ডাইরির ফুটনোট অথবা ফুটনোটের ডাইরি – ইলিয়াছ কামাল রিসাত

4162779371_7b2f7a3747_b
প্রাপ্তিসূত্র – https://c1.staticflickr.com/3/2673/4162779371_7b2f7a3747_b.jpg


স্ট্যানলি কুব্রিক এর ‘A Clockwork Orange’ সিনেমা এই সময়ের ভাঙা দর্পণ। অথোরিটি এমনই, সে আমাকে আপনাকে শুধুমাত্র শাসনই করবেনা। যেহেতু তিনি বা তারা আমাদের দেখভাল করছেন তাই আমাকে তৈরি করার দায়িত্বও তাদের।
রাষ্ট্রে নৈতিক মানুষের মেলা বসবে, চাঁদ উঠবে, জ্যোৎস্না সম্পদ বিলাবে এটাই স্বাভাবিক!
এ পর্যন্ত যা বললাম এটা অথোরিটির ব্যাখ্যা।
এই সিনেমা দেখতে বসবেন সাদা চোখে। যেন আপনি সভ্য হন নাই, আদবকায়দা শিখেন নাই মানে এখনো নালায়েক।
ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জের জনৈক anomic প্রোটাগনিস্টকে যে থেরাপি দেয়া হয়েছিল তার অমানিবকতা অথোরিটির নালায়েকতা প্রমাণ করে।
পরিবারে বাবা মা ছোটবেলা থেকে যে শিক্ষা দেন একটা পর্যায়ে যত আধিপত্য বিরাজ করুক না কেন সন্তান রিএক্ট করবেই। কারণ, সে লায়েক হয়ে উঠছে। লায়েক হয়ে উঠার সুযোগ দেয়াটাও একটা বড় কাণ্ডজ্ঞানের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার সাম্যাবস্থা তৈরি হয়। তা না হলে চরম Chaos তৈরি হয়।
‘The Piano Teacher’ সিনেমা দেখবেন দয়া করে। অনেক উপকার পাবেন।
“Better Call Saul” নামে একটা সিরিজে এক উঠতি উকিল কোন মামলা পায়না। তো একদিন সে এক স্টান্টগিরি করে বসে। এর পর তার কাছে নানা লোকের মামলা আসতে থাকে।
প্রথম মামলাটায় তার যে ক্লায়েন্ট, সে বিশাল ধনকুবের। অনেক জমিজমার মালিক। তো উকিল যখন জানতে চাইল তার সমস্যা কি তখন ক্লায়েন্ট বলল: “আমি আমার বিশাল জমিজমা নিয়ে আমেরিকা রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেই ভ্যাটিকান এর মত রাষ্ট্র গড়তে চাই”।
তো উকিল নানা বিপত্তি সত্বেও বলে যে মামলাটা সে নিবে, এখন আপাতত তার ফি চূড়ান্ত হোক।
ক্লায়েন্ট আগ বাড়িয়েই তাকে বলল যে মিলিয়ন ডলারের মত অংক সে এখনই দিতে রাজি। যেই বলা সেই কাজ। ভদ্র ক্লায়েন্ট বিশাল ট্রে তে করে ডলার সাজিয়ে আনলেন। উকিল অবাক হয়ে ডলারগুলো চেক করতে গিয়ে আকাশ থেকে পড়লেন। সব ডলারে ঐ ক্লায়েন্ট এর ছবি ছাপ মারা।
অর্থাৎ তার ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ মুদ্রা ছিল সেগুলো!!!
প্রশ্ন: নাগরিক এর আচরণ নালায়েক নাকি রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত নালায়েকতা তাকে নালায়েক হতে বাধ্য করেছে?


