(রিচার্ড ক্লেইন ও ব্লেইক এডগার সাব’এর “The Dawn of Human Culture” বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় Bipedal Apes– এর অনুবাদ, দ্বিতীয় কিস্তি। অনুবাদে প্রত্যাশা প্রাচুর্য – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ)
দ্বিতীয় অধ্যায়, ১ম কিস্তির লিঙ্ক

The Dawn of Human Culture (Chapter 2, Part 1): “আফ্রিকানুস বনাম রোবাস্টাস অথবা দাঁতের কেচ্ছা ”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করলে আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে বলা যায়। উভয় প্রজাতিই ‘অস্ট্রালোপিথ’ বা দ্বিপদ এপদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির ধারক। আধুনিক মাপকাঠি দিয়ে বিচার করলে, উভয় প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাই আকারে বেশ ছোটখাট। সবচেয়ে লম্বাজনও সম্ভবত ৫ ফুটের বেশি ছিল না, আর ওজন ৫০ কেজির বেশি হতো কিনা সন্দেহ! স্ত্রী সদস্যদের আকার সম্ভবত আরো খর্বকায় ছিল। স্ত্রী-পুরুষের মধ্যকার এই যে দৈহিক পার্থক্য, যাকে ইংরেজীতে sexual dimorphism বলা হয়, আধুনিক মানুষের তুলনায় এই প্রজাতিদ্বয়ের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণেই ছিল। শিম্পাঞ্জিদের সাথে তুলনীয় বা হয়তো তাদের চেয়েও বেশি প্রকট ছিল স্ত্রী-পুরুষের এই পার্থক্য। এর থেকে ধারণা করা যায় যে, আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসদের সমাজ হয়তো অনেকটাই শিম্পাঞ্জিদের মত ছিল। যৌন চাহিদা মেটাতে পুরুষ সদস্যদের মধ্যে চলত দুর্দান্ত, সহিংস প্রতিযোগিতা। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে হয়তো এও ধরে নেওয়া যায় যে, শিম্পাঞ্জিদের মত এদেরও স্ত্রী-পুরুষরা পৃথক সামাজিক জীবন যাপন করত। খাদ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সন্তান পালন পর্যন্ত প্রায় কোন দায়িত্বই ভাগ করে নিতো না।

অন্যান্য এপ-সদৃশ বৈশিষ্ট্য, যেগুলি আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাস এই দুই প্রজাতির মধ্যেই দেখা যেতো, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় হচ্ছে, মস্তিষ্কের ছোট আকার। উভয় প্রজাতির প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যদের মস্তিষ্কের গড় আয়তন ছিল ৫০০ সেন্টিমিটার কিউবের (সিসি) চেয়েও কম। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে এই গড় আয়তন প্রায় ৪০০ সিসি আর পূর্ণাঙ্গ আধুনিক মানুষের ক্ষেত্রে ১৪০০ সিসি। আধুনিক মানুষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট দেহের কথা মনে রাখলেও, এদের মস্তিস্কের গড় আয়তন ছিল আমাদের মস্তিষ্কের আয়তনের অর্ধেকেরও কম। এছাড়াও শরীরের উপরের অংশের সাথেও এপদের মিল অনেক। লম্বা, শক্তিশালী হাতের কারণে এরা নিশ্চয়ই খুব দ্রুততার সঙ্গে গাছের শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করতে পারত। এপদের সাথে এদের পার্থক্য ছিল মূলত দেহের নিচের অংশে, যে অঙ্গগুলি মাটির ওপর দুই পায়ে ভর দিয়ে চলা-ফেরার জন্য পরিবর্তিত হয়েছিল আর এদের দাঁতের গঠনে।
