বৃষ্টির বিকল্প
একটা আসমানি ঝুলবারান্দা
মেঘের অংশত ভেঙে যাওয়া দেখে
শহরের কুমেরুস্বভাব জেনে নিন
‘ঋ’ এর ক্রমিক আঘাত থেকে চোখ যেন বেঁচে থাকে।

এমন সায়ন্তনী রাত,
বাতাসে ঝরছে ডোপামিন।
ঈষৎ শঙ্কাবিহীন যাবে
এই শীতের কয়েকদিন?
আমি হাত বাড়িয়ে রাখি
যদি ধরতে পারি দেয়াল,
একবার পিঠ ঠেকাবো
অন্ধকারে শ্বাসের শব্দ শুনেই
মৃত্যু আড়াল নিতে পারে।
সে গাইতেই থাকে
পেলব চোখে নিষিদ্ধ গান,
সে- খুব চাঁদের গোলাম, বিরহের দাস
আছে মেঘ-বিষয়ক জটিলতা,
বেঢপ এক জ্ঞানের পাহাড়-
শুধু ক্ষুদ্র করতে জানে।
যদি রাতই এমন সবাই দোষী
পাপতিক্ত জিভ মম জ্বালাক ডোপামিন
ভুলে যাবো গতকাল গেল দীক্ষালাভের দিন।
***
এই বাহারি পাড়ায় কে যেন
সারারাত যেপলিন বাজায়।
নভেম্বর এক দীর্ঘ রাত-
এর বিবিধ উপকুলে জাহাজ নোঙর করেছে
বিদায়ী আলোর আওতাধীন কালো কুকুর,
গুজব এই রাতে মৃত্যুর পাশফেরা থেমে থেমে
দেখি সম্পর্কচ্যুতি, ঝরে মুক্তাফল ঝরে নিকৃষ্ট মোহর, হিম।
চাঁদের জোৎস্নাহীনতা কেড়ে
তাকে নিঃস্ব বানায় এই শীত, নভেম্বর
আড়ম্বরহীন এই বিশ্রী পাড়ায় রহস্যগল্প বুনে
উচ্চতম ঘড়ির গীর্জাতে কে খুন হয়ে ছিল
পাঠায় তার কফিনে কফিনে গান।
নক্ষত্রের মধ্য-আকাশ
মানচিত্রের ডানাবিস্তার থেকে দূরে
গোপন থাকে সেই স্থান,
মাথায় নীরবতার ফাংকি টুপি পরে
চৌরাস্তায় দাঁড়াই, অস্ফুটে যা জ্বলে তার ছাই
নিভে গেল হাতের তালুতে। তুমি মোলায়েম রাত্রি
বিশাল নভেম্বর, এখানে কোন সাধুবাদ নেই
ছিল কিছুটা শবযাত্রা, কুয়াশায় মৃতদের নিম্নগামী স্বর
বিরহতর এক-ই বাঘের কাছে ক্রমাগত বন্দি হয়ে থাকা।
***
বসন্ত- এক জাহান্নামি কালো কুত্তা
মরক্কান আঙ্গুরের মত চোখ
আমি যার ভোরের পাউরুটি।
নির্ঘুম শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে, ভুরু জমাট
পা ঘামে, ঘাড়ের নিচে শিকড় ছাড়ে কদমগাছ।
এমন শজারুদিনে দুপুর আসে না কেন, ঘরের দেয়াল
কেমন নিষ্ঠুর হয়ে আছে- মেঘ থেকে অবিরাম শীতের শঙ্কাবিহীন
নিরাসক্ত ঝরছে ময়না ও মোতি।
এমন বসন্ত- তিন সন্ধ্যার ননী ও মাখন,
জঙ্গলে বৃষ্টি দেখার সবুজ জিপগাড়ি, গাদাবন্দুক
সে কেন এসেও আসিল না- এহেন নাটক
চৈত্রের ঝলসানো পিঠে ঘাম খুব হামাগুড়ি দিচ্ছে।
আত্মীয়-পরিজনহীন একদা নকল বৃক্ষের কাছে আশ্রিত,
দুইচোখে অনিত্য ও উপসংহার নিয়ে সুদূরতার ঢাল ঘেঁষে অসতর্ক
পড়ে আছি খাঁদে, জানিনা যাদু ও যাতনার প্রতিষেধকে আছে কেমন সান্ত্বনা।
***

এখানে নরম হয় রাতের হাওয়া
ছোঁয়া যায় তাকে, কিছুটা মাথা নামাই
নক্ষত্র দেখতে।
স্বর্গের সুর জানে যুবতী সপ্তর্ষি
ঈর্ষা থেকে। বাকিটা বয়সের অনভিজ্ঞতা।
বায়ুহীন ঘরে ইশারাই সম্বল
আর পর্দানশীন দেয়ালে দিন-গণনা,
এই রৌদ্রতাপের কালে
খাঁজকাটা কুমির ঘাঁই মারে নক্ষত্র দেখতে
তাকে ঐতিহাসিক কারণে কুম্ভীর বলা উচিত
যেমন শিউলি-কে তামাদি’ বলে ডাকে পোলাপান।
গোলাপি হাতি দিয়ে টাকা তুলছে গুলিস্তানে,
তার চোখে পিতৃপুরুষের যুদ্ধ, আধেক অশ্লীলতা
এই লতায় পা জড়াইনা বহুকাল,
স্বীকার করি- যেহেতু ধনুরাশি, ঘোড়ার কেশরে
জাগছে নিম্নচাপ।
ও নরম গ্রীষ্মের হাওয়া,
লুতুপুতু তোমাকে আসো কোলে তুলে রাখি
বৃষ্টির তুমুল ডাকাতির আগে।
***
রোদ পড়ছে। ঘনীভূত রোদ। আলুথালু মেঘ নির্বাপণে দরকার রোদ, গ্রীষ্ম। চিড়িয়াখানার দিকে বাঘ ঝলসাচ্ছে, বন্ধদোর কাঁপছে মানুষ। কার যে ভয়!
আপেলগাছে ক্রমাগত বিরহ মকারি করে- “বৃষ্টির আসা যাওয়া দেখে যাও কারো শরীরের ভাঁজে। তুমি তার সম্মোহিত ভুল? এই অপরাধবোধে তাহলে আবার ভিজে ওঠো।’’ সমাপতন মৃদু শূন্যে, প্রেমিকের ক্ষুধার্ত চোখের উপর। শিউলিতলে পাথর, পাথরে জবার লাল। ঐ লাল কি পৌরাণিক- অ্যাকিলিসের পবিত্র রক্ত, না লুথা তস্কর কোন, কস্তুরীচোর?
বেদেনীর কোলে দুধেস্নেহে বাড়ছে সাপ, ফুটছে ফণা। দেখো রোদ-ও প্রবহমান নুড়িপাথরকে বলছে- “ফাক ইউ, সুন্দর। কেন মেঘ আসে?…’’
***

আষাঢ়স্য এমন বিরহে
প্রকৃত নিদ্রাকে ধরতে গিয়ে
স্বপ্নের মৃদুমুখর দানা
ছড়ানো সাদা উঠানের কাছে
কে যেন গম আলাদা করছে
– এটা কি স্বপ্নদৃশ্য?
মেঘের ডাকে কামুক যারা
আত্মার চৌর্যবৃত্তি-তে
তাদের রিক্তপূর্ণিমা—
রূপার নাকফুলে চাঁদের আলো পিছলে যাবে
আমার স্বপ্নে বৃষ্টি হলো একটানা
লজ্জাপ্রবণ নিদ্রাকে স্পর্শ করে,
সারাদুপুর- প্রতারক তন্দ্রার চাতালে।

আজমাঈন তূর হক— কবি, পাঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র।
অলংকরণঃ অনামিকা দাশ পূজা