পিঁপড়া বকুলকে খেয়ে যায়”।
সামাজিক মনোজগৎ এর দিক থেকে বকুলের যে পরিণতি আমরা পাঠকরা মুখোমুখি হই সেটা শুধুমাত্র মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য এসব Human rights principle দিয়ে ব্যাখ্যা করা বেশ সাধারণীকরণ।
আঞ্চলিক মিথ, বৈশ্বিক নাগরিকতা, রাজনৈতিক সাম্য, নারী অধিকার সবকিছুকে পেছনে ফেলে বকুলের নিয়তি সেই ভবিষ্যতের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে যেখানে মানুষের আর্থ-সামাজিক পটপরিবর্তন ঘটলেও এই সব লীলা খেলা চলতে থাকবে। এই ভবিষ্যতের ধরণের ব্যাপারে কিছু বাক্য ব্যয় করতে চাই অন্যতম সাবঅল্টার্ণ তাত্ত্বিক দীপেশ চক্রবর্তীর দোহাই দিয়ে। দীপেশ চক্রবর্তী তার ক্ল্যাসিক বই ‘Provincializing Europe’ এ কার্ল মার্ক্স এবং মার্টিন হাইডেগার এর মাধ্যমে দুই ধরণের ইতিহাস পাঠ সামনে আনেন। একটি ইতিহাস ১ এবং ইতিহাস ২। ইতিহাস ১ এ তিনি আধুনিকতার যে ইতিহাস পাঠ তাকেই মার্ক্সের বরাত দিয়ে ব্যাখ্যা করছেন যেখানে সর্বজনীন মানবতা, পুঁজি, সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ইত্যাদি বৈশ্বিক সব ধারণার সর্বব্যাপিতার কথা বলছেন যা পৃথিবীর আনাচে কানাচে পৌঁছে এর সুবাস ছড়িয়ে দিতে পারে।
ইতিহাস ২ আবার এমন এক ব্যাপার যা ইতিহাস ১ নামক ট্রেন যেভাবে চলতে চায় সেভাবে চলতে দেয়না। ইতিহাস ২ হচ্ছে জগতের যে কোন স্থানিক এবং অভিজ্ঞতাজাত নির্দিষ্ট অস্তিত্ব যেখানে আধুনিকতার প্রগতি রাস্তা ধরে চলেনা। আধুনিকতার রাস্তা যেরকম একটা সরলরৈখিক ভাবে ধারণা বা ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে উল্টোভাবে ইতিহাস ২ হচ্ছে ‘সময়গ্রন্থি’র মত যে গ্রন্থিতে এক সাথে জট বেঁধে থাকে নানা কালের, নানা অভিজ্ঞতার জনম জনম ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্ন কিন্তু গাঢ় ছাপ।
আধুনিকতার যে একরৈখিক পাঠ আমরা করে থাকি তা অবশ্যই একমাত্র ‘চিন্তাপ্রক্রিয়া’ নয় বরং অনেক Multiple Belonging এর অপশন আশেপাশে আমাদেরই মনোশরীরে ছড়িয়ে আছে। খুব সাধারণ একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন দীপেশ : ভারতের নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ১৯৩০ সালের এক সূর্যগ্রহণ এর আগে বাসায় দৌড়ে এলেন পবিত্র গোসল দেবার জন্য। তাকে যখন প্রশ্ন করা হল যে, আপনি এমন একজন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী হয়ে এসব সংস্কার বিশ্বাস করেন?—-এর উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “নোবেল পুরষ্কার? এটা তো বিজ্ঞানের ব্যপার। সূর্যগ্রহণ তো ব্যক্তিগত ব্যাপার”।
‘কোথায় পাব তারে’ গল্পে বা ‘আমাদের বকুল’ গল্পে আঞ্চলিক একটা নিত্যতাকে প্রাধান্য দেবার বা স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ হিসেবে দেখা যায়। এই যে এসব মিস্টিসিজম এর সামাজিক একটা প্রক্রিয়া ‘দক্ষিণ মৈশুন্দি’ বা ‘সুহাসিনী’ তে লক্ষ্য করা যায় তা আধুনিকতার নিরিখে ‘পশ্চাৎপদ’ বা ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন’ বলে ধরে নিলে এখানকার লৌকিক চেতনাকে বাদ দিয়ে চিন্তা করা হবে। এই আমলে না নেয়াটা এক ধরণের অসম্পুর্ণ সমাজ পাঠ।
আধুনিকতা বা প্রগতিশীলতাকে ক্রিটিকালি বিশ্লেষণ করে সমাজবাস্তবতায় সংগঠিত সকল ঘটমান বৈশিষ্ট্যর দিকে নজর দেয়া সাহিত্যিক বা চিন্তাবিদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বৈকি! শহীদুল জহির তেমনি একজন সার্থক সাহিত্যিক যিনি ‘সময়গ্রন্থি’র দিকে নির্মোহভাবে নজর দিয়েছেন। তাইতো তার ভাষায় আবদুল আজিজের ডালপুরি খাওয়ার মত সামান্য দৈনন্দিন ঘটনার মধ্যেও সমাজের আয়না ঘোরলাগানো বাস্তবের মত ফিরে ফিরে আসে :
“আবদুল আজিজ ব্যাপারি আবদুল করিমের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে, আহো আহো, ডাইলপুরি মজার জিনিস, তুমিতো খালি নিজেরে লয়া থাক!
তখন আবদুল করিমকে মেনে নিতে হয়, সে আজিজ ব্যাপারির ঘরের ভিতরে ঢুকে ঘনায়মান অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ডালপুরি খায় এবং বলে, ডাইলপুরির মইদ্দে ডাইল নাইকা, হুদা আলু!”

[ইলিয়াছ কামাল রিসাত : সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষ করে বর্তমানে চাকুরিরত। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]