আনুপূর্বিক রনি আহম্মেদ – মহসিন রাহুলের নেয়া সাক্ষাৎকার, খণ্ড ২

[এক ভিডিও পারফরফেন্সে রনি আহম্মেদরে এক আর্ট-ক্রিটিক কী কী জানি জিগাইছিল, মেলা কঠিন শব্দ দিয়া। উত্তরে রনি কিছুক্ষণ কাশছিলেন খক খক কইরা, তারপর বিঠোফেনের নাইন্থ সিম্ফোনির ‘ওড টু জয়’এর সুরে অপেরার ঢঙ্গে জবাব দিছিলেন, “আমার ছবি লাল হলো, সবুজ হলো, হলুদ হলো, তাতে বা কার কী আসে যায়, আবার তাতে তর বা কী! লা লা হি লা লা লা হি লা লা লা লা হি লা লা হি…”।
রনি আহম্মেদের সাম্প্রতিকতম প্রদর্শনীর(গডস এন্ড বীস্টস) ছবিগুলোতে উনারে উচ্চতাসাধক নীরবতার রাস্তায় পথ ধরসেন মনে হবে, মনে হওয়া এও সম্ভব যে, তাঁর সংগে অর্থবোধক বাক্য বিনিময় তথা যেকোনো প্রকার ভাববিনিময়ের উপায় শীঘ্র রহিত হবে, এবং তাঁর ছবির পুরানা ও ধারাবাহিক যেকোনো দর্শকের কাছে সমগ্র প্রপঞ্চটিই পূর্বনজিরশূন্য।
ফলে এই আলাপ একটি প্রয়োজনীয়, ইমার্জেন্সি ও বিশদ ডকুমেন্টেশন।
উত্তরাস্থিত রনি আহম্মেদের বাসায় ২৫-০৮-২০১৬ তারিখে এই সাক্ষাৎকার লইছেন মহসিন রাহুল(জেনো’স প্যারাডক্স) । ছবি আঁকেন, আড্ডা দেন, পেশায় চিকিৎসক।
বেশ লম্বা আলাপ। ধারাবাহিকভাবে নয় নাম্বার বাসে আমরা তা প্রকাশ করছি। আজ দ্বিতীয় খণ্ড।
(প্রচুর হাসির আওয়াজ, বলা বাহুল্য, ছাপানো সম্ভব হয় নাই)।                                -নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]
IMG_20160825_164824_HDR
ছবি – মহসিন রাহুল

(প্রথম খণ্ডের লিঙ্ক)

খণ্ড ২

মহসিন রাহুল – মিউজিক যা শুনসেন তো, মোস্টলি ওয়েস্টার্ন…কবিতা, গল্প, উপন্যাস..

রনি আহম্মেদ – সবই এক, আমার কাছে আসলে…ট্রান্সলেট হয়ে…

ম – তখন পড়তেন?

র – তখন প্রচুর পড়তাম। এখন তো পড়িই না বলতে গেলে। কম পড়ি। তখন মেজর যে জিনিসগুলা…

ম – কী পড়তেন?

র – সারাক্ষণই পড়তাম। মাসুদ রানা পড়তাম, সারাক্ষণ। আর তো কিছু পড়তে হয় না।

ম – আচ্ছা। মাসুদ রানাই এনাফ?

র – এটাই তো। মানুষ তো মাসুদ রানাই পড়ে। আর কিছু পড়ে? তো, ঐটা পড়তাম। হাহা..

ম – আপনার যে গল্পের বইটা, তারপর যে ননসেন্স কিছু রাইম লিখসিলেন। এবং এগুলার ভাষা, এগুলার ধরণ দেখলে, এটা তো নিশ্চিত যে…আপনি খুব…

