[এক ভিডিও পারফরফেন্সে রনি আহম্মেদরে এক আর্ট-ক্রিটিক কী কী জানি জিগাইছিল, মেলা কঠিন শব্দ দিয়া। উত্তরে রনি কিছুক্ষণ কাশছিলেন খক খক কইরা, তারপর বিঠোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনির ‘ওড টু জয়’এর সুরে অপেরার ঢঙ্গে জবাব দিছিলেন, “আমার ছবি লাল হলো, সবুজ হলো, হলুদ হলো, তাতে বা কার কী আসে যায়, আবার তাতে তর বা কী! লা লা হি লা লা লা হি লা লা লা লা হি লা লা হি…”।
রনি আহম্মেদের সাম্প্রতিকতম প্রদর্শনীর(গডস এন্ড বীস্টস) ছবিগুলোতে উনারে উচ্চতাসাধক নীরবতার রাস্তায় পথ ধরসেন মনে হবে, মনে হওয়া এও সম্ভব যে, তাঁর সংগে অর্থবোধক বাক্য বিনিময় তথা যেকোনো প্রকার ভাববিনিময়ের উপায় শীঘ্র রহিত হবে, এবং তাঁর ছবির পুরানা ও ধারাবাহিক যেকোনো দর্শকের কাছে সমগ্র প্রপঞ্চটিই পূর্বনজিরশূন্য।
ফলে এই আলাপ একটি প্রয়োজনীয়, ইমার্জেন্সি ও বিশদ ডকুমেন্টেশন।
উত্তরাস্থিত রনি আহম্মেদের বাসায় ২৫-০৮-২০১৬ তারিখে এই সাক্ষাৎকার লইছেন মহসিন রাহুল (জেনো’স প্যারাডক্স) । ছবি আঁকেন, আড্ডা দেন, পেশায় চিকিৎসক।
বেশ লম্বা আলাপ। ধারাবাহিকভাবে নয় নাম্বার বাসে আমরা তা প্রকাশ করছি।
(প্রচুর হাসির আওয়াজ, বলা বাহুল্য, ছাপানো সম্ভব হয় নাই)।
-নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

মহসিন রাহুল– আনুষ্ঠানিক কিছু না। আপনার ছোটবেলার কথা বলেন। আচ্ছা, আপনি একবার বলসিলেন আড্ডায়, যে আপনি অটিস্টিক ছিলেন…
রনি আহম্মেদ – না না না, হাহাহা…
অটিস্টিক না, নরমালই ছিলাম। অন্যেরা অটিস্টিক ছিল। মানে পুরা জগতটাই অটিস্টিক ছিল। তো, আমি নরমাল ছিলাম।
ম – সেটাতো এক অর্থে আলঙ্কারিক কথা বললেন…
র – না, আলঙ্কারিক না…এটা…জগতটা সব সময় এক সাইডে কাজ করে না? ব্রেনের একটা সাইড কাজ করে, আরেকটা সাইড কাজ করে না। এটাই তো জগত। মানে..
ম – আপনার অবস্থান থেকে অন্যদেরকে অটিস্টিক লাগতো?….
র – আমাদের যে রিয়েল, মানে আমরা যে রিয়েলে থাকি, যে রিয়েলে আমাদেরকে রাখা হইসে – ওটা তো ইয়া না, মানে পূর্ণাঙ্গ না। এটা পূর্ণাঙ্গ, কিন্তু আমাদের ব্রেন তো পূর্ণাঙ্গ না। পূর্নাঙ্গ ওয়ার্ক করবে না তো। করলে তো সেটা সুপার হিউম্যান হয়ে যাবে। যদি করে। করে…কারো দ্বারা(হয়)..সাধকরা…ওরা ব্রেইনকে ঐ জায়গায় নিয়ে যায়। এটা যে কোন লাইনের সাধক হইতে পারে। তারপর..
ম – আপনার ছোটবেলার মেমোরি শুনতে চাইতেসি, বিল্ড আপের প্যাটার্নটা..
র – উমমম, ম্যাজিকাল। ঐটা ইয়ের মত, ড্রিমের মত একটা। মানে..
ম – ঢাকাতেই তো কাটসে, না?