দাঁতের গঠনের পার্থক্য প্রধানত দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, যে সব ফসিল পাওয়া গেছে তার মধ্যে দাঁতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। কারণ, অন্যান্য হাড়ের তুলনায় দাঁত অনেক বেশি মজবুত (শক্ত এনামেলের আবরণের কারণে)। যেসব জায়গায় পায়ের হাড় পাওয়া যায় নি, দাঁতের ফসিল সে সব স্থানেও অস্ট্রালোপিথদের উপস্থিতি সম্পর্কের আমাদের নিশ্চিত করে। দ্বিতীয়ত, দাঁতের মারফত আমরা অস্ট্রালোপিথদের খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য আরো কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও ধারণা করতে পারি। শিম্পাঞ্জি আর গোরিলারা সাধারণত নরম খাবার যেমন, পাকা ফল, কচি পাতা এসব খেয়ে থাকে। এগুলি হজম করতে খুব বেশি চিবানোর প্রয়োজন পরে না। সে কারণের এদের মোলার দাঁত (চোয়ালের মোটা দাঁতগুলি) অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের এবং পাতলা এনামেলের আবরণে ঢাকা থাকে। নরম খাবার চিবায় বলে, এনামেলের এই পাতলা আবরণটি ক্ষয়ে যাবার সম্ভাবনাও তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া, মুখ প্রায় বন্ধ করে চিবানোর সময় উপর আর নিচের চোয়াল আড়াআড়িভাবে নড়ানোর তেমন দরকার পরে না বলে এদের ক্যানাইনগুলিও বেশ বড় আকারের হয়ে থাকে, বিশেষ করে শিম্পাঞ্জি আর গোরিলা পুরুষ সদস্যদের মধ্যে। (মনে হতেই পারে যে বাড়তি এনামেল খরচ হয় নি দরকার নেই বলে। তাহলে এই বড় ক্যানাইনগুলি কি অপচয় নয়? না, মোটেই অপচয় নয়।) দাঁত বের করে হুমকি-ধমকি দেওয়া আর মারামারির সময়ে এত্ত বড় ক্যানাইনগুলি যে বেশ কাজে আসে তাতে সন্দেহ নেই!

এতক্ষণ তো শিম্পাঞ্জি আর গোরিলাদের দাঁত নিয়ে অনেক কথা হল। অন্যদিকে, আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসদের মোলারগুলি বেশ মোটাসোটা আকার লাভ করেছিল, আর আবৃত হয়েছিল পুরু এনামেলের ঢাকনায়। ফলে এরা প্রায়ই ভালো মত চিবিয়ে হজম করতে হয় এমন খাবার অনায়াসে খেতে পাড়ত, সে খাবার যতই শক্ত, মাংসাল, আঁশালো কিংবা দানাদারই হোক না কেন। এসব খাবারের মধ্যে সম্ভবত মাটির ওপর পড়ে থাকা বীজ থেকে শুরু করে মাটি খুঁড়ে পাওয়া বালব, টিউবার (দুটোই উদ্ভিদের ভূগর্ভস্থ অংশ, মূল, পাতাসহ কাণ্ড ইত্যাদি) সবই ছিল। এই দুই প্রজাতিরই ক্যানাইনগুলি ছিল বেশ ছোট, যাতে চোয়ালের আড়াআড়ি নড়াচড়ায় কোন রকম বাঁধা সৃষ্টি না হয়। আর তাই মারামারির সময় পুরুষ সদস্যদের পক্ষে হয়ত খুব একটা হম্বি-তম্বিও করার উপায় ছিল না। এই ব্যাপারটি একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ দিকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ছোট ক্যানাইনের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সাথে সাথে পুরুষদের মধ্যে আক্রমণাত্মকভাবও অনেকটাই কমে এসেছিল। ফলে হয়তো আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাস সমাজে প্রসারিত হয়েছিল সহনশীলতার মাত্রা!
আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য মূলত এদের গালের ভিতরের দিকে সাজানো মোলার, প্রিমোলারের গঠনে আর চিবাতে সাহায্যকারী পেশীর সামর্থ্যে। আফ্রিকানুসদের তুলনায় রোবাস্টাসদের পেষণ দাঁতগুলি ছিল আরো বড়, সাথে অত্যন্ত মজবুত পেশী এবং প্রিমোলার আর মোলারের পার্থক্যও নিতান্তই সামান্য। এখানে বলা বাহুল্য যে, মাড়ির পেশীগুলি অবশ্যই সংরক্ষিত হয় নি। তাই এই সম্বন্ধে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে পেশীগুলির লাগোয়া অন্যান্য হাড় পর্যবেক্ষণ করে। এর মধ্যে আছে, কিছুটা সামনের দিকে বেড়িয়ে আসা বেশ বড়োসড়ো, প্রশস্ত গালের অস্থি, আর মাথার খুলির উপরে ঠিক মাঝ বরাবর একটা চোখা-উঁচু হাড়, যা স্যাজিটাল ক্রেস্ট (sagittal crest) নামে পরিচিত। বিশাল, শক্ত-মজবুত চোয়ালের দাঁত আর এবড়ো-থেবড়ো খুলির জন্য রোবাস্টাস আর এদের জ্ঞাতিভাই আরেক পূর্ব আফ্রিকান প্রজাতি ‘প্যারান্থ্রোপাস বোইসেই’কে (Paranthropus boisei) একত্রে ‘মোটাসোটা’ (robust) অস্ট্রালোপিথ বলা হত। তবে দেহের দিক দিয়ে এরা দুইভায়েই আফ্রিকানুসদের মত ছোটখাট, ছিমছাম গড়নেরই ছিল। আর বাদ বাকি যত গুরুত্বপূর্ণ এনাটমিকাল বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন – ছোট মস্তিষ্কের আকার, এপদের মত ঊর্ধ্বাঙ্গ ইত্যাদি সব মিলিয়ে এরাও দ্বিপদী এপ ছিল নিঃসন্দেহে।
এপরা সাধারণত বেশ অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আর আমাদের হাতে এমন কোন প্রমাণ নেই যা অস্ট্রালোপিথদের এই দিক দিয়ে এপদের চেয়ে ব্যতিক্রম বলে তুলে ধরে। এপদের চেয়ে উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহারের শুরুটা হয়েছিল সম্ভবত আজ থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে ছোট ছোট পাতলা পাথরের হাতিয়ার আবিষ্কারের মাধ্যমে। আর এর আবিষ্কারকদের মধ্যে কতিপয় অস্ট্রালোপিথ রোবাস্টাসদের সামান্য পরিমাণ অবদান থাকাও অসম্ভব নয়। তবে বেশিরভাগ প্রমাণই অবশ্য অন্য আরেকটি গণ ‘হোমো’র (নামটা বেশ চেনা চেনা কিন্তু!) শুরুর দিকের কিছু আবিষ্কারকদের সিংহভাগ কৃতিত্ব দেওয়ার জন্য পক্ষপাতিত্ব দেখায়। এটা খুবই সম্ভব যে আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসরা শিম্পাঞ্জিদের মত গাছের ডাল সাইজ মত ভেঙে নিয়ে পিঁপড়ার বাসায় গুঁতোগুঁতি করত। অথবা হয়তো অহরহই প্রাকৃতিকভাবে সুবিধাজনক আকারপ্রাপ্ত পাথর বা কাঠের টুকরা দিয়ে বাদাম ছেঁচে খোসা ছাড়াত। তবে সমস্যা একটাই। এই জাতীয় হাতিয়ারগুলি ‘প্রত্নতাত্ত্বিকের’ চোখে অদৃশ্য প্রায়। আর হাতিয়ারগুলি যদি শিম্পাঞ্জিদের ব্যবহৃত হাতিয়ারের মত সরল প্রকৃতির হয়ে থাকে, তাহলে হয়ত প্রজাতির উপর উল্লেখযোগ্য স্থায়ী কোন প্রভাব ফেলার আগেই হারিয়ে গিয়ে পুনঃআবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্যবার। আধুনিক মানুষের ক্ষেত্রে এর চূড়ান্ত বিপরীত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আমাদের প্রযুক্তির ফল খুব দ্রুত জমতে থাকে, সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেলে আবার গোঁড়া থেকে আবিষ্কার করা দুঃসাধ্য, এমনকি এর বিনাশ সমগ্র প্রজাতির ধ্বংসের কারণও হতে পারে। বেশ ভালোই সম্ভাবনা ছিলো যে, আদিম পাথরের হাতিয়ার আবিষ্কারক আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি কোন কারণে পাথর ভেঙে পাতলা টুকরা করা ভুলে যেতেন, তাহলে হয়ত গুষ্টি-শুদ্ধ তাদের ভবিষ্যৎ যাত্রা সেখানেই সাঙ্গ হত!


ফিরে যাই আবার ডার্ট মশায়ের কাছে। তিনি আরো একটি জরুরি প্রস্তাব করেছিলেন যে, অস্ট্রালোপিথরা সম্ভবত কাছে-পিঠে থেকে অন্যান্য অস্ট্রালোপিথ বা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হাড় এনে দক্ষিণ আফ্রিকার গুহাগুলিতে জড়ো করত। এর মানে হতে পারে অস্ট্রালোপিথদেরও মানুষের মতই হাড়-মাংস-মজ্জার প্রতি স্বাভাবিক লোভ ছিল। তবে সি. কে. ব্রেইন নামের এক ভদ্রলোক, যিনি প্রায় বিশ বছর যাবত সোয়ার্টক্রান্স গুহায় খুঁড়াখুঁড়ি করেছেন আর গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রাপ্ত হাড়গুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, প্রস্তাব করেছেন অন্য কারণ। তাঁর মতে, ‘বিড়াল মাসির ভাগনে-ভাগনি’ (বাঘ, সিংহ, চিতা ইত্যাদি বড় বিড়াল বা large cats আর কি!) বা অন্যান্য বৃহদাকার মাংসাশী প্রাণীরাই এই সমস্ত হাড়ের উৎস। এই যুক্তির সপক্ষে ব্রেইনের কাছে ছিল একটা মোক্ষম প্রমাণ। একটা রোবাস্টাসের খুলির একটি টুকরার গায়ে একাধিক ‘পাংচার’ চিহ্ন। এই দাগ দু’টি ঠিক খাপে খাপে মিলে যায় লেপার্ডের ক্যানাইনের আকার-আকৃতি আর মধ্যকার দূরত্বের সাথে। বেবুনদের মত অস্ট্রালোপিথরাও রাতের বেলা হয়তো মাঝে-মাঝে গুহায় আশ্রয় নিতো। আর সেই রাতের আঁধারে গুহার ভিতরে লেপার্ড বা বহু আগে বিলুপ্ত চোখা দাঁতের বিড়াল মাসির অন্যান্য ভাগনে-ভাগনীদের হানা দেওয়াও মোটেই অস্বভাবিক না। সফল শিকারী যদি শিকারের স্থলেই ভোজ সারে তাহলে অবশ্যই কিছু হাড় মেঝেতে থেকে গিয়েছিল, আর পরিণত হয়েছিল ফসিলে। এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না যে, শিম্পাঞ্জিদের মত আফ্রিকানুস আর রোবাস্টাসরাও ছোট ছোট বানর বা অন্য স্তন্যপায়ী শিকার করত না। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার গুহাগুলি আমাদের বলে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওরা শিকারির নয়, বরং শিকারের ভূমিকাই গ্রহণ করত।
যেহেতু আফ্রিকানুসরা রোবাস্টাসদের আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতে বাস করত, সেহেতু এদের রোবাস্টাসদের পূর্বসুরি বলে গণ্য করা যায়। তাছাড়া এই দুই প্রজাতির মধ্যে দাঁত আর খুলির দিকে সাদৃশ্যও রয়েছে কিছু, মনে হয় যেন আফ্রিকানুসদের বৈশিষ্ট্যগুলিই যেন আরো একটু পরিণতি পেয়েছে রোবাস্টাসে এসে। অন্য দিকে রোবাস্টাসদের ইতিহাস এগিয়ে এসেছিল আজ থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে, পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত। সেই সময়টাতে, সেই স্থানটিতে আফ্রিকানুসরা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত আর সেখানেই থেকেই হয়তো রোবাস্টাসদের উত্তরসুরিরা আরো সামনের দিকে পা বাড়িয়েছিল। এই উত্তরসুরিরা সম্ভবত আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল না। কারণ মূলত দুইটি। এক রোবাস্টাসদের সম্পূর্ণ ভিন্ন গঠনের দাঁত আর খুলি। দুই, ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে এরা আমাদের আরো সম্ভাব্য পূর্বসুরিদের আশেপাশেই বিচরণ করত। ১ মিলিয়ন বছর আগে এই রোবাস্টাসরা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এর পেছনেও দুটি সম্ভাব্য কারণ ছিল। এক হতে পারে প্রায় একই সময়ে বিবর্তনশীল আমাদের সত্যিকার পূর্বসুরিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা, কিংবা কাছাকাছি সময়ের ক্রমহ্রাসমান বৃষ্টিপাতের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা। কিন্তু আফ্রিকানুসদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। এনাটমি আর সময়কাল, দুইয়ের বিবেচনায়ই এরা আমাদের পূর্বসুরি হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য(*১)। কিছু নৃতাত্ত্বিক এমনও বিশ্বাস করেন যে, এই আফ্রিকানুস ভিন্ন অন্য যে প্রজাতিই আমাদের পূর্বসুরি হোক না কেন, আফ্রিকানুসদের সাথে তাদের আত্মীয়তা নিঃসন্দেহে গভীর। এই গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয়তার সন্ধানে আর গল্পের পরের পরিচ্ছেদ জানতে আমাদের ফিরতি যাত্রা করতে হবে পূর্ব আফ্রিকা অভিমুখে!
টীকা –
*১ -বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য দুটো বাক্য যোগ করছি। মোদ্দা কথা, আফ্রিকানুসরা রোবাস্টাস এবং আমাদের এই দুইয়েরই ‘সম্ভাব্য’ পূর্বসুরি হতে পারে। তবে আফ্রিকানুস থেকে আমাদের পর্যন্ত আসার রাস্তাটা রোবাস্টাসদের মধ্যে দিয়ে আসার সম্ভাবনা বেশ কম। আফ্রিকানুস থেকে বিবর্তিত কিংবা এনাটমিকালি তাদের খুব কাছের অন্য কোন প্রজাতিই হয়তো ছিল আমাদের সম্ভাব্য পূর্বপুরুষ। ভাষার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রচুর পরিমাণে ‘হতে পারে’, ‘হয়তো’, ‘সম্ভাব্য’ ইত্যাদি শব্দাবলীর প্রয়োগ এড়ানো অসম্ভব। এটা বিজ্ঞানের দুর্বলতা নয়, বরং এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি। ‘স্বস্তিদায়ক নিশ্চয়তা’র জন্য আরো বহু প্রচলিত, বহু প্রচারিত পুস্তক সমূহের দারস্থ হওয়ার সুযোগ সদা বিদ্যমান। – অনুবাদক (মূল টেক্সটের অধিকাংশ বন্ধনীবদ্ধ আইটালিক শব্দসমূহ অনুবাদকের)
(চলবে..)

রিচার্ড জি. ক্লেইন – প্যালিওঅ্যানথ্রপোলজিস্ট। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের অধ্যাপক। লেখক।
ব্লেইক এডগার – বিজ্ঞান লেখক।
[ প্রত্যাশা প্রাচুর্য – বুয়েটে পত্তেন, অহন উচ্চশিক্ষার্থে বিদাশে। বই পত্তে ভালবাসেন। ভবিষ্যতে মাছ চাষ করার (গোপন) ইচ্ছা রাখেন। (আগ্রহী কেউ চাইলে, তার অন্যান্য লেখা টেখা পত্তে পারেন)– নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]
[…] ‘নয়নম্বর বাস’ থেকে ২য় অধ্যায়ের ২য় অংশ – এখানে […]
LikeLike