র – মাসুদ রানার ব্যাপারটা আমি বলি আপনাকে। হুম? যে, হ্যাভ ফান, টেইক রিস্ক, এট দি এন্ড বি আ উইনার…এন্ড…দ্যাট…বি আ ওমেনাইজার, এন্ড গো, গেট হার। হ্যাঁ? এটা ধরেন একটা…একটা মানুষের জীবনে সে ইয়া করতে চায়…এচিভ করতে চায়, হু? এখন আমি যদি বলি আমি এচিভ করতে চাই না, আমি বাউল টাইপের, তাইলে ভুল হবে। তাইলে এতগুলা একজিবিশন করলাম কেন? তাইলে এত কেন আমার তাড়না? এইটা একটা বাস্তব জগতের হিসাব। আর আধ্যাত্মিক জগতের হিসাব পরে দিব।

তো, মাসুদ রানার ভেতর এইগুলা আছে।

ম – আমি যে কারণে আপনাকে ইন্টারাপ্ট করলাম…

র – আর বাকি যেগুলি, সিরিয়াস যাকে বলে, সিরিয়াস রাইটিং টাইটিং, এগুলা তো ধরেন মনের ব্যাপার। এইগুলা ধরেন, ইয়া আরকি। সিরিয়াস রাইটিং হচ্ছে, আপনাকে ইয়ে করবে, আপনার চিন্তা ক্ষমতা বাড়াতেই থাকবে, যত পড়বেন আরকি। সিরিয়াস রাইটিং আসলে কিছুই না, এটা হচ্ছে চিন্তা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটা মডিউল। হ্যাঁ? চিন্তা ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মডিউল। সেটা আপনি ডাক্তারি ইয়াতেও করতে পারেন। ধরেন আপনি একটা ট্যাবলেট দিলেন, পট করে ডাবল হয়ে গেল চিন্তার ক্ষমতা। আরেকটাতে ধরেন তিন গুণ হয়া গেল। ……..আমার মনে হয় যে সামনে এমন জিনিস আসবে, যে আপনার ব্রেইন-পাওয়ার বাড়বে। এখনই এমন জিনিস আছে, লোকজন জানে না। হয়তো…এক্সপেনসিভ অনেক জিনিস আছে…আমি মনে করি যে পৃথিবীতে টেকনোলজি পাবলিকের জন্য ২০% খোলা আছে, আর ৮০% ঢাকা আছে। কারণ, ব্যবসা অনুযায়ী তারা ছাড়বে। কারণ, তারা বিলিয়ন ডলার যখন ইনভেস্ট করে…ধরেন এই যে তেলে ইনভেস্ট করা আছে ট্রিলিয়ন ডলার, এখন এমন টেকনলজি আছে যেমন পানি দিয়ে বা একদম কম খরচে চালানো যায়, ওটা তারা কখনোই বার করবে না, তাহলে এই ট্রিলিয়ন ডলার কী হবে! এই ধরণের অনেক টেকনোলজি আছে, যেগুলো…

ম – হ্যাঁ, বিজ্ঞানের বিকাশতো….

র – ইকোনমির সাথে

ম – …পুঁজির সাথে সম্পর্কিত।

র – হ্যাঁ, পুঁজির সাথে… তো, ওটাই আরকি।

ম – আমি সুনির্দিষ্টভাবে একটু অন্য জায়গায় কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আপনি গদ্য লিখতেন, অনেক ভাল গদ্য লিখতেন। আপনি আর্ট ক্রিটিসিজম করসেন এক সময়। ইভেন আপনার যে গল্পের বইটা, ‘সেলিমের দুঃখের কাহিনী’, তো, এইটা পড়লে, বা এই জিনিসগুলা থেকে মনে হয় যে আপনার প্রস্তুতি, বাংলা গদ্যের, বা, ইয়ের…ওয়েল-ইনফর্মড ছিল।

র – হ্যাঁ, তা তো বটেই। ওগুলো তো আছেই। ওগুলো তো পড়সিই, সবই পড়া আছে। কিন্তু আমার বলতে ভাল লাগে না।

