নিষ্কাম অবকাশ
তিক্ত রোদের পরে বিভোর রাতটুকু এসে
দিনের রিক্ত শীতল সূর্যের বিদ্বেষে
বেঁধেছে বিদ্রোহী মদ্যপ আসর
সঙ্গে আঁধার স্যাঙাতেরা বাদ্যে এলোমেলো ছড়
চালায় অবিরত কর্কশ ধ্বনিতে
খন্ড অমরতা’র মৃদু মৃদু আলো সচকিতে
কুঞ্চিত আকাশের কৃষ্ণ মৃত্যুর গায়ে
দুলছে ফুলের মত……পায়ে পায়ে
জড়ানো মথিত মাটির শেকলে
চেয়ে চেয়ে দেখেছি – নির্মেঘ টলটলে
( গতায়ু শীর্ণ সুরা ) নিদ্রিত আদিমতা’র মত
ঢেকেছে মেঘের স্বর ! নির্জলা আলো আনত
অধোমুখী- যেন হতশ্রী প্রণয় ! !
যেন……রিক্ত বিদ্বেষী প্রণয় ! !
_____
রোদ-শিল্প-মৃত্যু
শায়িত প্রহরী’র মত নিভন্ত উত্তাপে
শীতের রোদ এসে জবুথবু কাঁপে
এইখানে- করুণ সবুজ ঘাসে
যে শ্রীমন্ত মৃত্যুর পরবাসে
প্রোথিত জন্মের পাখা__
উড়ে চলে- ছাই মাখা
ভগ্ন হৃদয় দেখে…
বিলুপ্ত পরলোকের দিকে চোখ রেখে
আবার রৌদ্রে ফেরে, আবার !
আকুতি যেন স্বপ্নেই ফিরে পাবার
শিল্পিত বাদ্যের কলতান !! কাজে-অকাজে
নিছক গম্ভীর স্বরে বাজে
প্রতীকী মৃত্যুর পরবাসে,
আর প্রকৃত মৃত্যুর পরবাসে ।
______
প্রিয়তমা পাপ-৩
ব্যর্থ মৃত্যুর ছুরিকা অলক্ষ্য অভিচারে
জেগেছিলে ‘মিথ্যে’র চেয়ে মোহনীয় প্রকারে
নিভাতে একদন্ড আলো……
এক বছর আগে । ক্রুরময়ী চোখজুড়ে সূঁচালো
বিদেহী প্রেমের ভস্ম, ( ধূসর জলছাপ ) !
জ্বলেছ তবু স্বকৃত আগুনে, প্রিয়তমা পাপ ।।
তটস্থ অতীত তার ভ্রান্ত বৈরাগ্যের মোহে
ছিনিয়ে রূপের দ্যুতি দম্ভজ বিদ্রোহে
সেজেছিলে রক্তস্ব মাংসাশী__-
ক্ষুধার্ত মিনতি’র আড়ালে খনখনে অট্টহাসি
মুখজুড়ে তোমার লোকোত্তর শোকগীতি’র আলাপ
পারো নি তবু ছুঁতে আমাকে, প্রিয়তমা পাপ ।।
______
সেইসব খুনে অশ্বারোহী
কখনও ধুলোর ঝড়ে
ধূসর ঘোড়ার পিঠে আরোহী’র উপরে
নেমেছে আঁধারের শমন
শমনে মৃত্যু লেখা নেই, শুধু রক্ত-পণ
ক্ষোভের অক্ষরে যেন –
খোদিত নিঃসাড় দেহে; আঙুলের ছোঁয়ায় কেন
আগ্নেয় মৃত্যু ফোটে ?
-জানবে না আরোহী, নির্লোভ দিগন্তে ছোটে
কি গভীর রক্তছটা……
অসুখে ঘোর লাগা চোখের তারা ক’টা
ছদ্ম মদ্যপ ! অস্ফুট বলে
নির্জ্ঞান জীবনের গল্প, গল্পের চাতুরীর ছলে
ভাঙে শমনের ভয় !
শমন __ – জীবনের, তবু পার্থিব নয়।
______
প্রত্ন-দ্বৈরথের আড়ালে
অসমাপ্ত গল্পের আঁধারে
উদ্ধত সান্ত্রীরা যেন দূরারুঢ় সারে
বাতাসে জাগানো ত্রাসের আলাপে
অথবা শতাব্দী-প্রাচীন পাপে-
…পাপ, পুণ্য নয় ! অন্যায্য যে পিপাসা
ওদের রক্তের গভীর থেকে আসা
পৈশাচিক অক্লান্তি আনে –
তা-ই আজ রক্তস্ব কাতরতার মানে
পাল্টেছে সুস্বপ্নের দ্রোহ ক্রোধচ্ছলে
অমোঘ বকধর্ম !…… নির্মম বাহুবলে
আঘাতের পর আঘাত। পবিত্র (!) অন্তিম
যুদ্ধের ডঙ্কা বাজায়– রক্ত হিম
রণাঙ্গনে ছাই ওড়ায় পূত-জ্ঞানী-
পৈশাচিক অক্লান্তি তার; এমনি
জিঘাংসা ওদের, যেন মাটির শরীরে
রাখবে না রক্ত আর; ওদের গভীরে
এমনই রক্ত-কাতরতা এক ।।

[ তমাল তমসূদন – আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-এ পড়াশুনা করেছেন; নিবাস – মিরপুর, ঢাকা ]