কবিতা – রাদ আহমদ

বাদাম গাছের পাতা

বাদাম গাছের পাতা, না না গাঁজা গাছের পাতা, না না

মেপল লিফের পাতা বনানী
এগারো নম্বর রোডে

পুরনো বাড়ির পুরনো লাইব্রেরিতে দেখি
টোয়েন্টি লেটার্স টু এ ফ্রেন্ড
প্রচ্ছদে ম্লান লেখিকার ছবি ১৯৬৭
সাদাকালো উনি ৬৭-র সারা পৃথিবীর
মহিলার মত দেখতে, না না

বাদাম গাছের মত, না না, ক্লিষ্ট দিনে
বহে যাওয়া লীন নির্জন বাতাসে
এগারো নম্বর ভাসছে সিকিউরিটি ও
আধা সামরিক বাহিনীদের

বুটের ফিতায় মাথা কুটে মরা
খলসে মাছ
বনানী লেকে

illus1

সারারাত ধরে ধরে

সারারাত ধরে ধরে বিন্দু বিন্দু যোগ করবে বলে

ছেলেটা নেশার পথ ধরসিল তার পিতার কণ্ঠে অমূল্য
প্রশান্তির বানী, অসাধারণ গানের ভাঁজে
চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম তোমার সৈকতে
ঘুড্ডির মত মাছেকে স্টিং রে – বাংলায়
কি বলে জানি না তারে কসাইয়ের কোপে কাটতে দেখেসি – কুয়াকাটা যখনও
ব্যস্ততা মেখে অন্যরকমের হয় নাই – ওখানে নীরব

চাঁদের আভাতে মাতাল বন্ধুটা এক্কেবারে
আউট আউট বিন্দু বিন্দু মিলানোর জন্যে
বমি করে দেয়া শালের উপ্রে নকশা

দূরে টিমটিমে নৌকার সারি থেকে
প্রত্যাবর্তন করেসি আমি
নীরব হোটেল রুমে

 

তুমি ও দেশের ফ্রি এ্যাপ-টা ইউজ করতেছ

তুমি ও দেশের ফ্রি এ্যাপ-টা ইউজ করতেছ – ওইটা তো আসলে ওখানকার গোয়েন্দা সংস্থার একটা তথ্য সংগ্রহের কানুন

তোমার কি-প্রেস গুলা, প্রেফারেন্স, এই যে সকালে ‘লা পুন্টামিন্টো’ শুনলা

একটা কিশোরী মুরগির মত বারে বারে উদ্যমশীল তোমার আবেদনগুলা সাতমসজিদ রোডে
আবাহনী মাঠে নির্লিপ্ত ক্যানের কোক নিয়া বিকালকালীন প্র্যাকটিস দেখা

বাড়িতে অসুস্থ জন – তার অসুস্থতা টের পাওয়া কেবল দেয়াল ঘড়ির
সেকেন্ডের কাটা ছাড়া তার অস্তিত্ব একেবারে নাই বললেই চলে প্লেনের

ডানা যত মেঘ কেটে কুয়াশাময় বাস্তবতার উপ্রে দিয়া
যোজন যোজন দূরে – প্রত্যেক ১১ মাইলেই নাকি মানুষের মুখের ভাষার মধ্যে অন্তত একটা

পরিবর্তন পাওয়া যায়
একটা গভীরতা – এসকল একেবারে কিরামান কাতিবিনের খাতার মধ্যে

রেকর্ড হইতেছে হা হা
যে কফি তুমি অর্ডার দিছ

যে ভঙ্গিতে লুকায়ে নিছ রক্তিম মুখ
যে আওতায় একটা সুন্দর শিশুর উদ্যামতায় কোনো অর্থ খুঁজে পাইছো পৃথিবীর

সেটা পৃথিবীর অন্য পাড়ে একটা স্টোরেজের মধ্যে জমা
থাকুক না। সমস্যা কী?

 

আমি এবং সত্যি কথা

সত্যি কথা খেজুর গাছে ধরে।
ঝিম মারানো একটা ঘন প্রভাব আছে।
প্রজাপতিরা মৌমাছিরা বিদায় নিলে একে একে
তলানি হয়ে গ্লাসের নিচে সকালবেলা জমি সত্যি
কথারা ঐ নাভির মত শ্যামল রঙা
কী মসৃণ – তার কারণে ভেঙে পড়িছে চারপাশটা
চকোলেটের স্টিক হয়েছে দাঁড়িয়ে থাকা
লম্বা বাড়ি
কোকিল কালো এখনো এলো
না তো যে এ বসন্তে ?