র – হ্যাঁ, মগবাজারে। মানে ওটা একটা ইয়ে আরকি…..ধরেন লম্বা ড্রিম থাকে না? ঐরকম। ঐটা মেমোরিও না। আমার কাছে মনে হয় যে ওটা একটা স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গেছে। মানে, ইট ওয়াজন্ট… এখন মনে হয় যে ওটা রিয়েলও না। এইরকম মনে হয়। ঐটার সবকিছু ম্যাজিকাল ছিল। রিয়েলিটি একদম আলাদা ছিল। ঢাকা তখন নতুন গ্রো করতেসে। মানে আমার চোখে নতুন গ্রো করতেসে, বয়স হিসেবে। তার আগে তো করসেই। (হাসি) মানে এখন বুঝি যে তখনকার ঢাকা আর এখনকার ঢাকা…ইট’স…মানে, আরেকটা দেশ আরকি বলতে গেলে। এইরকম একটা…মানে এতই পার্থক্য। অন্য দেশে থাকলে যেমন লাগবে, তখনকার ঢাকা ছিল ঐরকম। তো, আমার কাছে ঐটা আরেকটা দেশ।
ম – কত সাল ঐটা? এরাউন্ড?
র – ঐটা তো ঐ যে, আমার মেমোরি আছে সেভেনটি-সেভেনের…ঐ সময়কার মেমোরি আছে। সেভেনটি-সেভেন…৭/৮ বছর বয়স হবে তখন। সেভেনটি-এইট-টেইট, এগুলার কিছু কিছু মেমোরি আছে। তারপর তো ৮৩ সালে উত্তরায় চলে আসছি। সেটাও একটা…সেটাও চাইল্ডহুডের অংশ, সেটাও ম্যাজিকাল। আর এটা ওরকম হওয়ার কথা এই কারণে যে, বাবা মা অনেক ফ্রেন্ডলি ছিল, মানে ইয়ে ছিল আরকি…ফ্রেন্ডলিও ঠিক না, মা তো মায়ের মতই, আর বাবা ছিল দার্শনিক টাইপের। তো, ঐ কারণে অনেক জিনিস…সে(বাবা) জগতে থাকতো আবার থাকতো না। সে খুবই রিয়েলিস্টিক ছিল, আবার একই সাথে সে অন্য জগতেও থাকতো। সেটা কী, আমি জানিনা, তবে তার ইয়োগিক প্র্যাকটিস ছিল…
ম – তাই? আপনার বাবার ছিল?
র – হুম। তারপর ক্লাসিকাল মিউজিকের বিরাট ভক্ত ছিল। সারাক্ষণ…ঐ…ঠুমরি…শুনতো, তারপর গজলও শুনতো। মানে, সবসময় মিউজিকের মধ্যে থাকতো, দেখসি। আর পড়তো প্রচুর। এইগুলা আমাকে ইন্সপায়ার করসে। আর আমার মামার ফ্যামিলি ছিল…মানে, মায়ের সাইডের…মামারা ছিল সবাই…ট্যালেন্টেড, জিনিয়াস টাইপের লোকজন। অলস, কিন্তু জিনিয়াস। এবং অলসতাটা উনাদের, আমিও পাইসি এইটা। আমি বিখ্যাত অলস লোক, নিজের কাছে। হেহে…
ম – হাহ হা, না, আমার কাছেও আপনাকে অলস মনে হয়…
র – হ্যাঁ। মানে, চরম আরকি। অন্য ধরণের। মানে, এইটার কোনও লেভেল নাই, এই অলসতার। আমার পাশেও যদি কোন একটা জিনিস পড়ে থাকে, যেটা উঠাতে হবে, ওটাও দেখা যাচ্ছে তিন সপ্তাহ পড়ে আছে। হেহেহে। ধরেন একটা ময়লা কাগজ পড়ে আছে, সেটা উঠাতেও আমার তিন সপ্তাহ লাগে। হেহেহে। কিন্তু আবার, (চায়ে চুমুক দেবার শব্দ, সুরুরুত) ইনার ওয়ার্ল্ডে,আমার মনে হয়, আমার স্পিড, লাইটের মত। ঐটা চলতে থাকে। ঐ জন্যে মনে হয়, আমার বডিটা ইনএকটিভ থাকে।
ম – আপনি আঁকা যখন শুরু করেন, একেবারে ছোটবেলায়ই তো শুরু করসিলেন…
র – হ্যাঁ?
ম – কেউ শিখাইতো? বা কখনো কোন স্কুলে…বা ড্রইং টিচারের কাছে শিখছেন কখনো…
র – না না
ম – নিজেই?