ম – আচ্ছা। হা হা হা

র – হাহাহা

ম – দ্যাটস ফাইন। তারপর বলেন, তো ঐ স্কুলে…

র – বা ধরেন একজন লেখক যা যা পড়ে, সবই পড়া আছে, মোটামুটি। ধরেন ন্যাশনাল লেভেলের বা ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের, একজন লেখকের যা যা পড়তে হয়, বেইসিক, ঐটা আমার পড়া আছে। ঐটা পড়া আছে এবং ঐটা নিয়ে বহু সময়ও কাটাইছি এবং আমার ধারণা, অনেকের চেয়ে বেশিই পড়া আছে। কিন্তু ওগুলা আমি ভুলে যেতে চাই। কারণ, না ভুললে তো আপনি ওগুলো নিয়েই থাকবেন। মানে, জিনিসটা হচ্ছে যে, আনলার্ন করতে হয় সবকিছু। আর্ট কলেজে যে পড়ি, এটাই আমি বলি না কাউকে। এইটা নিয়ে, এই প্রসঙ্গে আমি কথাই বলি না। কেউ জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ পড়সিলাম, এটুকুই। বা যারা জানে, তারা জানে। কিন্তু এটা কখনো আমার ব্রেনে থাকে না যে আমি এইটা ইয়া করসি। হু?

ম – বুঝলাম।

র – আর্ট কলেজ থেকে অবশ্যই পাইছি। আর্ট কলেজ থেকে যে জিনিসটা আমি পাইছি, যে…পিকাসো যে জিনিসটা করসিল, ঐ জিনিসটাই পাইছি, যে একটা জিনিসের ঘনত্ব আছে, থ্রিডি, তারপর একটা জিনিসকে দেখাইলে যাতে ঐ পা্রে কী আছে সেটা কল্পনা করে নিতে পারে…তারপর কালারের যে ব্যাপার, যে এই কালার দিলে এই কালার হয়…এইগুলা তো পাইছি, না? এইগুলা তো শিখতে হইছে আমাকে। তারপর ড্রইং-এর লাইনের যে ইয়াটা…জড়তাটা দূর করা, এইটা শিখসি। তবে আমি আমার নিজের লাইন তৈরি করে নিছি, এইটা জানেন…

ম – হ্যাঁ

র – মানে, আর্ট কলেজের কোন সমালোচনা নাই আমার। মানে, হোয়াট আই লার্নড…আমার টিচাররাও আমাকে অনেক হেল্প করসে, প্রত্যেকে…উনারা সবাই হেল্প করসে…

ম – আপনার টিচার কারা ছিলেন? বা বিশেষ কোন টিচার…

র – আমার তো ইয়ে ছিল, মানে, মোস্ট অব দ্যা টাইম তো আমি কাটাইছি আব্দুস শাকুর শাহ, উনার আন্ডারে। মানে, আমি তো ক্রাফটসে ছিলাম। উনি আমাকে কখনোই প্রেশার দেয় নাই। তখনই উনি টের পাইছিল যে এ প্রেশার দেয়ার জন্য না। এ হচ্ছে…মানে, প্রেশার দিলে হবে না। সে হয়তো জ্ঞানী মানুষ…উনি জ্ঞানী মানুষ। সে(আব্দুস শাকুর) ধরে ফেলসে যে সবার নার্ভ এক না…ঐভাবে আমাকে…যেমন, আমি জমা দিতাম দেরি করে, তারপর আমার কাজের কোন লে-আউট থাকত না। টাপেস্ট্রি করতেসি, টাপেস্ট্রির কোন লে-আউট নাই, যেটা সবচেয়ে টাফ। টাপেস্ট্রি তো বুনতে হয় আস্তে আস্তে। তো, আপনি কী করছেন, আপনি নিজেই জানেন না। লে-আউট থাকত না। ওটা আবার দেখতে লোকজন আসত, অন্য ক্লাসের, যে এ লে-আউট ছাড়া টাপেস্ট্রি করতেসে…

ম – মানে, কাজ করতে করতে যা দাঁড়ায়?

র – হ্যাঁ, মানে, আমার মাথায় আছে, কিন্তু ওটা তো আমি বলব না। কিন্তু এটা অনেক টাফ আরকি, জিনিসটা। এবং কাজগুলাও আলাদা হত। মানে, নরমাল স্কিলের কাজ বা ঐরকম…

ম – ঐরকম কোন কাজ আছে আপনার?

র – আছে হয়তো। ঐ সময়ের..

ম – আমি দেখি নাই। আপনার টাপেস্ট্রি দেখি নাই…একটা প্যাঁচা দেখসিলাম…

র – টাপেস্ট্রি?

ম – না না।

র – ও না, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঐটা..

ম – ঐটা আছে এখনো?

র – থাকার কথা কোনও একটা গুদামে..

ম – আমি আজকে এইটার ফটো তুলে নিয়ে যাব।

র – এটা বের করা খুবই মুশকিল, কোন গুদামে রাখসি…অনেক প্যাকেট করা…

ম – ওকে

র – ঐটা এখন প্যাকেট করা। প্যাঁচা ছিল, হরিণের মাথা ছিল। ঐগুলা আমাদের…ক্রাফটসের মজাটাই কী, যে অল ডিপার্টমেন্ট ঐটার মধ্যে আছে, প্রিন্ট আছে, সিল্ক-স্ক্রিন প্রিন্ট, তারপর কার্ভিং আছে স্কাল্পচারের, ঐ যে…আপনি দেখসেন। ঐ সময়ের করা একটা স্কাল্পচারের ছবি তুলতে পারেন ঐ ক্রাফটস ডিপার্টমেন্টের। ঐটার ক্রাফটসের সাথে সম্পর্ক নাই, তবে…ঐটা একটা আছে। তারপর পাতিনা বলে একটা জিনিস আছে, ঐটাও কার্ভিং-এর মত, ঐটা ইয়ে করে…জিঙ্ক প্লেটের উপর খোদাই করে করে এমবুশ টাইপের একটা কাজ। তো, এগুলা সবই করসি, বাট একটু ডিফরেন্ট ওয়েতে, আমার মত করে আরকি। এগুলা, ঐ যে আব্দুস শাকুর শাহ যিনি ছিলেন, উনার স্নেহেতেই করা সম্ভব হইছে, এছাড়া…হতো না। এছাড়া হতো না। আর তখন শিশির ভট্টাচার্য ছিল, নিসার হোসেন ছিল…তো, ঐ সময়ে একটু নিউ ল্যাঙ্গুয়েজে আমি ইয়া করসি, তারা খুবই ইন্সপিরেশন দিছিল আরকি…

ম – সবাই দেখসিলেন তো এই…

র – হ্যাঁ, তখন তারা নোটিস করসিল যে এ…। আর আমার ফার্স্ট একজিবিশন তো আমি পাশ করার আগেই করসিলাম। এবং আমার ফার্স্ট একজিবিশনে আমাকে প্রচুর হেল্প করসে, মানে পুরা গ্যালারিটাই আমাকে ব্যবস্থা করে দিছিল রোকেয়া সুলতানা।

ম – ফার্স্ট একজিবিশনে, ঐটা…ঐ ছবিগুলা ছিল না, ঐ যে “ওমেন থিঙ্কস…

র – হ্যাঁ হ্যাঁ

ম – ফিশ ইন দ্যা…

র – হ্যাঁ

ম – এটা আপনার পাশ করার আগের এগজিবিশন?

র – হ্যাঁ, পাশ করার আগে। এগুলা সব…ফার্স্ট এগজিবিশনের পুরাটাই পাশ করার আগের। এইটি পিসেস ওফ আর্টওয়ার্কস। ঐ সময়ে…যাদের কথা বললাম, ঐ রোকেয়া সুলতানার অনেক ইন্সপিরেশন ছিল, ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে গ্যালারিটা দিছিল। সো, অলওয়েজ…গ্রেটফুল যে প্রফেশনাল বিগিনিংটা তার হাত দিয়ে হইছে। তারপর…..আস্তে আস্তে অন্য টিচাররাও ইয়ে করল, মানে বুঝল আরকি। ওটার মধ্যে আবার ইয়েও হইল, যে কেউ পছন্দ করল, কেউ করল না। এটা তো এখনও আছে, একটা দল পছন্দ করে, একটা দল করে না…

ম – আচ্ছা, এখানে একটা জিনিস…তখন আমাদের প্রধান শিল্পী যারা, ধরেন, আপনি কত সালের কথা বলতেছেন?

র – আমার একজিবিশনটা ২০০১-এ হয়। আর যেগুলা বললাম, পাতিনা-টাতিনা, ক্রাফটস ডিপার্টমেন্টের, এগুলা অনেক আগের…৯৬-৯৭…

ম – তো, এই ইনভায়ারনমেন্টের মধ্যে আর কেউ তো আঁকতেন না এইভাবে।  আপনিই মনে হয় যেন ঐ পশ্চিমের পোস্ট-দাদা, পোস্ট-স্যুরিয়ালিস্ট থেকে আরম্ভ করলেন…

র – হ্যাঁ…আমার একটা বন্ধু ছিল ইমরান, ও হারায় গেছে। ও কোথায় আছে আমি জানিনা, মানে ওর ট্রেসই নাই। তো, ও আর আমি একসাথে প্র্যাকটিস করতাম এইখানে, উত্তরায়। উত্তরায় বাসা ছিল। মোহাম্মদ ইউনুস যিনি আছেন, পেইন্টার, উনার ভাই। তো, ওদের বাসায়ও আমি যেতাম। মোহাম্মদ ইউনুস, উনি তো সবসময় প্রচুর কাজ করেন, তো, ওগুলো দেখতাম। ওগুলো একটা ইন্সপিরেশন ছিল। যে এত বড় একটা ফ্যাক্টরির মত, রিয়েল আর্ট ফ্যাক্টরি যাকে বলা যায়, আর্ট স্টুডিও। ঐটার একটা সেন্স ছিল। তারপর ঐ ছেলেটাও একটা ইন্ট্রেসটিং ছেলে ছিল। লিটিল ম্যাগের লোক ছিল। ও রিয়েলিস্টিক ড্রয়িং-এ পাকা ছিল, মানে, ওয়ান অফ দ্যা লিজেন্ডস…

ম – ঐ ইমরান যে…উনি?

র – হু। সাঙ্ঘাতিক রিয়েলিস্টিক ড্রয়িং করত। তো, পরে সে অল্টারনেটিভ আর্টও করল। ঐ সময়ে আমি তাকে অল্টারনেটিভ আর্টে ইন্সপায়ার করতাম, সে আমাকে রিয়েলিস্টিক ডয়িং-এ ইন্সপায়ার করত। দুই জনে এক্সচেইঞ্জ হইত। সে কিছু পারফর্মেন্সও করসিল, যেগুলোর কিছু কিছু ছবি আছে। একটা একজিবিশনও করে খুব এলোমেলোভাবে, পাগলাভাবে। দ্যাট ওয়াজ…মজার ছিল আরকি, উল্টা করে ছবি ঝোলানো…আমি ওর একজিবিশনের পোস্টার করে দিছিলাম, তো ও করসে কি, ঐ পোস্টারটা নিয়া একটা পেইন্টিং-এর ভিতর ঐটা লাগায় দিছে। হাহ হাহ হা। মানে এই ধরণের চিন্তাভাবনা তার ইয়া ছিল। মানে, এইগুলা তো খুবই মজার চিন্তা। পেইন্টিং ঝুলাইছে, সব উল্টা করে। এই ধরণের কাজ করত। তো, এই ওয়াইল্ড জিনিসগুলা আমি ওরে ইয়া করতাম, মানে শেয়ার করতাম। যে, এইগুলা কর, এইগুলা হচ্ছে আসল পৃথিবীর কাজ। পাশ করার পরে তোমার এই রিয়ালিস্টিক কাজগুলা জাস্ট নাম্বার হিসেবেই থেকে যাবে। ইউ কুড বি এ গুড টিচার। বাট আর্টিস্ট হতে হলে তোমাকে আউট অফ দ্যা বক্স চিন্তা করতে হবে। আর যেহেতু সে সাহিত্যের…লিখত-টিখত…তো, সে ধরে ফেলসিল, ক্যাচ করে ফেলসিল। তো, এরকম একটা আদান-প্রদান হত। যেমন আমরা মাংসের দোকানে ছবি আঁকতে যেতাম উত্তরায়, তারপর টঙ্গীতে – সবাই চিনে গেছিল। মাংস কিনতে গেলে ২০ টাকা/৩০ টাকা ছাড় দিত। আব্বাস বলে একটা ছেলে ছিল টঙ্গীতে, তুরাগ নদীর পাশে বিরাট একটা বাসা ছিল ওদের। ছাদে বসে পুরি আনাত। প্রত্যেকবার যেতাম, আর খেতাম। ও এখন ব্যারিস্টার হয়ে গেছে, আর্ট কলেজে ছিল। এইগুলা খুব মজার মজার স্মৃতি আছে। তারপর, ওকে একবার নিয়ে গেলাম ইয়াতে, এলিয়ঁস ফ্রাঁসেসে বিবি রাসেলের একটা ইয়া হচ্ছিল, ফ্যাশন শো। সব সুন্দরী মডেল, হাই ক্লাস মডেল, তারপর বিদেশীরা। তখন আমি বলসি যে, ওখানে যাব, তো একটা কাজ করি। ও আবার তখন ইয়ে করসে, চুল ডাই করসে। চুল ডাই করসে, লাল চুল, শ্যামলা একটা ছেলে – অদ্ভুত লাগতেছে দেখতে। আমি বললাম যে, তোর চুল আমি কাইটা দেই। আমি ওর চুলটাকে আবার কিউবিস্ট পদ্ধতিতে কাটসিলাম, চারকোণা চারকোণা করে, উঁচু-নিচু। তারপর ভুরু চাঁছা হইছিল। মানে, একেবারেই ঐ যে অল্টারনেটিভ ফিল্মে দেখা যায় না একটা ক্যারেকটার…বা গান-টানে? ঐরকম লাগতেছিল। চাপা একটা জিন্স, চাপা পোষাক, ছেড়া জুতা। তো, ঐখানে গেছি। সবাই তাকাচ্ছে, যে হোয়াট দ্যা ফাক। এইটা কে? এরা কারা? আমারও তো এলোমেলো চুল, এই পিঠ পর্যন্ত চুল থাকত। আমি সবসময় হোয়াইট আর ব্ল্যাক ড্রেস পরতাম। এইটার কারণ আছে। কারণটা হচ্ছে যে, আমি ‘ব্লো আপ’ ছবিটা দেখসিলাম তখন।

ম – আন্তনিওনির?

র – আন্তনিওনির। ঐটা দেখে হোয়াইট ড্রেসের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। তো, টোটাল হোয়াইট পরতাম। আর একটা কানাদের চশমা পরতাম। কানারা মোটা চশমা পরে না? ঐটা আমি বানায় নিছিলাম। আর একটা বড় মান্ডালা ছিল আমার বুকে, একটা বড় মালা। আর পিঠ পর্যন্ত চুল, ঘন চুল ছিল তখন। আর পাতলা ছিলাম। কোন দেশী, বোঝা যাইত না। আর চাল-চলনেও…হেহহে…মানে, আমি ইচ্ছা করেই করতাম কি, বাংলাও বলতে পারি না, ইংলিশও বলতে পারি না, এরকম একটা ভাব করতাম।

ম – হাহাহা

র – হা হা, মানে, অলটাইম একটা পারফরমেন্স চলতেছে আরকি

ম – বুঝতেছি

র – তারপর ওকে নিয়ে গেলাম বিবি রাসেলের ঐখানে। আমি বললাম, যে তুই তো ইংলিশ পারস না, তো আমি ইংরেজিতে বলব, আর তুই জাপানী স্টাইলে বলবি। ও বলল যে, কেমন? বললাম, আমি যাই বলব তুই খালি ‘ও ইঁয়াঁ’, ‘ও ইঁয়াঁ’ করবি। যেমন আমি বলতেছি, ইজন্ট ইট নাইস, দিস ড্রেস? ও বলত, ‘ও ইঁয়াঁ’, ‘ও ইঁয়াঁ’।

ম – হাহাহা

র – সবাই তাকাচ্ছে টাকাচ্ছে, তো, এক সময় মনে হইল যে মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারপর আস্তে করে আমরা বের হয়ে গেছিলাম। তো, ঐটা একটা লাইভ পারফরমেন্স ছিল। আবার অনেক সময় ব্যান্ডানা পরতাম মাথায়। চুল নিয়ে বহু কাজ করসি। তারপর ‘রুম উইদ এ ভিউ’ যে ছবিটা ঐটা দেখার পর আমি প্রথম ঐরকম ইয়া করসিলাম। পরে তো রাহুল কাট বেরুলো। বহু পরে। কিন্তু আমার চুল একদম কলেজ লাইফ থেকেই ঐরকম ছিল। ‘রুম উইদ এ ভিউ’এ যে ছিল…পরে রাহুল কাট আসছে। যাই হোক। তো, অলওয়েজ ড্রেস-আপ বা একটা কোডে থাকতাম। টোটালি আলাদা কোড, যেটা আমি কনশাসলি মেন্টেইন করতাম…কনশাসলি মেন্টেইন করতাম না আসলে, ওটা আমার অর্গানিক প্রোসেস ছিল। একটা কোডে থাকা। একটা আলাদা ইয়ে। ঐ যে দালি বলসে না যে যুদ্ধ করতে গেলে ইউনিফর্ম দরকার হয়? ঐরকম কিছু একটা ছিল হয়তো। তখন অত চিন্তাও করতাম না। তখন ছিল ইন্সটিংক্ট-এর জগত, লিবিডোর জগত। মানে, কোন চিন্তাভাবনা নাই, যা ইচ্ছা তাই, ধাপাধাপ… হেহেহেহ। তারপর একদিন ঠিক করলাম কি, যে বক্তৃতা দিব। তারপর একটা ইয়া ভাড়া করলাম, ভ্যানগাড়ি। পোলাপান উঠাইলাম আর্ট কলেজ থেকে। তারপর ব্যান্ডানা পরে, ব্ল্যাক জিন্স না ওইরকম কী একটা পরে একদম জোরে জোরে সব অ্যাজটেক ভাষায় অ্যাএএএও রাআআআআও…

ম – এইগুলা পাবলিকলি করসেন!

র – পাবলিকলি। ইয়াআআআআও করে চিল্লাচ্ছি, আর সব লোক তাকাচ্ছে। আর পোলাপান তালি। হাসতেছে, গড়ায় যাচ্ছে। আবার র‍্যাআআআআও করে…

ম – হা হা হা

র – হো হো হো

ম – এইগুলা কত সালে?

র – এইগুলা কত…এই নাইনটি ফাইভ-টাইভ হবে, বা ফোর-টোর, বা সিক্স-টিক্স…

ম – পলিটিকাল ছিল তো…

র – ইয়া। পাবলিকলি করসি এইগুলা। তারপর ইউনিভার্সিটির বাসের মধ্যে করসি। ইউনিভার্সিটির বাসে একদিন যাচ্ছি, আমি বক্তৃতা দেয়া শুরু করলাম, “আমরা এখন বিখ্যাত (বলা যাবে না) ছেড়ে যাচ্ছি, এখন আমরা (ডট ডট ডট) গেইটে” এইগুলা সব। তো, এইগুলা করসি আরকি। তারপর, আরো কী কী…একবার কী যেন…হেভিমেটাল গাইতাম আমি, আমাকে নামই দিছিল মেটাল রনি। চারটা না তিনটা রনি ছিল যেন। তো, আমাকে বলত মেটাল রনি। কারণ আমি অলওয়েজ হেভিমেটাল শুনতাম, আয়রন মেইডেন, মেটালিকা, যা যা ছিল তখন ঐ সময়ে। তারপর একদিন করলাম কি, সবাইকে বললাম যে সব বেঞ্চিগুলা ছুইড়া ফালাও ক্লাসের। তো, ঐটা করল। কে করসে পরে আর বাইর করতে পারে নাই। কিন্তু প্লটটা আমার ছিল। হে হে হেহ। ….আমি…আই ওয়াজ এ হিপি একচুয়ালি, হিপি ছিলাম, কিন্তু আবার ইয়া করতাম….।  হাহাহা…

(চলবে..)


(ট্রান্সকিপশনে নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ)

One comment

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s