আক্কেল-পছন্দ
“দয়া করে বসিয়া প্রস্রাব করুন”।
৪০/কে আজিমপুর বাসার বাথরুমের দরজায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা এই নোটিশ টানান হইছিল বেআক্কেল লোকদের জন্য। আজিমপুরের গৃহকর্ত্রীর বাথরুম-(শুচি)বাই আছে। বাথরুম হতে হবে ঝকঝকা তকতকা শুকনা খটখটা। গাছ থাকবে। মাঝে মাঝে সুগন্ধি পারফিউম(গায়ে মাখার) ছিটান হবে। সেই বাথরুমে উল্টায় রাখা বালতির উপর টুথব্রাশ হাতে বসে বসে ঘুমায় সকালটা শুরু হইত। স্কুলে যাওয়ার আগে দরজায় দুড়ুম দুড়ুম বারি দিয়ে বের করা হতো । সেই থেকে নিজে পরিষ্কার করি বা না করি, পরিষ্কার বাথরুম না হলে বসে বসে ফোন টেপাটেপি করতে পারি না।
পুরান উদয়ন স্কুলের টয়লেটটা ছিল রূপকথার বইয়ে বর্ণনা করা নরকের মতন। নতুন স্কুলের টয়লেট নতুন থাকা অবস্থায় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেশ গল্প করা যেত। সেভেন-এইটে পড়ার সময় মেয়েরা দলবেঁধে বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে ঠ্যালাঠেলি করে, সামনের দিকে স্টেপ করে কাটা চুল, ফুলায় সেট করতো। নাইন টেনে উঠতে উঠতে সেখানে আর ঢোকার মতন অবস্থা থাকল না। ভিকারুন্নেসার বাথরুমে গিয়ে বুঝতে পারসি ‘মেয়েরা যে কি পরিমাণ নোংরা হতে পারে’! ইউনিভার্সিটি পড়তে ৫ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে আজিমপুর বাসায় যেতাম খালি বাথরুম করতে। ২০০৬ সালে বন্ধুদের সাথে বাসে করে গেলাম নেপাল। বাস যখন উঁচানিচা পথে দার্জিলিং থেকে কাঠমুন্ডু যাচ্ছিল একসময় গভীর রাতে বিরতি নিতে থামা হয় কোন এক ধাবায়। সেই ধাবার কাছে ভাঙ্গাচোরা, আলো ছাড়া দুইটা ‘যায়-খানা’ ছিল। এক লোক সমানে চেঁচায় যাচ্ছিল “ছোটে কামকে লিয়ে এক রুপিয়া, বাড়ে কামকে লিয়ে দো’ রুপিয়া”। আমার এক বন্ধু(মানিক) বললো – “নদু, যাইস না, রুটি ভাজি যা খাইসিস উগরায় দিবি”। এক নম্বর দরকার থাকায় না গিয়ে উপায় ছিল না। গিয়ে দেখি মানুষ মহাসুখে দো’ রুপিয়ার বাড়া কাম করে রেখে চলে গেছে। এর বছর সাতেক পরে ইংল্যন্ডে এসে জীবনে প্রথম হোস্টেলে থাকার সুযোগ হলো। হোস্টেলে বাথরুম ও মানুষের অনুপাত ছিল ১:১০। হোস্টেল ভর্তি ছিল এক বিশেষ দেশের বিশিষ্ট ছাত্র–ছাত্রী, যারা চাংচুং করে কথা বলে। সেই ১:১০ বাথরুমে ঢোকার আগে দোয়া পড়ে বুকে ফু দিতাম। একদিন এক বন্ধু(রিশাদ)কে ব্যপারটা বললাম, ওর আবার চৈনিক দেশে থাকার অভিজ্ঞতা আছে। রিশাদ বললো চৈনিক দেশে অনেক জায়গায়ই ফ্ল্যাশ করার কোন ব্যবস্থা নাই। ওরা আরাম করে ‘ছোটে কাম-বাড়ে কাম’ করে চলে যায়, ঘণ্টায় একবার দৈব উপায়ে ফ্ল্যাশ হয় (কেউ এসে হয়ত পরিষ্কার করে)। তাই হয়ত চ্যাংচুংরা ফ্ল্যাশওয়ালা টয়লেটের দেশে পড়ালেখা করতে এসেও চৈনিক সংস্কৃতি বজায় রাখসে। খুব ইচ্ছা হয় একটা নোটিশ ঝুলাই – “দয়া করে ছোটি কাম বাড়ে কাম করিয়া ফ্ল্যাশ চাপুন”।
মানুষ তো মানুষ! পশু-পাখিদেরও কেমন আমাকে দেখলেই পেট মোচর দেয়। সেই ছোটবেলায় চিড়িয়াখানায় হাতি দেখতে গেসি। হাতিশালার হাতির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইয়া ভীমা ভীমা সাইজের জিনিস পিছন দিয়ে ফেলতে ফেলতে যাচ্ছিল। ছোট্ট আমার মনে হইসে যাক বাবা আমি হাতির সাইজের না, নইলে আমার গুও..! একবার কিশোরবেলায় ছেলেবন্ধুর হাত ধরে সলিমুল্লাহ হলের সামনের ছায়াবিথী দিয়ে হাঁটতেসিলাম, মারাত্মক রসিক এক পাখির বিষ্ঠা একদম লক্ষ্যভেদী নিশানায় আমাদের দুইজনের হাতের বন্ধনের ভিতরে এসে পড়ল। অজ্ঞেয়বাদী আমি বিষ্ঠা মেশান হাতের তালুর দিকে কিছুক্ষণ তাকায় থেকে কিশোরবেলার প্রেমের ইতি টানলাম। এই ধারায় যৌবনকালেও পাখিরা অসংখ্যবার আমার মাথায়-ঘাড়ে-পিঠে তাদের সুখের কাজটা সারসে। এমনকি এই বিদেশ বিভুঁইয়েও কপালের দোষ গেল না! গতকালকে লাইব্রেরিতে যাচ্ছি। এই উত্তরের শীতল দেশে বসন্ত আসবো আসবো করছে। এক সপ্তাহ পরে ঝলমলা রোদ। বহুদিন বরফে গাছপালা ঢাকা পড়ে ছিল। পশুপাখি আগারে বাগারে খাবার খুঁজে পাইসে কি পায় নাই! এখন বরফ গলে কাদা কাদা অবস্থা। কাদা বাঁচায় শর্টকাট পথে একটা গাছের তলদিয়ে লাইব্রেরির গেটের দিকে যাচ্ছি, অমনি চশমার উপর অঘটন ঘটল। উপরে তাকায় চশমার ঘোলা কাচের ভিতর দিয়ে কিন্তু কোন বেত্তমিজ পাখি দেখতে পেলাম না। রাগে গড়গড় করতে করতে বজ্জাতটাকে অভিশাপ দিলাম: ‘পরের শীতে নিজের গু নিজে খাবি রে হারামজাদা’।
[ নন্দিতা ফরহাদ – উচ্চশিক্ষার্থে বিদাশে আছেন। আইলসা। ভাত পুড়াইয়া কটকটি বানিয়ে চামচ দিয়া খান। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]