র – নিজেই। ঐ যে কয়দিন আগে একটা এলবাম-কভার দিলাম না? নাইনটিন নাইন্টিতে করা…নব্বই সালের…
ম – হ্যাঁ, ঐ যে একটা গানের ক্যাসেটের…
র – হ্যাঁ, ঐটা আমাদের ফ্যামিলি ব্যান্ড কিন্তু। ঐখানে। তো, আমাকে বলছিল করতে। তো, ঐ এলবাম-কভারটা করে দিছিলাম।
ম – আচ্ছা
র – তো, ঐ এলবাম-কাভারের মধ্যেই দেখবেন, অনেক ফর্ম আছে, এখনো ইভল্ভ হয়ে হয়ে আসে। ঐটার মধ্যে একটা ইয়ে আছে। যদিও ঐটা…
ম – ঐ যে, মাথায় আগুন লাইগা আছে…
র – হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঐটা থেকে আবার গাঙচিল উড়তেছে। ইট’স ভেরি পোয়েটিক। তো, ঐটা একটা ছিল। তারপর, ট্রান্সটেল বলে একটা টেলিভিশন ছিল, তখন বাংলাদেশ দেখাইতো। ট্রান্সটেলের প্রোগ্রাম দেখাইতো। জার্মানির। তো, ওখানে একদিন ছবি আঁকা শিখানো দেখাইতেছে। তো, একটা তিমি মাছের লেজ, পানি থেকে বের হইছে আর টপ টপ করে পানি পড়তেছে। তো, ঐ যে দৃশ্যটা, ঐটা এমনভাবে আমাকে ধরছিল! ঐটার প্রায় ৬০-৭০টা কপি করছি। যে-ই বলে, ঐ একই লেজ। আর সব বাচ্চারা ক্ষেপে যেত, এই একটা ড্রয়িং ছাড়া কিছু পার না? অবসেসিভলি, ঐ তিমি মাছের লেজের সাথে আমি আছি।
(ফোনের রিংটোন)
ম – তিমির লেজের কথা বলতেছিলেন…
র – ও…হ্যাঁ, টিভিতে ঐটা দেখার পর অবসেসিভ হয়ে গেলাম, খালি তিমি মাছ। তো, বাচ্চাকাচ্চাগুলো সব বিরক্ত হয়ে যেত, যে এ একটা ছবিই পারে, এটাই আঁকে। এরকম মাসের পর মাস গেছিল তিমি মাছ নিয়ে, তিমির লেজ থেকে টপ টপ করে পানি পড়তেছে। আঁকতেই আছি, আঁকতেই আছি, কপি, কপি, কপি, কপি। আবার একটা ছবি এঁকে ঐটার উপর মোটা মোটা পেনসিল দিয়ে বার বার দাগাইতাম। কাগজ ছিড়ে যেত, হে হে হে…মানে এইটা একরকম মেডিটেশন আরকি।
ম – এইটা ৭/৮ বছর বয়স…?
র – ঐ সময় বা আরেকটু বড় হলে…ঠিক জানি না, মানে টাইম তো… আসলে ঐএকটা পিরিয়ডের পর আমার টাইম সব ঘোলা। আমি ঐভাবে ক্রনোলোজিকালি মনে রাখিনা, ইভেন আমি সালও মনে রাখতে পারি না। যখন সাইন-টাইন করি, তখন ‘কত সাল জানি?’, এরকম হয়ে যায়। ট্রান্সে থাকলে এটা হয়।
ম – মানে এটা আপনার অপ্রয়োজনীয়…
র – হ্যাঁ, আর মাস-মুস তো, ঐটা বিরাট বিশেষজ্ঞের ব্যাপার।
ম – হাহ হাহ হা
র – আর তারিখ তো একেবারে মানে নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট হতে হবে আমাকে, তারিখ জানতে হলে…
ম – হা হা হা
র – হে হে হে। মানে টাইমটাকে আমার ইয়া মনে হয়, এগেইন্সট ফ্রিডম। সেন্স অফ টাইম। যে, একটা একাউন্টেবিলিটি…
ম – এক ধরণের শৃঙ্খলা…
র – না, এক ধরণের দায়বদ্ধতা, যে আপনাকে টাইম মনে রাখতে হবে। তো,ওটা এড়ানো গেলে মজা। যে আপনে ফ্লোট করতেছেন। টাইম নাই, বছর নাই, মাস নাই।
ম – অবশ্যই। এবং এড়ানো গেলে ব্লেসডও বটে…
র – হ্যাঁ, ব্লেসড। মানে, ঐটা…সভ্যতার বাইরে চলে যাওয়া। সভ্যতার বাইরেই তো সভ্যতা। কী মজা! হা হা। তো, যা বলছিলাম, কী যেন?…
ম – টিভিতে ঐটা দেখে আপনি অনেক ইন্সপায়ার্ড হইছিলেন…
র – ঐটা হইলাম। তারপর আমাদের বাসার উপরে থাকতেন ইয়ারা, ঐ যে ফুয়াদ নাসের বাবু আছে না?