সত্যি কথা জমা চিবুকে
দেখি গড়িয়ে পড়িছে চেনা স্টিলের কেস
ওখানে খুব নিজের পান নিজের সিগারেট জমিয়ে
রাখা আপনজন
কেমন কাটা পড়ে যাচ্ছে
ট্রেনের তলে এমন নিষ্ঠুরতার এ সকালবেলা
গ্লাসের নিচে তলিয়ে থাকা আমি এবং সত্যি কথা

illus2

আমাদের সে ঘরে

আমাদের সে ঘরে এমন কেউ ছিল যে কিনা ভুগতেছিল জ্বরে
ফুলদানী তে ফুল তাহাকে বলব কি না – সেটা ভাবি
অজগরের নীলচে ধাঁচে তার চেহারা
ফুটতে থাকা বুড়া মানুষ – তার হাড়িতে কালো কয়লা
ভালোবাসার সুবাস ঝরা এমনতর দিনে

জ্বলজ্বলে কী দৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করে ফেলল আমায়-
এবং জড়ো হওয়া যা ছিল ভঙ্গুরতা এমন সব
সেন্সিটিভ কথা বললে, জানালা তলে গাড়ি থামলে

তোমাকে নিয়ে যাবে অথচ দেখি আমার সবলতা
এসে জমল দেয়ালে কালো ছাই রঙের ছায়া জমেছে
তারা গ্রামীণ মেয়ে হয়েছে দূরে থাকছে দূরে দূরে

জরাগ্রস্ত কালো কফির বিক্রেতাকে আমি বলি
আমাদের সে ঘরে যে কি না থমকে থাকা থোকা থোকায়
ভোরের বেলা রান্না চড়ায়
এর অর্থ হলো যে – ঘরে সমৃদ্ধ সকাল হয়েছে

আগের দিনে একত্রিত খড়কুটো রা – একত্রিত অভিমানের তেরছা রূপে
এসে তাকাল – কিন্তু সেখানে তো সে ছিল না – না ছিলাম আমি
তাহলে দামী রোদের থেকে ভারি পর্দা সরাল কে

একটা করে একটা করে রিকশা মুখে নিয়ে আসল অল্প মধু
যে মৌমাছি আড়ালে থাকে – দেয়ালে তার ছায়া আঁকা
এখন দেখ – দেয়ালে ছোটো ফোকর আঁকা

কালো ফোকরে বৃদ্ধ চোখে নিরাপত্তা খুঁজে ফিরছে বাড়িওয়ালা
সে তো আসলে সুবিধাবাদী – অথচ তার
জয়-পতাকা রঙিন আছে কী সুন্দর উড়তে আছে – আমাকে কাছে
ডেকে নিয়ে সে অসুস্থতা এমন কথা জানালে পর
আমি তখন কুঁকড়ে যাওয়া পাতার সাথে সিমেন্টের মিল খুঁজি

মিহিন গুড়া দেয়ালে আঁকা নখের সাদা আঁচড় বরাবর
জ্বরে ভোগা সে আমাকে কথা শোনাল এমন:

মাঝে মধ্যে উঠতে পারি না তো তখন বিস্কিট আছে না?
সেগুলা তো খেয়ে নিতে পারো – শরীরে বল থাকবে সবল
তুমি বসবে রাস্তা ধারে ইলেকট্রিক তারের গায়ে

আর সেখানে দাঁড়কাকের চোখে কেমন
পালিশ করা পালিশ করা আস্তরণ দেখেছ না ?- ও তেমনই
ক্রোধ গামিনী ভাঙ্গতে গিয়ে জোড়া লাগানো নির্লিপ্ত দানা

মুঠাতে ভরে নিও না তা’লে আবহমান কালের পিছে
যে ফেউ লেগে থাকে – যে কিনা স্পাই – তোমার পিছে
ছুরি ঢোকাতে আর বখশিশটা নিতে ওস্তাদ

সেই আসলে হন্তারক সে
স্পষ্ট চোখে যে কথা বলে
যে ঝলসানো স্বাভাবিকতা, সুনিশ্চিত স্থিরতা ওর দৃষ্টিতে ফুটে হত্যার
অব্যবহিত আগ দিয়ে

সে স্থিরতায় আলোতে ভাসে আমাদের এ
মিল বিহীনা রঙিন আলো ঝিলিক দেয়া ঘর

কে যেন ছিল সেখানে যার চোখ জুড়ে অখণ্ড অবসর

 

রোজনামচা ১ লা বৈশাখ ১৪২৫

পান্থপথের মোড়ে আসলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুঁজতেছি একা ।

শীর্ণ বক, তীক্ষ্ণ চেহারার লাল জামাতে জড়ানো তরুণী, তরুণ
মৃদু বের করো মানিব্যাগ, পার্স, বয়সের
একেক সন্ধিক্ষণের কিছু ম্যাচিয়োরিটি আছে যা তেরছা বৃষ্টির সাথে ওয়াজের বক্তৃতার সাথে
গাড়ির লাইটে এসে ক্ষিপ্ত প্রতিফলিত, মথিত আমাদের এ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কোনো
পচনশীল দ্রব্য রাখি না আমরা তীক্ষ্ণ বকের মতো কী দিব তোমাকে
চাইলে রিকশা ভাড়া করে দেই? কিন্তু তাতে তো প্রকৃত চাহিদাটা এই
বৈশাখের প্রথম দিনের উৎসব ফেরতা অফিস বিহীন

