হাতিরপুলের মিশ্র শব্দ
হাতিরপুলের মিশ্র শব্দে
শ্যামা আপার রেওয়াজ শোনা যায়
রিকশা কাঁপছে
রিকশার গর্তে
শ্যামা আপার স্বর
হাতিরপুলের তামাটে উত্তেজনার পাশ দিয়ে
ধাপে ধাপে
যেন মগবাজারের কোনো বারান্দায়
মাড় দেয়া এক যুবতীর
শাড়ির আঁচলের দিকে
ভোরবেলার ধুলার মতো ভেসে যাচ্ছে…
সিএঞ্জিতে
আরো একবার এই তাড়াহুড়া আমি
তোমায় দেখাতে আগ্রহী
কষ্টা সিএঞ্জিতে
লাফাতে লাফাতে
সুস্থমতি বৃদ্ধ চালক;
পাকিস্তান আমলেও
বা তারও আগে থেকে
একই রকম বৃদ্ধ সে
লম্বা সিগন্যাল শেষে
আগাতেই হবে দেখে
গর্জে ওঠা জামে পুনরায়
সিগন্যাল পড়ে যাওয়া
কিন্নর, শান্ত এই
তাড়াহুড়া আমি
তোমাকে দেখাতে আগ্রহী।
শিশুপার্ক
আমরা বিবাহিত নই,
কিন্তু শিশুপার্কে গাঁদাফুল ফোটে
পুরুষটি কথা বলে শুকনা পুকুরে
বউ তার ভাত খায়
ও আমার বউ না,
তাও টিফিনকারিতে আনা তরকারি খায়
ছেলেটি ঘ্যান ঘ্যান করে।
মুখের উপর বৃহৎ চরকা –
একটা কোমর
ঘাড়
চোখগুলি যেন বিখ্যাত
একা একা দাঁড়িয়ে ছিল গাঁদাফুলের পাশে…
পরে চলে গেল।
ফাল্গুন
মাগরিবের আজান দিলো কেউ
রিকশায় বেল দিলো কেউ
এই দুই ব্যবস্থার মাঝে
নীলক্ষেতে
কুকুরটি কুকুরীতে
চড়ে বসে আগুয়ান হয়
মোটর মেকানিকের দোকানের সামনে
যন্ত্রাংশের দিকে।
একুশে ফেব্রুয়ারি
বিস্তীর্ণ টিনশেডের পাশে
গরু ঘাস খায়;
গরুটি বেঁধে রেখে
লুঙ্গি গুটিয়ে
কামিজ পরিহিতা যুবতীর
পেছন পেছন
ঘরের চিপায় ভেসে আসে
বদনা হাতে
পুরুষ।
পাড়ার স্কুল থেকে
মাইকে ভেসে আসে গান –
বাচ্চারা ভাষার গান গায়
লোকটা মেয়েটিকে কামড়ায়,
ঘরের চিপায়,
বদনা হাতে করে।
ভোরবেলা
ভোরবেলা হলো কিনা
মানুষ যখন স্বপ্ন দ্যাখে,
কাকগুলি ডাকে।
স্বপ্ন শব্দ করে
ইলেক্ট্রিক তারে সারি সারি
কিন্তু ভোরবেলা হলো
মানুষ যখন মামাবাড়ি যায়
বৃদ্ধা মামী কান্দে তার —
“আমি উঠি ছয়টায়।
হাঁটাহাঁটি করি। দুধ খাই। কবিতা ওঠে এর মাঝে।
এই ওই করে।
আমার ছেলের বাচ্চা আছে।
তোর মায়ে কান্দে না?
বড় হস নাই?
তোর কোনো লাভ-লোভ নাই?
বিয়া কইরা যা।
মায়ে কান্দে না?”
সময় চলে যায় কাকের, মানুষের
ভোরবেলা দ্রুত। অনেক দিনের জন্য।
মানুষ তার বৃদ্ধা মামীর দিকে
এমনি এমনি
নরম হাসি রেখে যায়

[ মেসবা আলম অর্ঘ্য : কবি, লেখক, প্রকৌশলী। ঢাকার পুলা, দেশের বাইরে থাকেন, বিদাশে। প্রকাশিত গ্রন্থ-গ্রন্থিকা – ‘আমি কাল রাতে কোথাও যাই নাই ’, ‘তোমার বন্ধুরা বনে চলে গেছে ’, ‘মেওয়াবনে গাণিতিক গাধা ’ এবং ‘তোমার সাথে আক্ষরিক ‘। – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]