ম – সিঙ্গার…
র – ফিডব্যাকের। সিঙ্গার। তো, ঐ ফ্যামিলির অনেক প্রভাব আছে। উনারা একেবারে…মানে আমার মামার ফ্যামিলি আর ওরা, প্রায় একই টাইপের ছিল। মানে, হিপি জেনারেশন আরকি, মিউজিক এন্ড হিপিজ… মামারা সবাই মিউজিশিয়ান। অলমোস্ট। মানে, অনেকগুলো মামা তো, প্রায় ২/৩ জন ছাড়া সবাই মিউজিশিয়ান ছিল। এবং ভাল মিউজিশিয়ান। নট, মানে, ইয়া না, মানে, এমেচার কিছু না। দে হ্যাড ব্যান্ড এন্ড এভরিথিং। সবকিছু। এবং খুব এফিশিয়েন্ট মিউজিশিয়ান ছিল। আর ফুয়াদ নাসের বাবু উপরে ছিল, তো, ওদের বাসাটা খুব ইন্টারেস্টিং বাসা ছিল। ঢাকা শহরের যত মিউজিশিয়ান, রকস্টার – আজম খান থেকে শুরু করে সবাই…
ম – আসত…
র – সবাই আসত। তো, ঐখানে একটা প্র্যাকটিস রুম ছিল। ইয়া, ঐ যে কী নাম, ঐ…ড্রাইভারের রুমটাকে প্র্যাকটিস রুম বানাইছিল ওরা। ওটা একটা খুবই অদ্ভুত জায়গা ছিল। পাতলা একটা সিঁড়ি দিয়ে যাইতে হত। আর এখানে একটা ম্যানহোল ছিল খোলা। আর ঐ ম্যানহোলের পাশে একটা বিরাট লেবু গাছ ছিল। পুরা লেবু গাছে লেবু ধরে থাকত। মানে, আজব কম্বিনেশন, লেবুর গন্ধ আবার ম্যানহোলের গন্ধ। সব মিলায়…হাহাহা। আর বিরাট লেবু গাছ। এরকম লেবু গাছ এখন আর দেখা যায় না। মানে, একটা বুশ আরকি, বড় বুশ। যখন লেবু হত, লাখ লাখ লেবু। যাই হোক। তো, ঐ মিউজিক রুমটা আরেকটা ইন্সপিরেশন ছিল আমার। ঐটায় লাল-নীল বাতি জ্বলত আর সন্ধ্যা হইলেই ধাম-ধাম-ধাম-ধাম, মানে গিটার, ড্রাম…আর বিভিন্ন রকম স্মোকও হত…তারপর…সবকিছুই, মানে তখনকার কালচার, সেভেন্টিজের কালচার, ইউ নো, মানে, তখন তো ফুর্তির কালচার, ঢাকা শহর ফুর্তি করত। তারা…অনেক মডারেট ছিল, অনেক লিবারাল ছিল, অনেক নতুন চিন্তা-ভাবনা করত…হিপিজ…এবং…ইন্ডিয়ান…এইগুলা তখন চলে আসছিল। ঢাকায় তখন ঐরকম পরিবেশ ছিল। এখন তো অনেক কনজারভেটিভ, সেই তুলনায়। এখন যা হচ্ছে, সব গোপনে। এবং ওটাও হচ্ছে এক ধরণের…মানে এটা অন্য কালচার আরকি, মানে এইটা কালচারও কিনা আমি জানি না। এটার কোন ল্যাঙ্গুয়েজ নাই, এটার মধ্যে সাহস নাই, এটার মধ্যে দাপট নাই, এটার মধ্যে অরা(aura) নাই। যে অরাটা…ঐ সময়ে অরা ছিল মানুষের। এবং মানুষের মন বড় ছিল। যেমন এই এক লাখ টাকা দিয়ে দিল, এখন এইটা নাই, এইরকম দেখি না। এই জিনিসগুলা এখন নাই, এই ব্রড ইয়াগুলা নাই। ঐ সময় ঐগুলা দেখছি আমি। আমাদের বাসাতেই লোক থাকত, পরিচিত লোক না, চিনি না। এই রকম লোক দিনের পর দিন আছে। হয়তো মামার বন্ধু, সে আছে ছয় মাস। তারপর হয়তো একদম কেউ না, সে খেয়ে যাচ্ছে…এইরকম…এইসব কালচার ছিল। এখন তো চিন্তার বাইরে। আপনি নিজের বাসায় রাখবেন একটা অপরিচিত লোককে? বা কোন বন্ধু-বান্ধবকে?…
ম – সেটাই।
র – সো, দ্যাট ওয়াজ দ্যা…তারপর, যেটা হল…যে…ঐ প্র্যাকটিস রুমে সেলিম ভাই বলে একজন ছিল, ফুয়াদ নাসের বাবুরই এক ভাই। তো, উনি ছবি আঁকতেন। মানে, প্রফেশনাল ইয়া না, নিজে নিজেই ছবি আঁকতেন। খুবই একটা অন্য ক্যারেকটার, সাইকেডেলিক ক্যারেকটার আরকি। ওনারা সবাই অন্য জগতের লোক ছিল। আমার মামারাও তাই ছিল। মানে, দে লিভড ইন এনাদার ডিমেনশন, এনাদার বিলিফ। তারপর, ঐখানে একটা পাকিস্তানি ইয়া আসত, মিউজিশিয়ান আসত। লম্বা করে। করিম নাম ছিল। তো, ঐ লোকটা আমাকে চকলেট-টকলেট দিত। তো, ওর প্রভাবও আছে। ভেরি ফ্যাশনেবল একটা লোক ছিল। একটা ভেস্পা নিয়ে আসত, বেলবটম প্যান্ট, জিন্সের টাইট শার্ট। মানে,পুরা তখনকার, ঐ সময়কার…হেহ হেহ। তো, ঐ দেয়ালে, ঐ যে সেলিম ভাই, যার কথা বললাম, পেইন্টার, তার সব মারমেইডের ছবি আঁকা থাকত। মারমেইডের বিভিন্ন ইয়ে… পরে দেখেন, অনেক বছর পরে কিন্তু আমি মারমেইড নামে…মারমেইড…প্রতিষ্ঠানের সাথে…
ম – শুরু সেই তিমির লেজ থেকে…
র – হ্যাঁ, প্রায়, তিমির লেজ থেকে…মাছের সাথে কী একটা কানেকশন আছে…মাছ, পানি, এগুলার সাথে। আরো আছে, পানির সাথে, মাছের সাথে, আমি বলব…যেমন মারমেইডের সাথে যোগাযোগ হইল, নাইন্টিন…ওইটা বেশি হল ২০০৭ থেকে বোধহয়। তো এখনো তো ওদের সাথে…মানে, উই আর লাইক ফ্রেন্ডস এন্ড ব্রাদারস। তো, যাই হোক। ঐ পানি এবং মাছের একটা ইয়া আছে। তো, ঐ ঘরটাতে ঐরকম মারমেইড আঁকা থাকত। এবং খুব ইন্টারেস্টিং মারমেইড। সব বাঙালি ফেইস এবং দেহগুলোও বাঙ্গালি…খুব সুডৌল…যেমন হয়…ভারী ভারী ফিগার। সব বাঙালি মারমেইড আরকি। এবং আমার যে বইটা বের হল, ‘কসমিক আর্ক’, ওটাও ভেনিসে লঞ্চ হলো অফিসিয়ালি, তো, ওখানেও কিন্তু পানির ব্যাপার আছে। অলওয়েইজ ওয়াটারের ইয়া আছে। ওয়াটারের যোগাযোগ আমার সাথে বেশি…মাছ, পানি…সি, সি-ক্রিয়েচার। আমার ছবির মধ্যেও সি-ক্রিয়েচারের অনেক ইয়া আছে। যেমন, ঐ যে ফর্মের, মানে আদি ফর্ম…জানেনই তো ঐগুলা।
তারপর, তখন খুব হেভি মেটালও শুনতাম…
ম – আপনি ঐ সময়ে কি, মানে, ওয়েস্টার্ন আর্টিস্টদের এলবাম বা ঐগুলা আপনি প্রথম কবে পাইলেন?
র – ঐটা অনেক পরে। ঐটা…একবার হইছিল কি…ঐ সময়ই, মানে হ্যাঁ মগবাজারে…মগবাজারে, একবার ‘সংবাদ’এর মধ্যে মার্ক শাগালের উপর একটা লেখা বের হইছিল। ঐ লেখাটা পড়ে আমার মধ্যে…মনে হইল কি, এটা একটা উচ্চ স্তরের চিন্তা ভাবনার জগৎ। তখন তো এত…
ম – আমি আপনার এই প্রাইমারি জায়গাগুলা শুনতে চাচ্ছি…
র – হ্যাঁ। মার্ক শাগালের যে, ঐ যে উচ্চ স্তরের চিন্তার জগৎ, ঐ যে একটা ইয়া হইল, আমরা যে রিয়ালে থাকি – এ তো অন্য ধরণের চিন্তা…তখন মার্ক শাগাল খুব ভাল লাগছিল দেখে। তারপর, তো, তারপর ভুলেও গেছিলাম পরে। কিন্তু এখন মনে আছে স্মৃতিটা। তো, ঐ যে একটা ইন্টেলেকচুয়াল জগৎ, অন্য জগৎ, ঐটাকে ইয়া করলাম। তারপর ঐটা থেকে…ছবি আঁকায় হয়ত আনকনশাসলি আরো প্রভাব ফেলছিল মার্ক শাগালের ঐটা, লেখাটা। তারপর, ‘সংবাদ’এ তো আরো…তারপর মার্কেজের একটা অনুবাদ বের হত, একশ বছরের…অনুবাদ…ঐ সময়েই তো…
ম – ঐটা কি তখন অনুবাদ হইছিল?
র – হ্যাঁ, অনেক দিন ধরে। অনেক আগে। আর সৈয়দ হকের একটা লেখা বের হত। এগুলা তো আসলে…আর্ট পোয়েট্রি সব মিক্সড জিনিস…জাস্ট ট্রান্সলেট করলে যে কোনও ল্যাঙ্গুয়েজেই…
ম – …স্কুল তো আপনার শুরু হইল। পরে আপনি যখন, মানে, আপনি যে আর্টিস্ট হবেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও তো আপনি আর্ট ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করসেন, এই সিদ্ধান্ত বা এইটা আপনার কখন আসলো?
র – হ্যাঁ, এটা তো অনেক পরের ঘটনা। এটা অনেক পরে। তারপর, স্কুলে তো পুরা আউটেই থাকতাম, মানে স্কুলের কোন ব্যাপারই ছিল না মাথায়। মানে, খালি দেহ যাইত আরকি।
ম – আচ্ছা, হাহ হা, দেহ যাইত, না?
র – দেহও বোধহয় যাইত না, মাঝে মাঝে দেহও যাইত না।
ম – স্কুল কোনটা ছিল আপনার?
র – আদমজি ছিল অনেকদিন…পরে আবার…ও, আর আগে ছিল, প্রাইমারিলি ছিল, ইয়া, ঐখানে সেইন্ট প্যাট্রিক’স গ্রামার স্কুল বলে একটা খ্রিশ্চিয়ান স্কুল ছিল…আমরা তিন ভাই-বোনই ওখানে পড়াশুনা করসি। ঐটা ছিল একটা ফাদারের আন্ডারে। অন্য ধরণের লোক ছিল। তার প্রোগ্রাম দেখাত, আলেকজান্ডার রোজারিও তার নাম, মারা গেছেন কয়েকদিন আগে, পেপারে আসছিল। টিভিতে তার প্রোগরাম আসত, মানে, প্রিচার…তখন হত না টিভিতে? বিটিভিতে। এখনও হয় নাকি?
ম – বিটিভি তো দেখা হয় না…
র – আমি জানিনা। তখন বুদ্ধিস্টদের দেখাত, খ্রিশ্চিয়ানদের দেখাত, এখন তো…জানিনা হয় কি না, এনিওয়ে…তো, উনার স্কুল ছিল তো, খুবই ভাল স্কুল ছিল, এজ এ স্টার্ট…পরে তো যাইতাম না। তো, টিচার আমাকে জিজ্ঞাসা করত যে তুমি মাঝে মাঝে স্কুলে আসো কেন? হিহিহি, হাহাহা…
ম – আপনি কী বলতেন, যে অবসরে আসি?
র – মারামারির ব্যাপার ছিল তো, এগুলা আমি ঘৃণা করতাম। ছেলে-মেয়েদের পিটাইত, আই হেইট দিস। এগুলা কী! সন্ত্রাস দিয়ে শিক্ষা রক্ষা করা। এখনও মেজর পর্যায়ে তাই-ই।
তারপর…আর্ট…আর্টে তো আমার কোন ইয়ে ছিল না, মানে, ছবি আঁকতাম টুকটাক…তারপর তো ৯৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম যখন, ৯২ না ৯৩…৯১ বোধহয়…
ম – ইন্টার তো আপনি মনে হয় সিটি কলেজ থেকে পাশ করেন?
র – হ্যাঁ, কমার্স থেকে।
ম – আপনি বলসিলেন একবার যে তখন গ্যেটে ইন্সটিটিউটে…
র – হ্যাঁ, ওখানেও ফাঁকি মারতাম। আমার একটা বন্ধু ছিল, দুবাই-এ ছিল, এখন বাংলাদেশে আসছে…ও ভাল আর্টিস্ট ছিল। পরে প্র্যাকটিস করে নাই। ওর কাজ মজার ছিল।
ম – প্রেমে পড়সিলেন?
র – হ্যাঁ? কার? ও? না, বন্ধু।
ম – না, আমি বলতেসি…
র – ওটা তো অলটাইম। ওটা তো ইয়া, ওটার কোন শেষ নাই, শুরুও নাই। ঐটা…লাইক টাইম। সময় যেমন, শেষ-শুরু নাই, প্রেমও তেমন শেষ-শুরু নাই। আসে, যায়।
ম – সেটা আমরা পরে শুনব। আপনার একাডেমিক ইয়াগুলার দিকে যাই। ইন্টারের পরে…
র – ও, ইন্টার পাশ করার এক বছর কিছুই করি নাই। আর আমাদের বাসা কেমন জানি ছিল। মানে, ‘করবে’ এরকম একটা ইয়া ছিল। মানে, নট, মানে প্রেশারে রাখত না যে তোমাকে এটা হতে হবে, ওটা হতে হবে। হোয়াটেভার ইউ ডু। এরকম একটা টেন্ডেন্সি ছিল। আমার বাবারও ওরকম ছিল। বলত কিছু কিছু, কিন্তু আসলে সে অত চিন্তিত ছিল না। চিন্তিত থাকলে বোঝা যেত সেটা। হেহ হে, এ তো বোঝা যায়। তো, ইন্টারের পর এক বছর ঘোরাঘুরি করসি, তারপর একটা স্কুলে আর্ট শিখাতাম। ওটা খুব মজার অভিজ্ঞতা।
ম – আপনি শিখাইতেন?
র – হ্যাঁ। তখনও আর্ট কলেজে ঢুকি নাই। তখনকার অনেক ইমেইজ এখনও আসে আমার মাথায়। ঐ সময়…নাইন্টি টু তখন…নাইন্টি টু? হ্যাঁ। বাচ্চাদের আমি খুব জটিল আর্ট শিখাইতাম মাঝে মধ্যে, খুব আধ্যাত্মিক টাইপের। যেমন, একটা ছিল ‘আই বিয়ন্ড আই’। একটা চোখ এঁকে, বড় করে মণি দিয়ে, ওটার মধ্যে আরেকটা চোখ, আবার ওটার মণির মধ্যে আরেকটা চোখ, ওটার মণির মধ্যে আরেকটা চোখ, ওটার মণির মধ্যে আরেকটা চোখ।
ম – বেশ পরে তো আপনি ঐ যে ‘ডোন্ট ওপেন ইওর উইন্ডো টু দ্যা…’ – ঐটার মধ্যেও তো ছিল…
র – হ্যাঁ, এই ধরণের যে ইয়াগুলা, মানে, লজিকাল যে ইয়াগুলা, বা ইললজিকাল যে জিনিসগুলা। এইগুলা বেসিকালি আধ্যাত্মিকই আরকি। চোখের মধ্যে চোখ, মানে, হারায় যাওয়া…আই তো আপনার স্রষ্টার প্রতীক, মানে, স্রষ্টার মধ্যে হারায় যাওয়া। তো, ঐ জিনিসগুলা তখনই এমনি এমনি আসছে। তারপর টিফিন-টাইমে ওদের সব সিরিয়াস মিউজিক শুনাইতাম, পিঙ্ক ফ্লয়েড ছেড়ে দিতাম, আর এই দিকে বাচ্চারা খেলতেছে। তারপর ডিপ পার্পল, ডিপ পার্পল দিয়া আমি বাচ্চাদের খেলাইছি। হাহাহা। আর, ওরাও ছিল খুব ইন্টারেস্টিং সব ফ্যামিলির, যারা বাংলাদেশ কন্ট্রোল করে, এরকম সব ফ্যামিলির লোকজন…পলিটিকাল সব ফ্যামিলি, তারপর ইয়া টিয়া। তা এখনও কারো সাথে টুকটাক যোগাযোগ হয়। তো, ঐটা খুব মজার একটা সময় ছিল। আর স্কুলটাও ছিল…মানে, আমি ছিলাম অর্নামেন্টাল টিচার, মানে, আমি যেতাম আসতাম, রিল্যাক্সড একটা জব, যেয়ে চা খাইতাম, বিস্কুট খাইতাম। তারপর সারাউন্ডিং…অনেক সুন্দর সুন্দর নারীরা থাকত। মানে, অন্যরকম একটা…পশ একটা জায়গা। ভেরি এলিগেন্ট একটা…
ম – এইটা কোথায় ছিল? স্কুল?
