মূর্ত রাক্ষস – আজমাঈন তূর হক

১. মিথ্যার পক্ষে

সত্য—
তুমি আমাদের দশটা লাল পিঁপড়া
দেখাও কালপুরুষের সংসার,

মঙ্গলে যে মধু-মাতুলালয়
তার ম্যাপ সরবরাহ করো, 
তারপর দাঁড়াবো এসে
তোমার বাইপোলার পতাকাতলে। 

ততদিন লজ্জার আয়নায় 
তোমাকে দেখি, 
কেমন মুখচোরা তুমি 
বোনের ক্লোজেটে—
রাত হলে গোলাপি ফিকশন 
থেকে বসন্তের গোপন জন্মদাগ হয়ে যাও, 

নির্লজ্জ ময়ূরের মত তোমার ধ্বজাবিস্তার
এইখানে চলবে না, সত্যি

(রোমান্টিক কত ফুল 
লতা পাতা আহা
প্রেম নিয়ে লম্বা লম্বা কথা, লাভ নাই
পাড়ার মোড়ে পড়ে আছে প্লেটো-র কাটা মাথা)

তা’রে দেখবো না; পুরুষের পিতা
এই নগ্নতা সামলাও, জানি
রাত হলে ঠিকই মিথ্যার চাদরে লুকাও। 

সত্য, যদি পারো দশটা কালো বিড়াল দেখাও।

২. ন্যারেটিভ কবিতার ঝাঁক 

গীতল ও শীতল, অবিরল
ন্যারেটিভ কবিতার ঝাঁক যেন পঞ্চটনিক ট্রাক,
ছুটে যাচ্ছে হাইওয়েতে, বিভিন্ন মফস্বলের দিকে।

ঈশ্বরদী থেকে
ঘটে যদি ছান্দসিক বাঁক, অসময়ের বৃষ্টিতে
আবহাওয়ার দোষে—

পতিত হতে পারে নদীর পারে বালুতে
যেমন হয় ব্লুফিল্ম ও ভাঙা সাইকেল।

ঈশ্বরী দিদির নামে,
কবজির জোর সংক্রান্ত সবজি বাজারে
ইলিশ মাছের মৃত চোখ থেকে টুকে রাখা
যেসব কবিতা
ঝরছে ছবির দেশে
মার্গারিটা ও মনিবের বেশে,

সেইসব বিড়ালের চোখ আজ ঘাস—
মুথাঘাস, গরুর খাবার আজ তাদের হৃদয়,
মিষ্টি আম্রোপালির মত সমস্ত পদাবলী
এই ভরা ও মাহ বৈশাখের

সুবাসিত মুকুলের মত নেমেছে বৃষ্টির সাথে
লিরিক্যাল কিশোরীর আলতা ও নুপুরে,
হাইওয়েতে, সমগ্র বাংলাদেশ—
ন্যারেটিভ কবিতার ঝাঁক
ছুটে যাচ্ছে নদীপার ও কাশফুল পানে।

৩. মুনিয়া ডাকি না

মুনিয়া ডাকি না, তাই লিখিনাই বাংলা কবিতা, 
মেঘ জমে থেকে বৃষ্টি হয়না কেবল 
ধূলা ওড়ে কাগজের মত,
নিউজপ্রিন্টের গন্ধের মত 
তুমি দূরে যেতে থাকো ক্রমে 
যেমন মহাবিশ্ব সরে সরে যাচ্ছে প্রতিদিন ভোরে
চাঁদ ডুবে যাওয়ার পরে—
 
এহেন দৃশ্য থেকে ঝরে পড়ে মধু ও ময়ূর 
তাই মুনিয়া ডাকিনা আর

আমি কভু লিখিনাই বাংলা কবিতা, 
শব্দের শিরায় কামড় দিয়ে 
গোলাপের পাপড়ি ভেঙে ভেঙে
মিথ্যার নগ্নতা পড়ে থাকে তোমার উঠানে 
যাইনাই আমি তাই,

‘ঐ কপালে কী পরেছো’- নামে বিপ্লব করে যারা 
বোদলেয়ারের পায়ে পায়ে
ব্রোথেলের ছায়ায় ঘুরে ফিরে বিড়ালের মত, 

তাদের কবরে নন্দন পাঠাও
যেন মুনিয়া পাখির ভাজা মাংসই কবিতা,
চিয়ার্স ও উল্লাসের ইস্কাটনে 
তামাশা করছি বসে তব বাতায়নে। 

৪. প্রতিবসন্ত

কী এক দেশ—
ফেঁসে গেছি বেপথু কৌতুক থেকে
কালো অট্টহাসির ব্র্যাকেটে।

সেথায় শহুরে গান—
(কেন্দ্রবিমুখ টান, আর
অপরাপর আর্টের মতই) 
চাঁদমেঘফুল ঘিরে কণ্টকিত অভিযান। 

হিম চলে যাবে প্রায় –
এমন ট্রেইটর শীত, বাতাসে
শুধু মুকুলের গন্ধ ভালো তো
লাগেনা ফাগুনের মোহনায়।

পৃথিবীর মরমীলোকে 
নাযিল হবে শুশ্রূষার প্রতিশ্রুতি 
শান্তিজল কিংবা সরীসৃপ
এসব নিয়ে  মুগ্ধ মানুষ; 

— বিজ্ঞাপনে জ্বলছে বসন্ত 
অপ্রয়োজনীয়, 
একদম যোগাযোগ-বিকল।

৫. বনের দিকে

প্রায়ই জ্বরের ঘোর পাউরুটির মত মনে হয়। সারি সারি দরজায় ঝুলছে সাদা পর্দা— এমন মনোটনাস দীর্ঘ কোরিডর বিকালের ঝিমানো আলোর নিচে নির্বিকার পড়ে আছে যেন বিনয়ের মত বিশদ কোন মজুমদার।

সেখানে শোকসভায় ব্যাঞ্জো নিয়ে উপস্থিত হওয়া-তে হুলুস্থুল নিন্দা করল পাড়া-প্রতিবেশীর দল। চাঁদের গতিবিধি-কেন্দ্রীক স্থানীয় আলাপ শেষে একজন ছাদ থেকে লাফ দিলো পিথাগোরাস প্রমাণ করতে—  এইসবই জ্বরের ঘোরে। 

পাউরুটির দানার মত সামান্য অপরাধবোধ নিয়ে কিছু ইঁদুর মারা প্রয়োজন আছে। ঘুমন্ত মানুষকে মৃত ধরে নিয়ে আমাদের পায়ের আঙুল কামড়ায় হারামিগুলা। 

কালো বিড়াল দেখে যাদের যাত্রাপণ্ড হ’লো তারা এখন নির্দ্বিধায় চাঁদের নিচে বনের দিকে চলে যাচ্ছে।


আজমাঈন তূর হক— কবি, পাঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s