গানের ভেলায় বেলা অবেলায় : রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত অনুভব – অনির্বাণ সরকার

১.

জীবনসায়াহ্নে তিনি বলেছিলেন-

জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি অনেক। সব ফসলই যে সরাইতে জমা হবে বলতে পারিনে। কিছু ইদুঁরে খাবে, তবু বাকি থাকবে কিছু। জোর করে বলা যায় না, যুগ বদলায়, কাল বদলায়, তার সঙ্গে সব কিছুই তো বদলায়। তবে সবচেয়ে স্থায়ী হবে আমার গান, এটা জোর করে বলতে পারি। বিশেষ করে বাঙালীরা, শোকে-দুঃখে, সুখে-আনন্দে, আমার গান না গেয়ে তাঁদের উপায় নেই। যুগে যুগে এ গান তাঁদের গাইতেই হবে”।

রবীন্দ্রনাথের এ-কথা কি সত্যি হয়নি? বাঙালীর হৃদয়-মস্তিষ্কের গভীর-গোপন অনুভূতি তাঁর মতো এমন করে কে আর ভাষায় ও সুরে প্রকাশ করতে পেরেছেন? হঠাৎ হঠাৎ তাঁর এক একটি গানের কথা যখন ভেসে আসে কানে; মনে হয়- “ঠিক এ কথাটিই তো আমি বলতে চেয়েছিলাম!” এই যে গানের বাণী নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভব, এই যে রবীন্দ্রনাথের কথাকে নিজের কথা ভেবে নেয়া- রবীন্দ্র-জাদু তো এখানেই!

2363247833_d7957cf41d_b
রবীন্দ্রনাথ: বাঙালির গানের ‘প্রতিদিনের সূর্য’ ; প্রাপ্তিসূত্র – https://c1.staticflickr.com/3/2026/2363247833_d7957cf41d_b.jpg

২.

এ লেখার ছোট্ট পরিসরে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে খুব বেশি কথা বলবার সুযোগ আমার নেই। তাই প্রয়াসী হলাম রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে আমার স্বল্প কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের জানাতে। যদিও এতেও বিপদ কম নয়; কারণ- এক ‘গীতবিতান’ পড়ে উঠতেই তো অনেকটা সময় লেগে যাবার কথা; আর শুধু যদি কবিতা হিসেবেও পড়ি, তাতেও দেখা যাবে- বয়স বাড়ার সাথে সাথে গীতবিতানের গানগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যঞ্জনা নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে।

শ্রুতি-অভিজ্ঞতা বলা চলবে কি? তবে বলি- আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকে যে গান আমি সবচে বেশি শুনেছি- সেটি রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং পঞ্চাশ-ষাট দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের গান; পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ দু’ জায়গারই। মনে পড়ে- ভোরবেলায় আমাদের বাড়ির প্রতিদিনের দৃশ্য ছিলো প্রায় এ রকম- বাড়ির সবাই কাজ করছে, আমি স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছি, আর টেপ-রেকর্ডার থেকে ভেসে আসছে হেমন্তের ভরাট কণ্ঠ- “আজি শরত-তপনে প্রভাত-স্বপনে কি জানি পরান কি যে চায়” কিংবা সন্ধ্যা’র কিন্নর গলা- “ এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার।” ওগুলো ছিলো অভ্যেসের মতো, প্রতিদিন, সবসময়। পড়তে শেখার শুরুর দিনগুলোতে অন্য সব শিশুর মতো ছাপা অক্ষর যেখানেই পেতাম, পড়ে নিতাম। বাবার কাছে দেখেছিলাম অনেক বইয়ের মাঝে ঢাউস দুটো বই; ও দুটো প্রায়ই খুলে বসে থাকতাম, পড়তে চাইতাম, না বুঝেও। বই দুটো ছিলো ‘গল্পগুচ্ছ’ আর ‘গীতবিতান’। আমি জানতাম না- যে গান শোনা যায় টেপে, সেটি ছাপাতেও থাকতে পারে। হাস্যকর শোনালেও এই ছিলো আমার ধারণা। তাই যেদিন ‘গীতবিতান’ খুলে বাবা দেখিয়ে দিলেন- এখন টেপে যে গানটি বাজছে, সেটি ছাপা রয়েছে এবং যা শুনছি- বইয়ের পাতায় হুবুহু রয়েছে তাই; গানটির কথা মনে না থাকলেও আমার স্পষ্ট মনে পড়ে- সেদিন আমার শিশুমনের বিস্ময় আমি লুকোতে পারিনি। বাড়ির দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের একটি বাঁধানো ছবি ছিলো; জানতাম এঁর নাম রবীন্দ্রনাথ; কিন্তু সেদিন তাঁর নতুন পরিচয় জানবার পর তাঁকে মনে হয়েছিলো জাদুকর (অবশ্য রবীন্দ্রনাথকে আজও আমি জাদুকরই মনে করি)। এরপর থেকে আমার কাজ হয়ে দাঁড়ালো- রবীন্দ্রসঙ্গীত কোথাও বাজলেই ‘গীতবিতান’ খুলে বসা। তারপর গানটি খুঁজে বের করা, শোনার সাথে লেখার মিল পেয়ে আনন্দে অভিভূত হওয়া। আজ ভাবলে অবাক লাগে- অভিধান দেখতে শেখার আগে আমি ‘গীতবিতান’ থেকে গান খুঁজে নিতে শিখেছিলাম! (মনে পড়েছে- বইটি ঠিক ‘গীতবিতান ছিলো না; ছিলো- ‘ঝিনুক প্রকাশনী’র রবীন্দ্র-রচনাবলীর একটি খণ্ড, যার মাঝে ‘গীতবিতান’-এর সাথে রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য সমস্ত গান, গীতিনাট্য- এগুলোও ছিলো।)

দিন যাবার সাথে সাথে রাজারা এলো দল বেঁধে, যেখানে আমিও ছিলাম (‘আমরা সবাই রাজা’);…. এলো মনে মনে হারিয়ে যাবার আমন্ত্রণ (‘কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা’)। গল্পগুচ্ছে সুবল আর সুশীল অদ্ভুত সব কাণ্ড করে চলেছে (ইচ্ছাপূরণ), রতনের দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায় (পোস্টমাস্টার)…আর ওদিকে “আমার এ ঘর বহু যতন করে, ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে”-র বেদনা না বুঝলেও “আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে”-র সুরে গভীর অরণ্যে জোছনা দেখবার বাসনায় আপ্লুত হচ্ছি ‘গীতবিতান’-এর পাতার সীমানা ছাড়িয়ে।

৩.

তাই সদ্য-কৈশোরে মা’র ইচ্ছেয় যখন ‘ছায়ানট’-এ গেলাম গান শিখতে, তখন শুধু মনে হতো- কবে মনপ্রাণ ঢেলে দেবো রবীন্দ্রসঙ্গীতে। ছায়ানটে যারা গান শিখতে যায়- তাদের সম্পূর্ণ কোর্সটি আট বছরের। ‘শিশু’ শ্রেণীর পর ‘প্রারম্ভিক ক’, তারপর ‘প্রারম্ভিক খ’। তিন শ্রেণীতেই সারগাম শেখানোর পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল-গীতি আর পল্লিগীতির আলাদা আলাদা ক্লাস হতো। এই তিনটি বছরের পর প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষ একটানা পাঁচ বছর যার যার ইচ্ছেমতো রবীন্দ্র, নজরুল কিংবা পল্লিগীতিতে শিক্ষাগ্রহণ। শিশু-শ্রেণী বাদ দিয়ে সরাসরি ভর্তি হয়েছিলাম প্রারম্ভিক ক-তে, যখন পড়ি ক্লাস সিক্সে, যখন আমার বয়স এগারো। ছায়ানট তখনো নিজস্ব ভবনে যায়নি; বৃহস্পতিবার বিকেলে আর শুক্রবার সকালে ক্লাস হতো ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে।

ছায়ানটে যাবার প্রথম দিন থেকেই দেখতে পেলাম এক ছোটখাট কর্মচঞ্চল মানুষকে; তিনি বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীতের মানব-প্রতিষ্ঠান সনজীদা খাতুন। সাথে পেলাম ওয়াহিদুল হককে। তাঁদের সন্তান পার্থ তানভীর আর পুত্রবধূ তানিয়া (তখনো অবশ্য তাঁদের বিয়ে হয়নি) ছিলেন শুরুর দিকে আমাদের শিক্ষক। ওদিকে সোহরাব হোসেন, নাসিমা শাহীন আর খায়রুল আনাম শাকিল-এঁরা ছিলেন নজরুল-গীতি বিভাগে। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো আবদুল ওয়াদুদ স্যারকে- ক্লাসে তাঁর খোলা, ভরাট গলায় ‘প্রাণে গান নাই মিছে তাই ফিরিনু যে’ শোনা ছিলো এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। ওয়াহিদুল হক স্যারের গাওয়া ‘কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ় মেঘের ছায়া ফেলে’ আমাকে টেপে শোনা শান্তিদেব ঘোষকেই মনে করিয়ে দিতো।