র – এখানেই একটা স্কুল। তখন উত্তরায় খুব কম স্কুল ছিল। এখনও আছে স্কুলটা। তবে এখন তো পরিবেশ চেইঞ্জ হয়ে গেছে। তখন অন্যরকম একটা ইয়া ছিল। মানে, গ্রোয়িং একটা সিটি…নতুন। তখন উত্তরা ছিল একটু এলিটদের জাগা। এখন তো বিভিন্ন…পাঁচমিশালী হয়ে গেছে। তখন একটা এলিটিস্ট ফর্ম ছিল। ভঙ্গীটাই এলিটিস্ট আরকি…জায়গাটা, ইয়াটা। আর ফ্যামিলিও থাকত ঐরকম, কেউ এম্বাসেডর, কেউ ইয়া টিয়া…এক্স এম্বাসেডর বা সেক্রেটারি…এই ধরণের লোকজন। বুড়া বয়সে এসে এখানে…তারা, তাদের ছেলেমেয়েরা। আর এখন এত ধরণের লোক, এত ইয়ে যে আমি চিনিও না, কে কে আছে। এইটা চেনা সম্ভবও না। কারণ এখন অনেক মিক্সড হয়ে গেছে। তো, কালচার যে আসলে কী উত্তরায়, এটা ধরা যায় না। যেমন, আপনি গুলশানের কালচার ধরতে পারবেন…যে ঠিক আছে, এটা আপার ক্লাস কালচার। বনানীরটা হয়তো ধরতে পারবেন, বারিধারারটা ধরতে পারবেন, বা মিরপুরের একটা কালচার আছে। বাট উত্তরারটা…ইট’স ভেরি ডিফিকাল্ট। কারণ উত্তরায় সব জায়গা থেকে লোক আসছে, এসে নিজেদের মত নিজেদের ফ্যান্টাসি তৈরি করে আছে আরকি। তো, এখানে কারো সাথে কারো ইয়া নাই।
ম – মজা তো এইটা…
র – মজা মানে আমার জন্য এটা মজা না। হাহাহা। কারণ আমার এইখানে কিছু করার নাই, মানে আমার ভূমিকা নাই, ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন ভূমিকা নাই। আমি যেভাবে এখানে গ্রো করসি, আমি তো এখানে একেবারে আদি দেখসি। ৮৩ সালে দশটা ফ্যামিলি ছিল। মিউজিশিয়ান ছিল…সত্য সাহাদের ফ্যামিলি ছিল…তারপর ব্যাঙ্কার ছিল, এম্বাসেডর ছিল…এরা সব আমার বাবার বন্ধু-বান্ধব ছিল। এই যে উত্তরার তিন নম্বর মসজিদ, এইগুলা তার ইনিশিয়েশন, তারপর আরো অনেক কিছু হাবিজাবি…একটা এলাকায় থাকে না? সেও তখন এক ধরণের রিটায়ারমেন্টের মধ্যে আছে। জব করে…ওটা রিল্যাক্সড জব, মানে এক ধরণের ইয়া…ইনজয় করসে সময়টা, যদিও টাইম বেশি পায় নাই, শরীর খারাপ হয়ে মারা গেছিল। তো ২/৩ বছর, উত্তরায় এসে ইঞ্জয় করলেন। আর প্রতি শুক্রবার পার্টি হত বাসায়। একদম খাসি কেটে, জবাই করে। কাচ্চি বিরিয়ানি সে নিজে হাতে বানাতো। এবং এটা শহরে নাম হয়ে গেছিল, যে মইন সাহেবের কাচ্চি খাব। হেহ হেহ। আর সব…মানে শুক্রবার হলে পুরা বাসা ভরে যেত, ঢাকার বিভিন্ন লোকজন এসে… এরকম একটা আমাদের স্মৃতিতে আছে আরকি। ইট’স ভেরি ইন্টারেস্টিং, মানে, একটা ফেস্টিভ টাইপের ব্যাপার ছিল। আর এই সময় আমি…উত্তরা ফাঁকা…জোরে জোরে বিটোফেন শুনতাম…আর ঝড় আসত! আর সিক্সটিজের সব মিউজিক শুনতাম…যা যা আছে। মানে, একদম পোয়েটিক সময়। তারপর এখানে একজন ছিল, খুবই আধ্যাত্মিক টাইপ, আধ্যাত্মিক মানে ইন্টেলেকচুয়াল টাইপের লোকজন, এরা সবাই আমাকে ইয়া করসে…ইন্সপায়ার করসে।
(চলবে..)
(ট্রান্সকিপশনে নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ)
[…] (প্রথম খণ্ডের লিঙ্ক) […]
LikeLike
“বাঙালি মারমেইড” – হা হা – খুব মজা পেলাম পড়ে …
LikeLike