… perceive slums as one of the few authentic “evental sites” in today’s society – the slum-dwellers are literally a collection of
those who are the “part of no part”. (Interview, Nakedpunch, 2007)
–Slavoj Zizek
ঢাকা বিরাট রাজধানী শহর। অন্তত তেমন বলা যায়। মানে, সেইভাবেই শুইনা আসছি দেইখে বলতে পারি। আসলে, বাংলাদেশের বাইরে অন্যকোনো দেশের ও অঞ্চলের শহরে পায়চারীর সুযোগ পাই নাই। তাই অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষ কিছু বলতে পারিনা। তবে গবেষক খন্দকার মাহমুদুল হাসান সাহেবের মতে, ‘ঢাকা মধ্যযুগের প্রাচ্যের সমৃদ্ধ শহরগুলোর একটি। […] তা ছাড়া ইসলাম খান একটি বিরাণভূমিতে রাজধানী স্থাপন করেননি। […] অবশ্য ঢাকার জৌলুশের প্রকৃত সূচনাকাল মোগল যুগে।’ আরো জানা যায়, ১৯০৫র দিকে আসামেরও নাকি রাজধানী ছিলো। তা, ‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত ওনার ‘ঢাকা অভিধান’ বইয়ে ঢাকা সম্বন্ধে দরকারী জানাজানির তথ্য যোগাড় করেছেন। খালি ‘ভূমিকা’ পাতাটা থেকে তিনটা লাইন তুইলে নিলাম।
২০১৫ খৃস্টাব্দের ঢাকায় ফিরে আসি। জানুয়ারীর দিকে ছিলো। এক্ষণ তো সেপ্টেম্বর চলে। শীত শীত ভাব-সাব তক্ষণ। রোদ-মোদ নাই-নাই। ভালোই ঠান্ডা পড়ছে। এরমধ্যে উদ্দেশ্য-নাই পায়চারী করার অভ্যাস থেইকে বা কী যেন মনে করে রাস্তায় নেমে পড়া গেছিলো। পেশাজীবী ফটোগ্রাফার দোস্ত অপু চইলা আসলো। আমরা দুই দোস্ত, ঢাকার রাস্তায় নামলে খেয়াল-জাগা সৌখিন ফেবু-নিক্ গায় দিয়া এদিক-সেদিক পায়চারী করি। নিকটা- ‘ঢাকাওয়াকার্স’। সকাল ৯টা কী সাড়ে ৯টা সঠিক আর খেয়াল নাই। বড়রাস্তা গ্রীনরোডের এক কোনায় পা নামায় দেখি, মুচিওলা কাকা চাদ্দর-মাদ্দর মাফলার-টাফলার জড়াইয়া-জুড়াইয়া বইসা ওনার দোকানের পাশেই একটুকরা মিনিয়েচার খাণ্ডবদাহ জ্বালাইয়া উত্তাপ টানিতেছিলেন!
সেই দৃশ্যটা দেইখে স্মরণ আসলো যে, আরে সকালেই টিভির কোনো চ্যানেলের খবরে দেখাচ্ছিলো মোহাম্মদপুরে কাটাসুর নামের কোনো এক বস্তিতে আগুন লাগছে! অতএব ‘ঢাকাওয়াকার্স’ ঠিক করলাম, লে ভাই! চল যাই! আগে তো এইগুলা ভ্রমণে যাই নাই! দেইখে আসি তো কাহিনীটা কী!
বস্তি যে কী বস্তু আসলে এইটা নিয়ে তেমন জানিটানি না। বাস করি পাকা ঘরবাড়ী উঁচু দালানকোঠা। ফ্লাটবাড়ীতে। যদিও নিচের বস্তির মতোই মাঝে মাঝে মনে হয় কিন্তু আসলে তো না। তাই উপরে পপুলার দার্শনিক স্লাভয় জিজেক সাহেবের কথা কয়টা ধার নিয়ে বসাইলাম। যদিও বুঝতেছি না ঠিকঠাক আসলে কী বললেন, তবে ‘ইভেন্টাল সাইট’ যে সেইটা সত্য মনে হইছে এখন অনেক পরে আইসে। তা, বস্তি সম্বন্ধে কয়েকটি ইন্টারনেট তথ্যসূত্র মোতাবেক জানা যায় যে, ‘বস্তি হল কোনো শহরের ভগ্নদশাগ্রস্থ (run-down) এলাকা, যার বৈশিষ্ট্য হল নিম্নমানের বসতবাড়ি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্থায়ী নিরাপত্তার অভাব।’ বসবাসরত ‘অনেকেই তাঁদের বাসস্থানকে বস্তি আখ্যা দেওয়ার ঘোর বিরোধী। তাঁদের মতে, এর ফলে শেষ পর্যন্ত তাঁরা উচ্ছেদের সম্মুখীন হতে পারেন।'[১] ‘২০০৫ সালে’ ঢাকা শহরে বস্তির ‘সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তিতে এবং সেখানে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ বসবাস করছে৷'[২] আরো জানা যায় যে ‘নগরীর একটি সচ্ছল পরিবার এক হাজার লিটার ওয়াসার পানির জন্য পরিশোধ করেছে মাত্র ৭ টাকা। আবার একটি দরিদ্র বস্তিবাসী পরিবারকে দুই টাকায় ২০ লিটার (এক কলস) পানি ক্রয় করতে হয়।'[৩]