কোন এক কালে অখ্যাত বিকালে রোকেয়া দিবসের প্রাক্কালে জনৈক সুধীজন বক্তব্য দিতে এলেন রোকেয়া ও বর্তমান নারী সমাজের জয়যাত্রা নিয়ে।
নারীর জয়জয়কার ও সমাজে সাফল্যের ফিরিস্তি দিয়ে খুব গর্ব করে উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন: “আমার ছয়-ছয়টা মেয়ে, সবাই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত”
সামান্য সেন্সওয়ালা বাকি সুধীজনেরা নিজেদের মধ্যে হালকা হাসি চালাচালি করে নিলেন এবং চোখের ভাষায় বললেন: উনি ছেলে সন্তান নেবার ইন্টেনশন নিয়ে পর্বতসমান চেষ্টা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন বলেই ছয়-ছয়টা মেয়ে হয়েছে!
ছয় ছয়টা মেয়ে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, এটা আনইন্টেনডেড কনসিকুয়েন্স..
যাই হোক, দিবসের মাহাত্ম্যের সাথে ভদ্রলোক নিজের বাস্তবতাকে ক্রিয়েটিভ rhetoric এর সাথে ক্যারিশমাটিক ভাবে ব্যবহার করেছেন।
আশীষ নন্দী’র সতীদাহ প্রথা নিয়ে ব্যাখ্যা খুব ইন্টারেস্টিং।তার বিশ্লেষণের অনেক দিক আছে। একটা এরকম: সতীদাহ প্রথা ছিল যতটা না হিন্দু ধর্মের গ্রন্থপ্রসূত তার থেকে বেশি উঁচু স্তরের হিন্দুদের ‘কালচারাল পিউরিটি’ প্রদর্শন।
প্রধানত মধ্যযুগে অল্প অল্প শুরু হলেও ব্রিটিশ পিরিয়ড এর আমল থেকে এর মাত্রা বেড়ে যায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে নতুন ধনিক শ্রেণীর উত্থান, ব্রিটিশদের চাপানো নানা নীতি ইত্যাদির ফলে সেই ব্রাহ্মণ শ্রেণীর গুরুরা ভেবেছেন সতীদাহ প্রথা তাদের ধর্মের বিশুদ্ধতাকে সবথেকে ভালভাবে প্রদর্শিত করতে পারে।
নন্দীর ভাষায়:
“to the extent this culture was itself a product of western and modern encroachments upon the traditional life style, Sati was society’s weirdest response to new cultural inputs and institutional innovations”
সতীদাহ প্রথার বিশ্লেষণ অনেক গুরুত্ব রাখে আজও কেননা, লক্ষ্যের সাথে ফলাফল অথবা ইন্টেনশন এর বোঝাপড়া ক্লিয়ার না হইলে কমেডি ও ট্র্যাজেডি তৈরি হয়!


বাসে ভার্সিটি লাইফের এক বান্ধবীর সাথে দেখা। স্বামী সহ বেড়াতে যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি চাকুরিতে পুনরায় যোগ দিতে। দুইজনেরই জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন। আবার কেউ ভেবে বসবেন না অঞ্জন দত্তের ‘এটা কি ২৪৪…”টাইপের কোন গল্প আছে। না, নাই।
তেমন গাঢ় বন্ধুত্ব ছিলনা। এক গেট টুগেদারে আমি সামান্য দুর্ব্যবহার করেছিলাম তার সাথে। স্যরি বলতে পারিনি। আজও বলা হবেনা। ব্যাপার না।
সে ভাল ছবি আঁকত। জানতে চাইলাম এখনো আঁকে নাকি। বলল-“আমি যে ছবি আঁকতাম সেটাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই”!
আজ টিএসসিতে দেখলাম সংগীত বিভাগের কিছু ছাত্র ছাত্রী গান গাইছিল ইন্সট্রুমেন্ট সহ। কিছু বাচ্চা-কাচ্চা দল বেঁধে তাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে গেল। গায়কেরা বাচ্চা ভিক্ষুকগুলোকে বলল তাদের সাথে গান গাইতে, তারা বাজাবে।
এর পর সে কি গান! ছাত্র ছাত্রীরা বাজাচ্ছে। তারা গাইছে। কোন তাল লয় এর হিসাব মাথায় না এসে বরং বিমোহিত হয়ে দেখছিলাম!
‘লাইফ ইস বিউটিফুল’ এর শেষ দৃশ্য মনে আছে? বাবা মারা যাবে, ছেলে জানতে পারবেনা। ছেলেকে নিরাপদ একটা খুপড়িমত জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল। বলেছিল কিছুক্ষণ পর খেলা শেষ হবে। যুদ্ধকে বাবা খেলা হিসাবে বুঝিয়েছিলেন যাতে আতংকিত না হয়। আরো বলে দিল যে এই খেলায় তারা জিতবে যদি সে ঠিকমত লুকিয়ে থাকে।যখন সব আওয়াজ বন্ধ হবে তখন যেন সে বের হয় এবং বুঝবে সে জিতেছে।
বাবার কথামত ছেলে সকালের দিকে বের হল। পুরো রাস্তা ফাঁকা। একটা ট্যাংক আসল। বিজয়ীর বেশে সে উল্লাস করতে করতে চলে গেল। সে জিতেছে ভেবে নিয়েছে।
সম্পর্কহীন এসব বাক্যাবলি।


