আসুন একটা কথা পাড়ি
আসুন একটা কথা পাড়ি
জলের মতো গড়িয়ে যাবে ছায়া
ওহে প্রাচীন নৃত্য, বৃক্ষের রগে রগে নাচো
সেই নাচন হয় ভাপে মোড়া
লাগে ওম
জিরান আমার চক্ষুতলে
কাকতাড়ুয়ার বিমূঢ়তা ঝুলে ঝুলে লাল!
ওহে প্রাচীন বৃক্ষ, নৃত্যের ঘামে ঘামে বাঁচো
সেই বাঁচন হয় মদে মুখরা
আমাদের আদি বাণী,
নিগূঢ় ভাবানুষঙ্গ, জটা জটা মাথা
পেয়ালায় সবুজ ঘাগরায় অসহ্য বারতা
সেই কথাখানি পাড়ুন, পেড়ে আনুন
মজলিসে মাথানত গম্বুজ হয়ে,
চিত্রের মতো খুঁটিয়ে খোদাই করি– নীরবতা

আনন্দ
আনন্দ একটা অনুভূতি। যা বিরল কোনো মাছের মতো হুট করে লাফ দিয়ে আবার তলিয়ে যায়। অনেক দিনের চেনা একটা মুখ। অথচ, নতুন করে মূহুর্তে আবিষ্কৃত হয়। পুকুরের ত্বকের উপরে যেমন চাকচিক্যময় শিশু সাপ। এঁকেবেঁকে সদ্য গন্ধ নিতে শিখছে পৃথিবীর। তার জিভের ডগায় কচুরিপানার কচি নম্রতা! জলের নীচে পাহাড়ের আদি ডাক।
আনন্দ একটা চিকন লাল স্ট্র! একটু একটু করে ভেজানো গলা। যেমন ওঁর কথার মতো গুঁড়ো বিহ্বলতা। কোনো এক নিবিড় ঠাণ্ডা ফ্রিজের মাথার মতো চুপ।
আনন্দ তবুও অনেক বাক্য লিখে অনায়াসে মুছে দেওয়া। দাঁড় করিয়ে দেওয়া কেবল একটি – শব্দ।
মেগ্যান
আমি একটা ফুল্কির কথা বলছিলাম,
নিকষকৃষ্ণ আঁধারে ফট্ফট্ করতে করতে যে
উড়ে যাচ্ছিলো বায়বীয় শূন্যতায়—
প্রথমে নীল, তারপর লাল
মেগ্যান, তোমার দেবদারু দেহের অরণ্যে
আমাকে নির্বাসিত করো
গর্হিত অপবাদে, অথবা নির্লজ্জতায়
এক কাপড়ে, অথবা বিবস্ত্রতায়
আমি নির্বাসন চাই
জায়ফল সুগন্ধি উন্মত্ততা ছড়িয়ে
মসৃণ চিবুকে আয়েশি তিলক হোক তীর্থ
নৈবেদ্য হবে প্রতিটি চুম্বন,
তোমার খাঁজে খাঁজে
একটি সঙ্গমমাতৃক ক্ষুধায়
আমাকে নির্বাসিত করো।
ভাঙার মতো একটা শব্দ
ভাঙার মতো একটা শব্দ—
অথচ, তা নীল! ঠিক যেন নাম!
কারো নিজস্ব, চাইলেই ডাকা যায়।
কনকনে আলোর আয়না—
প্রতিফলন আর প্রতিসরণে মাপা,
যেন নূপুর পরা কিশোরী প্রতিমা,
চাইলেই- যার কাছে গিয়ে বসা!
ভাঙার মতো একটা অহংকার
অথচ, দূরের করে রাখা! নিঃশব্দে,
জিহ্বায় নুনের আসক্তি—
ঠিক যেন একটি নাম! অথচ, তা নীল

বেদজ্ঞ-১
নবজাতক রাতে ঘুমিয়ে পড়ার মতো
নির্ঘাত ঘুমিয়ে পড়ার মতো, এক ঘুম
শান্ত, মৌন বেদজ্ঞ, যেন
হাতে তার রোদ মাখা চিকচিকে, পদ্ম!
নিষ্কাম কোনো এক অপূর্ব মোহে
গৌর গৌতম— চোখ দেখে বলে দিলো
চোখের কোলেতে যেই কাজল বাঁচে
তাকে এক রোদ হতে দিও কাল ভোরে!
ঘুমিয়ে পড়ার আগে, সোনালি মুক্তো
মাথা ছুঁয়ে বর দিলাম তোমায়
ওঁ মনি পদ্মে হাম…
ওঁ মনি পদ্মে হাম!
বেদপাঠ চলে আঁধারে মুক্তির দেয়ালে,
স্থির মণি এক সোনালি আভায়—
সাথে সাথে জপে প্রাণ— তাঁর প্রতি
“য় বেদজ্ঞ জ্ঞানারাত সতিম..”
ঘুমিয়ে পড়ার মতো,
ঘুমোবার ঠিক আগে!
ঈর্ষা, অজ্ঞতা, হুন-রাগ ফেলে
নির্মল বেদজ্ঞ কানে কানে বলে
এইখানে পরিত্রাণ, এইখানে
লাল এক বিশ্বে
ঘুমিয়ে পড়ার আগে,
কাল তাই জেগে উঠো নিজস্ব রঙে
নিজস্ব আভায়, নীল অথবা
পানির নিবিড় সবুজ কোলাহলে
গায়ত্রী কিংবা এক ফিঙে পাখি হয়ে
ঘুমের মতো কিছু ভৈরবী রাগে
জেগে উঠি— ক্রোধহীন মনে
শিশুদের নির্ভয় স্বপ্নের মাঝে
বেদজ্ঞ পাঠ করেন নোভালিস—
দৃশ্যগত যা’ই আছে
দৃষ্টিগোচর করো আরো—
ঘুমিয়ে পড়ার মতো,
ঘুমিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে।

আনিনা তাহিন নেভিলা – চিত্রকর, কবি, অরণ্যপ্রেমী। প্রায় প্রায় নিউ ইয়র্কের জটিল জীবন ফেলে বনে পালিয়ে যান। ক্যাম্প পেতে থাকেন।