প্রারম্ভিক দুই শ্রেণীর পর রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু করলাম। সারগাম আর ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের ক্লাস ভালো লাগতো না… চাইতাম কখন শুরু হবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্লাস। অথচ গলা তৈরি না হলে কি আর গান হয়? অতশত বুঝতে ইচ্ছে করতো না; কোরাসে ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে’ কিংবা ‘আষাঢ় কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া’ গাইবার মাঝে যে আনন্দ পেতাম, তার সাথে কোনকিছুরই তুলনা চলে না।

প্রথমবার প্রথম বর্ষ পর্যন্ত; এরপর বিরতি। আবারো ছায়ানটে ফিরে এসে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত ছিলাম। এরপর মেডিকেল কলেজে পড়তে চলে যাই সিলেট; ছায়ানটের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। গোপন দুঃখ রয়ে গেলো- মাত্র দুটি বছরের জন্য ছায়ানটের কোর্স শেষ করতে পারিনি।

৪.

শিল্পীদের অভিজাত আসরে আমার নিমন্ত্রণ না হলেও কিছু শিল্পী আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন। তাঁরা আজও আমার নিত্য-সহচর। তাঁদের কয়েকজনের কথা বলি।

রুচির ভিন্নতা থাকতেই পারে; আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের গানের শেষ কথা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কণ্ঠ কতটুকু পরিশিলীত হতে পারে, কতটুকু দার্ঢ্য থাকতে পারে একটি পুরুষ-কণ্ঠের গানে- এটি কি হেমন্তের গান না শুনলে বোঝা সম্ভব?

Hemantda
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ; প্রাপ্তিসূত্র – https://upload.wikimedia.org/wikipedia/bn/thumb/e/e3/Hemantda.jpg/220px-Hemantda.jpg

হেমন্ত যখন গেয়ে ওঠেন- ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’- তখন বিস্ময় নিয়ে ভাবি- এ কি মানুষের কণ্ঠ না কিন্নর-কণ্ঠ? বিশেষ করে ‘চিহ্ন’ শব্দে তাঁর ‘হ্ন’ উচ্চারণ এমন নিঁখুত, এমনটি আর কোথাও পাইনি। তাই যখন রবীন্দ্রনাথের চারটি গীতিনাট্যের একটি সেট আমার হাতে আসে, এবং দেখি প্রতিটিতেই হেমন্ত প্রধান ভূমিকায়, তখন একটুও অবাক হইনি। এইচএমভি থেকে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষে এই রেকর্ডগুলো বেরিয়েছিলো (১৯৬১-তে); আর প্রতিটিই সংগ্রহে রাখবার মতো। ‘শ্যামা’য় বজ্রসেন, ‘শাপমোচন’-এ অরুণেশ্বর, ‘চণ্ডালিকা’য় আনন্দ আর ‘চিত্রাঙ্গদা’য় অর্জুন- হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রতিটি ভূমিকাই তাঁর কণ্ঠমাধুর্য দিয়ে পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।

রবীন্দ্রনাথের কিছু গান মনে হয় কিছু শিল্পীর জন্যেই সৃষ্টি হয়েছিলো। ‘প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে’ আর ‘দখিন হাওয়া জাগো জাগো’ এমনই দুটি গান- যেগুলোর আবেদন পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়-এর গলায়।

image_17547.index
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.kalerkantho.com/assets/news_images/2013/11/02/image_17547.index.jpg

আমার দুর্লভ সৌভাগ্য হয়েছিলো তাঁর গান সামনাসামনি শোনার; ‘বিরস দিন বিরল কাজ’ আর ‘নয় নয় এ মধুর খেলা’- এই দুটি গান গেয়েছিলেন তিনি ঢাকার এক অনুষ্ঠানে- বয়সের ছাপ কণ্ঠে কিছুটা পড়লেও আভিজাত্য একটুও কমেনি।

কণ্ঠ গম্ভীর নয় মোটেও, কিন্তু অন্যরকম আবেদন পেয়েছি চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের গলায়- কেমন যেন এক হাহাকার-ভরা কণ্ঠ… মনকে উদাস করে দেয়। কোনো আনন্দ-আসরে হঠাৎ আনমনা হয়ে গেলে মনে পড়ে ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, তবু প্রাণ কেন কাঁদে রে’ আর স্মৃতি থেকে শুনতে পাই চিন্ময়ের গলা।

u41066_650449_666900
চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.beshto.com/beshtoImages/photoShare/d535/u41066/u41066_650449_666900.jpg

রবীন্দ্রনাথের গানের প্রথম বিদ্রোহী শিল্পী সম্ভবত দেবব্রত বিশ্বাস। বিভিন্ন লেখায় পড়েছি- দেবব্রত বা জর্জদা কথা বলতেন খাস বাঙাল ভাষায়; কিন্ত তাঁর গান শুনে কখনো বুঝতে পারিনি। রবীন্দ্রনাথের গানের কম্পোজিশনে তিনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন; তাঁর কণ্ঠে ‘তোরা যে যা বলিস ভাই’ কিংবা ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ শুনলেই সেটি বোঝা যায়।

hqdefault
দেবব্রত বিশ্বাস ; প্রাপ্তিসূত্র – https://i.ytimg.com/vi/PHdVyB_BCOI/hqdefault.jpg

নিরীক্ষাধর্মী কম্পোজিশনের কারণে দেবব্রতকে চরম-মূল্য দিতে হয়েছিলো; বিশ্বভারতীর নির্দেশে তিনি দীর্ঘদিন আকাশবাণীতে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে পারেননি; বের করতে পারেননি কোনো রেকর্ড। ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত’ নামের বইটিতে দেবব্রত সেই ঘটনারই বয়ান করেছেন।

আকাশবাণীতে আর একজন শিল্পী প্রায় ছ’বছর অবাঞ্ছিত ছিলেন। তিনি সুচিত্রা মিত্র। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে ব্যঙ্গের উপাদান ছিলো তাঁর গাওয়া গানে- এমন একটি অভিযোগে তাঁকে আকাশবাণীতে গাইতে দেয়া হয়নি দীর্ঘদিন।

Suchitra_Mitra
সুচিত্রা মিত্র ; প্রাপ্তিসূত্র – https://en.wikipedia.org/wiki/File:Suchitra_Mitra.jpg

সুচিত্রা মিত্রের গান শুনে আমার সবসময়ই মনে হয়েছে- নারীকণ্ঠের গানের এমন দৃঢ়তা আর বোধহয় কখনোই আসবে না। তাঁর গলায় ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ় তোমার মালা’ আর ‘ওই আসনতলের মাটির পরে লুটিয়ে রবো’- গানদুটির বড় ভক্ত আমি।

সুচিত্রা মিত্র যদি হন রবীন্দ্রনাথের গানের গাম্ভীর্যের ঈশ্বরী, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় তবে আত্মনিবেদনের সম্রাজ্ঞী। তাঁর কণ্ঠে ‘ও যে মানে না মানা’ আর ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ যে না শুনেছে- তাকে আমার বঞ্চিতই মনে হয়।

Kanika_Banerjee_-_from_Commons
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ; প্রাপ্তিসূত্র – https://en.wikipedia.org/wiki/File:Kanika_Banerjee_-_from_Commons.png

রবীন্দ্রনাথের গানে বাংলাদেশের কাদেরী কিবরিয়া আমার আর একজন প্রিয় শিল্পী। প্রবাসী হয়ে যাবার কারণে পাদপ্রদীপের আলো থেকে তিনি এখন অনেকটাই দূরে সরে গেছেন; তবে তাঁর ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ রেকর্ডে শোনেনি- এমন বাঙালী কমই আছে। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ কিংবা ‘এই লভিনু সঙ্গ তব’ গান দুটি আমার যখনই শুনতে ইচ্ছে করে, আমি কাদেরী কিবরিয়ার কণ্ঠেই শুনি।

kad
কাদেরী কিবরিয়া ; প্রাপ্তিসূত্র – https://i.ytimg.com/vi/Ng2RtHAGsTA/hqdefault.jpg

৫.

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভবের বয়ান এখানেই শেষ করছি। আসলে ভাষা বা লেখার সীমানায় এই গভীর অনুভব প্রকাশ করা অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথের গানের প্রিয় শিল্পীদের তালিকাও দীর্ঘ; তাঁদের অল্প কয়েকজনের কথাই শুধু এখানে লিখলাম।

দুঃখ লাগে, ক্ষোভ হয়- যখন দেখি আধুনিকতার নামে ভুল সুরে, বিকৃত উচ্চারণে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া হচ্ছে আর এসব গানকে পরিবেশন করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় সব যন্ত্রানুষঙ্গ-সহযোগে। কেবল আশাই করতে পারি- এসব অনাচার বন্ধ হবে; রবীন্দ্রনাথের গানের সঠিক চর্চা অব্যাহত থাকবে।



 

1658481_10201985817580152_576365803_o

[ অনির্বাণ সরকার – চিকিৎসক, লেখক। গান করেন। মাঝে মাঝে অদ্ভুত চিল্লানি দিয়ে বিশ্বজগতের প্রতি তার বিস্ময় প্রকাশ করেন। চা-এ ডুবিয়ে কলা খান কখনো কখনো। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

 

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s