বিবাহিত পুরুষের মন
অনেক বেদনা তার
তাই সে মদ খায়
গুলশানে, শাহবাগে, সাকুরায়…
জনসমুদ্রে সাঁতরায়, কাতরায়, বলে
‘হায় হায়! কেন তুমি বোঝ না আমারে?
যা কিছুই এ জীবনে, এই যে রিয়েল সব
এরাই অবাস্তব।
এ জগতে সত্যি শুধু তুমি আর আমি।’
রাস্তায় কারা জানি হাসাহাসি করে
রিকশায় আসে যায় কেউ কেউ
কেউ কেউ হাঁটে আর
গাড়ির হর্নের চোটে
মাঝরাতের ঘুম মোর
বাপ বাপ করে ভেঙে পড়ে
উড়ে যায় না ফেরার দেশে।
চোখ কচলায়ে কই
হ মামু, বুঝিয়াছি আমি,
তবে শুনি তুমি নাকি
বিয়া করা বউ এর বিয়া করা স্বামী?
বিষাদ বিদীর্ণ স্বরে সে আমারে কয়
‘বোঝ না এ ব্যাকুলতা?
নক্ষত্রের চেয়ে বড় আমার প্রণয়!
দারা পুত্র পরিবার
আমি কার কে আমার!
সব কিছু ছেড়েছুড়ে
তোমার পায়ের তলে লুটায়ে রয়েছি পড়ে।’
দিন যায় মাস যায়, রাস্তায় রাস্তায়
কথা হয় ফেসবুকে, দেখা হয় স্কাইপিতে
বিকালের আলো দেখি তার চোখে মুখে
আমার জানালা জুড়ে ক্যামেলিয়া
ফুটতেছে সেও তো তা দেখে।
ছুটির দুপুর বেলা
বউয়ের বানায়ে দেয়া সর্ষে ইলিশ
শেষে তৃপ্তির হাসি হেসে
বউয়ের বাড়ায়ে দেয়া মসলার বাটি থেকে
সুপারি উঠায়ে নিয়ে দাঁতে কাটে আর
আমারে কয়, ‘ওগো জান্!
জানো নাতো এ সংসার কারাগারে
বন্দী পাখির মতো ডানা ঝাপটাই।
আসিতেছে শালাশালি, বউয়ের ডিমান্ড খালি
এ শহর তাহাদেরে ঘুরায়ে দেখাই।
এরকম কিছু দায় এড়াতে পারি না সোনা
প্লিজ বাবু, বুঝবা না তুমি?
বিয়া করা বউয়ের যে আমি হই বিয়া করা স্বামী।’
আমি বুঝি, আমি হাসি, আমি বলি ইশ!
আমার অটাম কালে, ক্যামেলিয়া পাতা ঝরে
আমার চোখের পানি গুনে গুনে ধরে রাখে
আমার বালিশ।
তারপর কোন এক সন্ধ্যায়
নিদারুণ বেদনায়, আমারে সে বলে
‘তোমার প্রেমিককুল, তারা কেন বেঁচে থাকে?
কেন তারা দম নেয় শ্বাস ফেলে?
কেন তারা মদ খায়, শাহবাগে কেন তারা
হাঁটাহাঁটি করে? কেন তারা ঘুরেঘুরে ফিরে আসে
আমার রাস্তায়? কী বিষম এ যাতনা, তুমি কি গো বুঝিবা না?
ভালো ত বাসো না তুমি, শুধু অভিনয়!
আজ আমি মদ খাবো
আজ আমি মরে যাবো
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি ভাই
জীবনের গাঢ় বেদনার অবিরাম অবিরাম ভার
সহিতে পারি না আর
কোথায় গেল ড্রাইভার?’
অপার বেদনা তার
আবার সে মদ খায়
গুলশানে, শাহবাগে, সাকুরায়…
হতাশায়, দুরাশায়, হিংসায় নীল হয়ে
বউয়ের বুকের পরে লীন হয়ে থাকে।
থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার,
তারে কী বলিব আর আমি?
বিয়া করা বউ এর সে তো বিয়া করা স্বামী।
আমার এ জানালায়
রাত নামে কুয়াশার মতো।
ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল।
স্মৃতির মিছিল, ভিড় করে
ছায়া ফেলে, আলো নিয়ে চলে যায়।
আর আমি গান গাই, মাঝরাতে
আকাশে ঝুলন্ত থাকে ম্লান ভাঙা চাঁদ
সে আমারে ডাকে, শক্তির কবিতায়
চিতাকাঠও ডেকে যায়, আয় আয় আয়…
যেতে পারি, যে কোন দিকেই আমি,
কেন যাবো বলো?
বলা হলো কত কথা, নির্ঘুম পার হলো
আরব্য রজনী…আর কতো?
পাশ ফিরি, এবার ঘুমাই…
ঘুমঘোরে গান গাই বালিশের কানে কানে…
‘না বলা, না জানার ব্যথা রয়ে যাবে মনে মনে…’
-২০ মার্চ ২০১৫, মেলবোর্ন

[ লুনা রুশদী – লেখক। বিদাশে থাকেন। নানান কামকীর্তি কইরা অহন দরবেশ-দশায় আছেন। তয় এই কবিতা লেখার সমকা দরবেশ দশায় ছিলেন না। এখন আছেন। এখন সকল জীব-অজীবের প্রতি তার ভালবাসা। প্রকাশিত বই – এক, অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্যা ব্রোকেন রিপাবলিক’ এর অনুবাদ-গ্রন্থ আর দুই, সাগুফতা শারমীন তানিয়ার সাথে যৌথ বই ‘আনবাড়ি'(যাতে উনার মানে লুনার অংশ একটি নভেলা)। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ]
…লিখলেন ক্যামনে ভাই?
LikeLike