সেসব চলাকালীন অবস্থায় রিকশায় চইড়ে যাত্রা কইরে পৌঁছে গেছিলাম, বাবর রোডে। ‘এস এস ক্যামেরা এন্ড ফটোগ্রাফি’ নামের এক দোকান বা অফিসে কিছু কাজের পরে কাছেই বাজারে গেলাম। পায়চারী করার মধ্যে জায়গায় জায়গায় টং দোকানে চা-পান করাটা ঢাকাওয়াকার ভাইলোগের অভ্যাস। এই-সেই সেই-এই আলাপ-সালাপ আর চা-পানে, কোথাও যে কোনো ধরনের আগুন লাগছে, তেমন হুঁশহদিশ দেখছিলাম না, মনে পড়ে।

বাজার তার নিজের মতোই হাউকাউ নিয়ে চলমান। চায়ের দোকানটার পিছেরই গলিতে সূতা বাইন্ডিং কল আবিষ্কার করলাম। কিছুক্ষণ কুষ্টিয়া বা নওগাঁ কোথাও-এমন-আছে যেখানে-যাই-নাই-এখনো সূতাকলগুলা নিয়ে প্যাঁচাল পারতে পারতে দুই দোস্ত আবার রিকশায় উঠলাম। কাটাসুর বস্তি যাবো বলি, রিকশাওলা মামায় চেনেন না। আগুন লাগছে বেগুন পুড়তাছে বলেও লাভ হইলো না বিশেষ। মামায় নিজেই বটতলা না কী যেন এক জায়গার নাম বলে প্যাডেল মারতে লাইগে গেলেন।
বটতলায় নাইমা দেখি, গড। ফায়ার লিডার। আর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।
ততক্ষণে হুলুস্থুলু শেষ হয়-হয়। সাড়ে ১১ কী ১২টার মতো বাজে-টাজে। আগুন অনেকটা নাই-নাই। তবে ধোঁয়া ছিলো। কারণ আগুনটা সেই সকাল সাড়ে ৮টায় লাগছিলো। সেই বিশাল এলাকার প্রায় সব জ্বালায় ছারখার কইরা বসায়া দিছে। তিনতলা একটা টিনশেড ঘর ছিলো, সেইটারেও জ্বালায় ছনঘরের মতোই ছাইয়ের মতো বানায়া প্রায় মিশায় দিছে। বিধ্বস্ত টিনগুলা আগুনের আঁচে ত্যারায়বেকায় চেগায়ম্যাগায় গেছে। গেলে দেখা যায় যে কাটাসুর বস্তির বিস্তারটা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘এল’ শেইপের মতো কইরে। আগুন, অনেক সময়ই যা শুনা যায় ইলেক্ট্রিক শর্টসার্কিট থেইকে নাইলে কয়েল পোড়া থেইকে ভায়া মশারি দিয়া ঘিঞ্জি ঘরগুলায় একটার পর একটায় ছড়ায় গেছিলো। একজন বস্তিবাসিন্দার হালকা বিবরণের কথা মনে আসে কিছুটা। উনি বলছিলেন, সকাল ৮টা কি সোয়া ৮টার দিকে তখন ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ শোনেন জানালার কাঁচে কে যেন বাড়ি দিয়ে যাচ্ছে। উনি পাত্তা দেন নাই। পরে বারে বারে আঘাত লাগার শব্দ আর চেঁচামেচিতে উঠে পর্দা সরায় দেখেন যে সামনের টিনশেডটা প্রচুর খড়ে আগুন লাগলে যেমনে জ্বলে তেমনে দাউদাউ জ্বলতেছে। সেই আগ্নেয় শিখা তার ঘরের জানালায় বাড়ি দিচ্ছে। বলতে বলতে জানালার উপর ড্রেনেজ পাইপের লাইনটাও আমারে দেখায় দিলেন।

আরো বলছিলেন, বস্তির পাকা বাড়িগুলার সাইডে উনি ছিলেন দেইখে তেমন ক্ষতির শিকার হন নাই। তাড়াতাড়ি বালতি আর পানি নিয়া আগুন থামানোর যুদ্ধে ঝাঁপায় পড়ছিলেন।
হইচই ও পানি নিক্ষেপের মধ্যে এদিক-সেদিক পায়চারী করতে করতে দেখলাম ও জানলাম দুইটি শিশুর লাশ বয়ে নিয়ে যাওয়া হইছিলো।
মনে পড়ে, শেষে কাঁটাসুর বস্তি থেকে বের হয়ে একটা চায়ের দোকানের কাছে বইসে মনে আসছিলো, তারিখটা ছিলো ১১। জানুয়ারীর ১১। ১/১১।

ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্যসূত্র:-
[১] ‘বস্তি’ (উইকিপিডিয়া)- https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
[২] ‘ঢাকা শহরে বস্তি সমস্যা’ (ডয়েশ ভেলে)- http://www.dw.com/bn/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE/a-5860880
[৩] ‘বস্তি সমাচার’ (ব্লগ)- http://www.somewhereinblog.net/blog/clownboy87/29566073
[ঢাকাওয়াকার্স: আশরাফ অপু (বামে) ও অনিক মামু (ডানে) সম্বলিত পার্ট-টাইম পায়চারী গ্রুপ। প্রথমজন ‘আইসটুডে’ ও ‘আইস বিজনেজ’ ঢাকাস্থ মান্থলি ম্যাগাজিনে কর্মব্যস্ত ফটোগ্রাফার। দ্বিতীয়জন বিশিষ্ট অলস। তৃতীয়জন ঢাকা চিড়িয়াখানায় বাংলার রয়েল বেঙ্গল টাইগার (মাঝে)। কপিরাইট- কর্তৃপক্ষ। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]