– ভাইয়া, আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি। এক্সেপ্ট করেন।
– জি অবশ্যই, পাঠান।
– কি ব্যাপার, রিকোয়েস্ট পাঠানোর অপশন শো করছেনা।
– কি বলেন!! কি জানি কয়েকদিন আগে হাই অথোরিটি থেকে একটা সাবধানী বার্তা এসেছিল এটা ব্যবহারের ব্যাপারে।তাই অতি সতর্ক স্ট্যান্ড নিতে গিয়ে বোধহয় এমন করে ফেলেছি!!
আচ্ছা, আমিই পাঠাচ্ছি।
– তাই করেন।
– আজব! আপনাকেও পাঠানো যাচ্ছেনা!!
(দুইজনের মুখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হাসি)
দুইজনেই ঠিক করল ফ্রি হয়ে যার যার সিকিউরিটি সেটিংস soft কইরা দিবে!কিছুক্ষণ এর জন্য
……
ট্রয় কেন ডুবে, উড়ে উড়ে শঙ্খচিল হয়ে; ফেঁড়ে ফুঁড়ে হৃদয়ের এঞ্জিনের মরচে উড়িয়ে নেয়, তা বোঝা আর মারিয়ানা ট্রেঞ্চে মৃতের লাশ খুঁজতে যাওয়ার অর্থ আলিঙ্গন করতে আকাশের তারা চাষ করার মত সুকঠিন জীবন যাপন অত্যাবশ্যক হয়ে উঠছে।
ট্রিবিউট টু বিমূঢ় জগতের দার্শনিক কবি জীবনানন্দ দাশ।


– জীবন সাহেব, আপনি অফিসে আসেননি কেন?
– স্যার, আমি বুদ্ধদেব বসু সাহেবের সাথে আছি।
– উনি আপনার ক্লায়েন্ট?
– না, আমি উনার ক্লায়েন্ট। আমার মনের পেছনে যে কঙ্কাল আছে সেটা তার কাছে সারাতে এসেছি। কঙ্কালের হাড়ে কিছু ঘুণপোকা এসেছে, সুযোগ পেলেই কেটেকুটে চিবুতে থাকে।
– এসব ব্যক্তিগত কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা বলেন।
– কাজের কথাই বলছি। স্যার আরেকটা পরামর্শ দিয়েছেন উনি। বলছেন আমাকে প্রচুর হাঁটতে হবে। প্রচুর। হাঁটলে আমি ভাল হয়ে যেতে পারি।আপনিও হাঁটবেন, স্যার?
– আপনি তো মশকরা করছেন! যাক হাঁটার কথা বলছেন তো? আমিও একসময় হাঁটতাম অনেক। ওয়েট করেন। আমি আসছি।
– স্যার, হাঁটার সময় একটা মন্ত্র জপতে হবে।
– কি মন্ত্র?
– রাইনার মারিয়া রিলকে সাহেবের একটা কবিতা।
– উনি আবার কে?
– উনার ক্লায়েন্ট হচ্ছেন আমাদের বুদ্ধদেব সাহেব, মানে আমরা এখন যার কথামত কাজ করতে যাচ্ছি।
– আচ্ছা, মন্ত্রটা টেক্সট করুন

‘The Walk’

My eyes already touch the sunny hill,
going far ahead of the road I have begun.
So we are grasped by what we cannot grasp;
it has its inner light, even from a distance –

and changes us, even if we do not reach it,
into something else, which, hardly sensing it, we already are;
a gesture waves us on, answering our own wave …

but what we feel is the wind in our faces.

(ম্যাসেজ সেন্ট)

Rilke_in_Moscow_by_L.Pasternak_(1928)
‘মস্কোতে রিলকে’ – লিওনিদ পাস্তেরনাক; প্রাপ্তিসূত্র – https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/c/c4/Rilke_in_Moscow_by_L.Pasternak_%281928%29.jpg

 

(রিলকের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ – রবার্ট ব্লাই)


 

1511726_10203080991135109_1129685515_n
ক্লিক – শান্ত মহাসেন

[ইলিয়াছ কামাল রিসাত : সিনেমাখোর, প্রবন্ধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন শেষ করে বর্তমানে চাকুরিরত।  – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s