নীরব ষাটফিটের ডুয়েল – আজমাঈন তূর হক ও সায়েম রুম্মান

নীরব ষাটফিটের ডুয়েল

আজমাঈন তূর হক- অংশ

অরাজ

নির্জন

উপরন্তু গোপন

সংকেত

আহত ধানক্ষেত

বন্দুক

নির্লিপ্ত লোডেড

হিমহ্রদ,

সন্ধ্যা নিয়ে পাশে

তোমার

চোখ বুজে আসে

সন্ন্যাসে

গরম সন্ত্রাসে

অরণ্য

তোমার জন্য

শান্তি পাঠাক

তপ্ত ধানক্ষেত

প্রেমে,

আরো পুড়ে যাক…

ম্রিয়মাণ সময়, আলো

অশ্রুহীন ভালো লাগে অনেক মেঘের ছায়াদিন

যখন গায়েবী আলো কতো সিঁড়ি ভেঙে
শঙ্খচিল আর্দ্রতায় তোমার মুখের পাশে পড়ে।

মৃতমুখ দেখে এসে হলুদ আনন্দ, মোহ জাগে  
শত্রুতা যজ্ঞের মতো পবিত্র ভাবের ভূমিজোড়া
প্রয়োজন নেই আর। এখন সন্ধ্যার গভীরের
পাহাড় আলো-পরিবর্তনে বারবার কমলারঙ
থেকে না ফেরার ডুবে থাকা রঙে মিশে যাক।
স্মৃতি ভেঙে যদি পড়ে বনেটের হিম উষ্ণতার
মাঝে- সমুদ্রের পথ আরো তরল নীরব থাকে বাকি রাত।

ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন

শিয়া মসজিদের রাস্তায়
সন্ধ্যা খুব জমে যাচ্ছে রমজান মাসের;
হলুদনীল ঈদের বাজারে, ঝালরে গরম আর
রাস্তার ঈষৎ বক্রতায়।

জন্মদিনের স্বভাবে
তার চোখে ক্লান্তি আর গীটারের সাদাসাদা
শান্ত-একটা ভাব নেমে আসে,
সিগ্রেটে গাঢ়
হয়ে বৃষ্টির মতো নেমে আসে ভালোবাসা।
এরকম বড় বড় অরণ্যে
শহরের মতো একটা
আলগা ভাব লেগে থাকলেও
রিক্সায় উঠতে গিয়ে এখন
একটা সুরভরা শিশুর
মাথাদোলানো আনন্দ ঝরলো
তার চোখে

জার্নাল

রাস্তায় জমেছে পানি, স্বচ্ছ
নিচের কংক্রিট দেখে মনে করা গেলো
আশ্চর্য বিগত এক ভ্রমণপর্যায়।

মেঘলা সিঁড়িঘরে ঘামে
আরো আরো সঙ্গোপনে চাদরের মতো,
বৃষ্টি-মতো কোন রঙ নদীর বাঁক পড়েছে-
যেমন স্পর্শ করে আছে আনন্দ সব
ফুটপাথে বাদামের খোসা খোসা সন্দেহময় সম্পর্ক;

কাপড়ের ভাঁজে অথবা পেপারব্যাকে
সন্ধ্যামতো জমে গেলে তবু-
সুর ভিজেছে রাস্তায়, নিচের পাথর
মেঘলাদিনে ঘামে
অম্ল-নম্র মন ছিল-
ফুয়েল বিরহমেশিনের।   

স্থিতি

ভাঙ্গাব্রিজের কিনারে বসে এক মৃত বুড়ালোকের গান, তার শীতল, একটানা হঠাৎবিচ্ছিন্ন বাদ্য মনে পড়ে। পাখির সরব উড়ে যাওয়ার সাথে করে উড়ে আসে পাথরের দৃষ্টি থেকে, ঘোলাটেপনা থেকে অজস্র পয়সার ঝরে যাওয়ার ধ্বনি।

জ্বরতপ্ত বরফ, তার মায়া গলে গলে যায় আজ- সেই একই মুখমণ্ডল, চেনা পানির দাগ, অবনীল আভা। সাইকেল থেকে জন্ম নেওয়া কাঁটাকাঁটা বিকালের শরীরে কত ধু-ধু মাঠ, ধোঁয়া, কম্পিত চোখের ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে, বাকভঙ্গিতে বেঁকে যাচ্ছে এক হলুদ দালান-

-শুরু হচ্ছে কৃত্রিম ড্রামরোল, কারণ বসন্ত বিগতপ্রায়

-আমের মুকুল ঘিরে লাটিম,
আঁটকে থাকা মন- বালিকা বেলুন
আর দুপুর

-প্রত্যকে বিকালে বারান্দায় ভুল বুঝে টিনের চালে টুপটাপ রিক্ত-সন্ন্যাস

-আমি তথৈবচ বন্দুকপ্রবণ জেনেও তোমার পছন্দসই স্থিতির সকল অনুষঙ্গ, মিনেটরের নিপুণ গ্রন্থাগার 


সায়েম রুম্মান- অংশ

দ্বিধা

নৃত্যের মুদ্রায় ফুটে ওঠা অভিশপ্ত সাপ বেদনার গহন জঙ্গল বেয়ে উঠে আসে আমার বৃক্ষঘরে; কার্বলিক এসিড জারিত যন্ত্রণা যেন যিশুর ক্রুশের মতো আহ্বান করে মৃত্যুর নীল ক্যানভাসে যা ঝুলে রয়েছে বৃক্ষঘরের ডানপাশটিতে, আর বাঁপাশে শুয়ে এক কালো বিড়াল যার লোমশ অনুভব ছড়িয়ে পড়ে নিদ্রাতুর করুণ আর্তনাদ হয়ে; এ সাপ ও বেড়ালের ভয়ঙ্কর অগ্নিখেলায় দাউদাউ জ্বলে ওঠে আমার বৃক্ষঘর; শেকড়ে প্রোথিত স্বপ্নমূল উপড়ে আসে কাঠুরের সোনালি কুঠারে

আমার বৃক্ষঘর- কেঁপে কেঁপে ওঠে এ পাশবিক খেলায়; আমি আমার বৃক্ষঘরের একমাত্র বাসিন্দা যার পদতলে ক্রুসোর পদচ্ছাপহীন এক অপার্থিব ব্যর্থতার দায়; সে এগিয়ে চলে তার সকল দায়মোচনে, বেদনার বেহালা হাতে তুলে বাজাতে থাকে সিম্ফনি।

পুনরায় কেঁপে ওঠা ঘর, যেন এক টুকরো বৃষ্টি এসে নিভিয়ে দেয় সমস্ত আগুন কিংবা সমস্ত আগুন এসে সমর্পণ করে সে বৃষ্টির পদতলে; আমি বেদনায় পিয়ানোবাদক সমস্ত আগুনকে সঙ্গে নিয়ে হ্যামলিনের মতো এগিয়ে চলেছি সমুদ্র উপকুলে; এক পাশবিক হাসিতে চূর্ণ করি সমস্ত আগুন পাথর; অতঃপর সেই অগ্নিপাথরে একঢিলে চূর্ণ হলো আমার কাচের শরীর।

প্রেম

১.

প্রবঞ্চনার খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসা তোমার সত্তা

কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আমাদের দানাদার প্রেম; জলের প্রলাপ

বাঁধ ভেঙে যায় হিংস্র দাঁতালো দানবের হিংস্রতায়।

২.

শূন্যতার প্রান্তরে তোমার কৃত্রিম উপস্থিতি হার

মানায় সাম্রাজ্যের পতনকে, বরফের সকল জমাট

বাঁধা মায়া গলে গলে পড়ে শূন্যতার বিশাল সাগরে।

৩.