কিংকর্তব্যবিমুঢ় প্রৌঢ় গাড়িরা ও রিকশার বেলে-রা
ঘুরানো চৌরাস্তায় নির্জীব মৃদু
প্রতিফলনে সুস্থিত সময় তোমার সাথে কিছু

কথা ছিল না কখনও তো কোনো প্রেম ছিল না কেন
মিছে ভুল বুঝো

*** *** ***

এই মতো আবেগের সস্তা শ্রম
পকেটে ভিতরে পুরে রাখা যেতে পারে একদল বলা যেতে পারে তাদের আনন্দ
নিরানন্দ খচিত পিছিয়ে পড়া রা কিভাবে পিছিয়ে পড়া রা

সামনের মানুষের পকেটে রাখো সঞ্চয় সত্যিকারার্থে গাড়ির নীল ও সবুজে মৃদু
কলাপাতা কলাপাতা থেকে চুয়ে পড়া
ভোর , বিছানার ওম থেকে চুয়ে পড়া শাড়ি থেকে

জড়ানো গা

তোমাদের সাথে কোনো প্রেম ছিল না তো

*** *** ***

সাঁই জি, এখানে বৃষ্টিতে জমা রাস্তা পারাবার জন্যে
পানি পাড় পানি পাড় রিকশারা বিশ টাকা

অন্তর্গত মানুষেকে খুঁজিলাম বহুক্ষণ প্রায় পুরা সন্ধ্যা জুড়ে
ডায়রি অফ এ্যানি ফ্র্যাঙ্ক
কিংবা উজ্জ্বল উপত্যকা সবুজ

ঝিরি লেক, সাথে ঠাণ্ডা মানুষকে উন্নত বানানোর পূর্বশর্ত – বিষুবীয় এলাকায়

পাঁচ মিনিটে তৃপ্ত – বাচ্চারা দ্রুত জন্ম লিলে
উন্নত দেশেরা ক্রমে আরও উত্তরে উত্তরে সরে যেতে যেতে লোকজন
কম তাদের ভাষাটা ভিন্ন তাদের মনের মানুষটাও ভিন্ন

*** *** ***

‘শান্তি’ তোমাকে একটা দালানের নামে স্থাপন করিয়া
ভিত্তি দেওয়া হয়েছে আজকে এরকম দেখেছি পেপারে খুব

চালু একটা পত্রিকা যা কিনা নেটের অভাবে টিকে আছে – রোদে দগ্ধ
মফস্বলে – রেলের গেটের পাশে যেখানটায় পত্রিকার স্টল কিংবা

ফলের আড়তে সাঁই
জি তোমাকে সবুজ ফলের উপরে দেখেছি কলাপাতা রং কিন্তু তাতে

কি বা হলো – তাতে শহরে উৎসবে কি বা হলো হাসা হলো ক্লিষ্ট
মুখের দু’পাড়ে টান টান বাঁধা নৌকার উপরে চড়া

পাড়ানি নেব না কিন্তু তোমার সাথে তো প্রেম ছিলনা কখনও

 

কথা বললে কথা

কথা বললে কথা বললে কথা বললে কথা
এবড়ো-খেবড়ো ডাল শিল্পীর তুলির টানে আঁকা
আতা গাছে তোতা গাছে ডালিম গাছের ঘ্রাণ বাঁকানো
তোতা পাখীর জিজ্ঞাসা কি পূরণ করছে ছায়া লম্বা
উঁচু জাহাজেকে মাটির উপরে তুললে তার
দেয়ালের সীমানা আকাশ ছোঁয়া শান্ত শীতল মরিচা
এসে দেয়ালে উড়িয়া পাখীরা শীতল ধাক্কা ধাক্কা
ডালিম ঘ্রাণে মৌ ঔ তৌ
ধাক্কা লাগা মৃত পাখী
কথাগুলাকে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো বাঁকানো বাহুর
অন্তরঙ্গ কাছে

ডালিম গাছের মৌওময়
কথা বললে কথা বললে কথা বললে শত
চ্ছিন্ন আতা তুমি

মেঘনা ব্রিজ দি যত দ্রুত পারো টান দাও

___

ড্রইং – মহসিন রাহুল


profile_pic[রাদ আহমদ (জন্মঃ ১৯৭৭) – কবি। বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে। পড়াশোনা সূত্রে মধ্যে কয়েক বছর  অস্ট্রেলিয়া ছিলেন। দেশে ফিরে উত্তরবঙ্গে গবাদিপশু ও ফলমূলের খামার করেন। বর্তমানে ঢাকাস্থ ‘তুলট’ তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী।  রাদ আহমদের প্রকাশিত বইঃ ‘বাঁকাসুচ ও অন্যান্য’, ‘এক টেবিলের অধিবাসী’, ‘ব্রথেল মালিকের কারপার্ক’, ‘দুপুর দুইটা বেজেছে’, ‘মিষ্টি বসন্তদিনে আমি অলৌকিক’, ‘তৌবাফুল’  – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]

1 comments

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান