কোবতে একাদশ ১ – সৈকত দে

১.

যে শালা বলেছিলো, দারিদ্র্য তুমি মোরে করিয়াছো মহান তারে আমি বিচরাইতেসি হ্যারিকেন দিয়া, সেই তো বলেছিলো, তুমি মোরে দানিয়াছো খ্রীষ্টের সম্মান, আমি তারে বিচরাইতেসি তারে বহুকাল, কর্পোরেট পুস্তকবাণিজ্যে থেকে ও ক্লান্ত হয়ে এবং প্রেমিকার আনপ্লাগড ভ্রুকুচঞ্চনে পুতিয়ে যেতে যেতে আমি বহুবার সেঁদিয়ে যেতে চাইছিলাম ভলুয়ার দীঘির পাড়ের শ্মশানের বৈদ্যুতিন চুল্লীতে আর রোস্ট হতে হতে ঘোস্ট হতে হতে আত্মাকে লুকাতে চেয়েছি তার সস্তাসেমিজের তলায়। দারিদ্র্য দূর করবে বলেছিলো যে ক্লিনসেভড মাদারি, সফট ব্রাশড সাদা দাঁত দেখাতে দেখাতে যে বলেছিলো এইসব আচোদাকথা বিনাখোদার সততকসম আমি তারেও বিচরাইতেসি।
মানুষ নিয়ে এসকল তামাশা করার জন্যে আমি তাদের এক বিকেল উস্তাদ রশিদ খানের গলায় রবীন্দ্রগান শোনাবো।


 

২.

কোথাও কথার শব্দ নেই।
স্পর্শ নেই।
অবসাদে চোখ বুজে আসা মানে ঘুম নয়
ডাক্তারবাবু, ব্যথাহীন অতলে তলাবার ওষুধ জানো?
ব্যথা ভারি ভয়, সাঁতার জানি না।
একটু বৃষ্টি হলে গাছেরা সবুজ জামা ফিরে পেতো আবার


 

৩.

মন খারাপ হলে সেলফোনে দাবা খেলি।
খুঁজে বেড়াই ক্ল্যাসিক সব মুভমেন্ট।
সৈন্য ধীরে মন্ত্রী হলে ভালো লাগে।
মোজার্ট চালিয়ে দিই।
একদিনও জিততে পারিনি।
খালি ড্র হয়।
আত্মার স্নান ঘটে সুরে।
মেনে নিতে পারিনা প্রিয় বন্ধুর অপমান
মেনে নিয়েছি তোমার সাইলেন্ট মুভিপনা
ক্লান্ত হলে গলির মুখের ডাবওলা থেকে ডাব কিনে খাই। খোলটা ফেলে দিই। পরিত্যক্ত খোল দেখে মায়া লাগে। সেই তো দিয়েছিলো বিশুদ্ধ আনন্দ।
পরিচিত নারীদের মনে পড়ে।
মনে পড়ে তাহাদের শিশুদের হাসি


৪.

বেগুন ভাজার গন্ধ পাচ্ছি।
ঠান্ডায় আমার আত্মা অব্ধি জমে যাচ্ছে।
এক ছোটোবোনের সাথে ফোনে কথা বলে ছেলেবেলায় ফিরলাম।
পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে সারা সন্ধ্যা পড়ে গেলাম চৈনিক ফেয়ারি টেলস।
আমি তোমাদের কখনো বলিনি,রুশ লোককথা অধিক ভালো লাগে আমার।
আমি জানিনা,জীবনানন্দ ফেয়ারি টেলস পড়তেন কিনা!
একটি বাচ্চা ছেলে কয়েকদিন আগে জানতে চেয়েছে মেয়েমানুষের সন্ধান
টাকা দিতে রাজি
আজ দেখি নারীর মর্যাদা রক্ষায় সে বদ্ধপরিকর
আমি ধোয়া তুলসী নই
কিন্তু এসবে বমি পায়
আমি ফেয়ারি টেলস পড়ি টানা


 

৫.

হ্যাঁ দাদাভাই, ঠিক ধরেছেন আমি ৫ মিনিট পর পর স্ট্যাটাস দিই, সারাদিনে শখানেক হয়।
হ্যাঁ দাদাভাই, সারাদিনে আজাইরা সব ছবিতে টাইমলাইন ভরে রাখি আমি।
হ্যাঁ, আপনার বিবেচনা সঠিক, আমি ক্ল্যাসিক্যাল কিছু বুঝিনা, চেক ইন দিতে গেসিলাম বেঙ্গলে।
হ্যাঁ, আমার ভালো লাগে অনেক কিছুই যা আপনার রুচিতে আসেনা যেমন দীপিকার নাচ।
আমার ভালো লাগে ধুম থ্রির অডিশন সং, আহা কাতরিনা!
শিবকুমার মাথায় ফলিয়ে তোলেন অজস্র মিহিফুল, আমি ওইটুকুর জন্য গিয়েছিলাম।
আপনি আমার ভালোর জন্যে আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন
১। কবিতাকে কোবতে বলবে না
২। সিনিয়রদের মনে মনে চুদির্বাই বলবে না।
৩। শুদ্ধ সঙ্গীত নিয়ে ফাজলামো করবেনা।
৪। অপসংস্কৃতি বর্জন করতে বলছেন আপনি।
৫।এই শরীর শ্রেণীর শরীর, বলেছেন – নষ্ট না করতে।
আমার ভালো লাগে আপনার সাদা চাদর, ভারি ফ্রেমের চশমা।
একটা পরামর্শ – ব্লক অপশন ইসতেমাল কর দিজিয়ে!


 

৬.

ব্যথা নিজেকেই হজম করে ফেলতে হয়।
যাবতীয় সম্পর্কই দরকারের,দরকার ফুরোলে তুমি ফসিলমাত্র।
অতএব বেদনার পুকুরে নিজেকে একটা সোনা ব্যাঙ ভেবে ক্রমাগত লাফিও না অক্ষম রাগে।
আমি একটা বুদ্ধি দিতে পারি।
আশা করা ছেড়ে দাও।
বেশিরভাগ বহুগামিনীর নাম জেনো, আশা।


৭.

গাজর আর আলুর ঠেলার সামনে আর্ট কলেজের দুটি ঝলমলে তরুণী।
আমার পেছনে মসজিদের নালা আর তারা রোল করা আর্টপেপার নিয়ে দাঁড়িয়ে কিনছে আলু আর গাজর।
স্টিললাইফের দরকারে মেবি।
এই দৃশ্যটিই আমার সামনে ইস্পাতজীবন!
এই যে আমি রাস্তায় রেলিং এ হেলান দিয়ে ফার্স্টইয়ার তরুণের রোলে মানিয়ে যাচ্ছি ঢালিউড ধারাবাহিকতায় আর গুটিকতক মুসল্লি ধীর পায়ে ফিরে যাচ্ছে ঘর আর আমি দেখে যাচ্ছি আরেকটি ঠেলায় অগুনতি পুষ্পরহিত চারাগাছ এইসব লিখে রেখে একচোট হাসি নিজে নিজে
এইসব আমার কাছে কবিতা
কবিতা তো মুঠোভর্তি বালি ঝরে যাচ্ছে সমস্ত আবেগে দিশাহীন নির্বিরোধ তবু লিখে রাখি।


 

৮.

ঘুম একটা নিখুঁত খুন হতে পারে যাতে খুনীর ফাঁসী হয়না।
কেবল শিশুর দুধগন্ধ পিছুটান-
জেনে রাখা ভালো, সকল পুরুষ হারামজাদা এবং নারীরা ধোয়া তুলসীপাতা।
দ্যাখো, অন্তত এই স্বগতোক্তিতে কোনো লিঙ্গবৈষম্য নেই। সত্যিই আমার মা যতটা নারী, চলে যাওয়াটিও। বুকে হাত দিয়ে বলা তো যায়না যে পুরুষের প্রেমেও পড়িনি!
ইনসমনিয়াক সাধারণত বোকাডটডট হয়ে থাকে। ইনবক্সে কুশল জানতে চায় টানা। প্রোফাইল ঘাঁটে প্রিয় বন্ধুদের।
এসো, জগতের সকল ইনসমনিয়াক আমাদের পরবর্তী প্রার্থনার কেন্দ্রে থাক
এসো, সমস্বরে বলি স্নায়ুকে অষুধের পোষাক পরাবোনা
এসো, শেষবার একসাথে ঘুমিয়ে পড়ি। জেগে উঠে পৃথিবীটা খানিক সারিয়ে নিতে হবে। জেনে নিতে হবে, মানুষ কিভাবে মানুষের দুইকোটি আলোকবর্ষ দূর দিয়ে হাঁটে!


৯.

তাহলে ব্যাপারটা এই যে তোমার যদি টাকা না থাকে, চাকরি না থাকে তুমি কোনো অসঙ্গতি দেখলে বলতে পারবেনা?

ফুটপাথে শুয়ে আছে যে নুলো ভিখারী তারো অধিকার নেই সুন্দরীর চাঁদরং গোড়ালি দেখে দীর্ঘশ্বাসের?

বহুদিন আগে বলেছিলো এক অগ্রজ, চাকরি তো পেয়েই গেছো, ছ’হাজার পাবে, কাজ হলো খাতুনগঞ্জে ক্যাশের পাশে জিহবা বের দাঁড়াবে তুমি
লালা ঝরাবে
টাকা গুণবো আমি।

জানেন, বিমর্ষ এক অপমান হয়েছিলো, চুপচাপ অনেকক্ষণ বসেছিলাম প্লাসিডের গ্যালারিতে।
গির্জার ঘন্টাধ্বনি নেমে এসেছিলো বাবার হাত হয়ে।
তাহলে চাকরি যারা করে, জিহবাকে পাছার সাথে সাঁটিয়ে রাখাই ভবিতব্য তবে? সিসিফাসনিয়তি?
সব সাইলেন্ট মুভি?
বেশ।
ভিখারিও তবে আজ নিরব হোক।


 

১০.

আসলে সে ফোন করেনি।
একটিই ফোন এসেছিলো, আমার বোনের।
ফোন আসতে পারে ভেবে জীবনের প্রথম সায়েন্স ফিকশন লিখে ফেলেছি, সকালে।
আজ, এখন, মেহেদীবাগ রোড দিয়ে দ্রুত হেঁটে বাতিঘর যাওয়ার পথে বিশদ বাংলার বারান্দার কাঁঠাল গাছটিকে ভেবে কান্না পায়। অজস্র বিকেল আমি ও সে, সে মানে কাঁঠালগাছ। আর ভাবি তাকে, যে ফোন করবে ভেবে ভেবে সারাদিন।
পরস্ত্রীতা সাবেক প্রেমিকার উর্ধ্বে থাকা দেবী আসন, ও থেকে নেমে কুশল জানতে চাওয়া কোটি বছর রৌরবে থাকার শাস্তি।
চিরকাল বোনেরাই বুঝে গেছে ভাইয়েদের অস্তিত্ব।


১১.

আপনার হাবি হাপিস হয়ে যায় দুই দিন পরপর
আপনি অসভ্যতা করেন ছোটো ভাইদের সাথে
বাক্যে শব্দে যেন এসব পুঁই শাকের মত পুষ্টিকর
রক্তউৎপাদক।
আপনারা পরষ্পর নিজেদের আয়না
অথচ হাবিই খাবি খেলো আযাপন।
আমার এসব বলার কথা নয়।
আমি আরেকটা মেধাবীর জলেডোবা দেখে
কামড়াই হাতপা, খুলে আসে আমার চোখ,
ঘুমিয়ে পড়ে আমার দ্বিতীয় আমি।
সব প্রেম বোধকরি পরিচর্যা চায়
নাহলে সেসব …দ মারা খায়

postmodern_romantic_art
লুপটপ – ফ্রান্সিস বেরি; প্রাপ্তিসূত্র – http://francisberry.com/postmodern_art/postmodern_romantic_art.htm

 


 

12666480_887885311326210_1336565878_n

[সৈকত দে –  চট্টগ্রামের পোলা, জন্ম ১৯৮১। পাঠক, ফিল্মখোর, মিউজিক পাগল। প্রিয় লেখাপত্র অনুবাদ করেন। তিনি মাসুদ রানা আর ভাস্কর চক্রবর্তীর ফ্যান, বর্তমানে ফিল্মনির্মাতা থিও এঞ্জেলোপুলুসকে খুব ভালোবাসেন। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ]

 

One comment

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s