জানালার পারে বসে তরল ধবল জ্যোৎস্না

খাওয়া জোনাকির উদ্দাম নৃত্য দেখি আর

নিজের প্রতিবিম্বের ছায়া স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়।

৪.

আকাশের বাটিতে সাজানো মুখরোচক

নক্ষত্রের স্বাদ হেমলকের রসের মতো মনে হয়

আর আমি নীলাভ সক্রেটিস- পান করি মৃত্যুর সুরা।

সূর্যস্নান

অন্ধকার জরায়ুতে ভাসছে অদেখা মেঘমালা;
যেন বহুযুগ ধরে এগিয়ে যাওয়া পথিকের মতন
থেমে যায় ব্ল্যাকহোলের অতল গহ্বরের সামনে
যৌনতার প্রবল আকর্ষণে ছিন্নভিন্ন মেঘমালার শরীরের
প্রবল ঘামে সিক্ত জরায়ুর কোমল মাটি;
জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে হিমশীতল বাতাসের সর্বগ্রাসী কাঁপন
উৎফুল্ল মানবীর নাভিনিম্নে বয়ে যায় খরস্রোতা নদীর
প্রবল ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস; অন্ধকারের দাঁড়কাকের মতন কিংবা
কুয়াশার মাঝে একফোঁটা শিশিরের মতন হারিয়ে যাওয়া
হৃদয়ের জানালা খুলে দেখি- সেখানে শূন্যতার এক বিশাল মরুভূমিতে
হেঁটে যায় এক তৃষ্ণার্ত বালক; তার পিঠে বুলিয়ে দেওয়া
অগ্নিদেবতার হাত আর মেঘমালার বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায়
অ্যাপোলোর বিস্ময়কর রথ।

ছায়া ও কায়া

আমার জানালার কার্নিশে প্রতিরাতে উড়ে আসে এক নাইটিঙ্গেল পাখি, আর আমি ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মতো শুনে যাই তার হৃদয়ের আকুতিগুলো; কিন্তু ভোরের আলো পৌঁছতে না পৌঁছতেই আমার জানালা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া নাইটিঙ্গেলের আকুতি ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দেই প্রবল আক্রোশে; হৃদয়ের জলকণাগুলো হঠাৎ মেঘ হয়ে ভাসতে থাকে আমার হৃদযন্ত্রে; শহরের দাঁড়কাক হয়ে উড়ে যাই উচ্ছিষ্ট তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদের সন্ধানে।

প্রতিরাতে আবারো নেমে আসে আমার নাইটিঙ্গেল পাখি, যেনবা কর্পূরের মতো উবে যাওয়া মেঘগুলি আবার জড়ো হয়ে এক বিশাল জলকণায় পরিণত হয় আর আমার হৃদয়জুড়ে তখন রক্তক্ষরণের সাথে বৃষ্টি নামে; তৃষ্ণার্ত উটের মতন শুকনো তৃষিত মরুভূমি হয়ে ওঠে ফোঁটায় ফোঁটায় শিশিরে সিক্ত ভেজা মাটি আর আমার রঙিন কাপড়ে তখন জন্ম নিচ্ছে কিউপিডের বিশাল তীরে বিদ্ধ এক হৃদয়ের ছবি।   

evening-on-karl-johan-street-1892.jpg!Large
“ইভিনিং ইন কার্ল যোহান স্ট্রিট” – এডাভার্ড মুঙ্খ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.wikiart.org/en/edvard-munch/evening-on-karl-johan-street-1892


 

13823703_998446550270085_864053060_n
খাড়াইন্যা – আজমাঈন তূর হক, বসইন্যা – সায়েম রুম্মান। ফটো – মইনুল হোসেন ধ্রুব

[ আজমাঈন তূর হক – কবি, পাঠক। এইচ এস সি পরীক্ষা দিছেন।

সায়েম রুম্মান – কবি, পাঠক। এইচ এস সি পরীক্ষা দিছেন।

– নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

1 comments

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান