কারবালার গোলাপী আকাশ (মেসোজোয়িক পর্ব) – রবিউল আলম রবি

কালো গোবি মরু -  নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯২৮ ; প্রাপ্তিসূত্র - http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/black-gobi-1928
‘কালো গোবি মরু’ – নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯২৮ ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/black-gobi-1928

পাবলো নেরুদা

[প্রশ্ন]

*

আমাকে বলো
গোলাপ কি ন্যাংটা নাকি ওটাই তার একমাত্র পোশাক?

কেউ কি শুনতে পায়
চুরি হতে থাকা মোটরের আফসোস?

বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের চেয়ে
বেশি বিষাদময়
কিছু কি আর আছে এই পৃথিবীতে?

মৃত্যুর সময়
যদি হুশ না থাকে
কাকে জিজ্ঞেস করবো আমার মৃত্যুর সময়?

সকল পাতা কেন আত্মহত্যায় ঝরে পড়ে
যখন তারা হলুদ হয়ে যায়?

এটা কি সত্য
মাটির ডেরায় স্বপ্নেরও দায় আছে?

ভালোবেসে যায় সে
সেও ভালোবেসে যায়
কোথায় যায় তারা এতো ভালোবেসে?

কতোগুলো সপ্তাহ মিলে একটা দিন
আর কতোগুলো বছর মিলে একটা মাস হয়?

যে আলোয় আঁধার আলোকিত হয়
একই আলোতে কি তুমিও আলোকিত?

কাকে জিজ্ঞেস করতে পারি
কি সেই কাণ্ড
যা ঘটানোর জন্য আমার এই পৃথিবীতে আসা?

যেখানে তারা আমাকে হারিয়ে ফেলেছিলো
এটা কি সেই জায়গা
যেখানে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম নিজেকে?

শেষপর্যন্ত, জীবন কি
দুইটা নিরাকার নিশ্চয়তার মধ্যবর্তী সাবওয়ে?

তুমি কি বিশ্বাস করো
সামনেই আছে
অতৃপ্তির কাঁধে তোমার নিয়তির রঙ?

কোথায় সেই শৈশব
আমার মাঝেই আছে
নাকি চলে গেছে আমায় ফেলে?

সে কি জানে
আমরা কেউ কাউকে কখনোই ভালোবাসিনি?

কেনো এতো সময় ধরে
আমরা বড়ো হই শুধুমাত্র আলাদা হবার জন্যে?

শৈশব মরে গেলেও কেনো আমি বেঁচে থাকি?
কেনো আমরা দু’জনই মরে যাইনা শৈশবের মৃত্যুকালে?

বিষাদ আর স্মৃতি
মগজের হার্ড ড্রাইভে কোনটার ভার বেশি?

ডিসেম্বর আর জানুয়ারির মধ্যিখানে যে মাস
তার নাম কি?

যখন আমি ঘুমাই অথবা সিক
তখন কে আমার হয়ে বাঁচে?

আমি কি
কখনো কখনো শয়তান
নাকি সবসময়ই ফেরেশতা?

জ্যোৎস্নার জালে এগুলো কি
মাছ নাকি পাখি?

চাকা ছাড়াই কেনো আমি চক্কর খাই?
কেনো ডানা অথবা পালক ছাড়াই উড়তে যাই?
আর কেনই বা আমি দেশান্তরী হতে যাই?
যখন আমি জানি
আমার পাজরের হাড়গুলোও আর আমার সঙ্গে নাই

সব নদীর পানি মিষ্টি হলে
সাগর এতো লবন পেলো কোথায়?


[ভয়]

*

‘লাফ-ঝাঁপ দাও
শক্তি নাও, বলটা পায়ে নিয়ে সবার সামনে এগিয়ে যাও
আকাশে বাতাসে আর লোকাল সুইমিং পুলে
শরীর ছেড়ে ভেসে বেড়াও নিজের পাখনা মেলে’
ভালো কথা

উপদেশ দিলো-
ক্লান্ত হলে ‘একটু বোসো’
ব্যাথাটা বেড়েছে তো সোজা যাও
ডাক্তারি চেম্বারে, মাথা গিজগিজ
অশরীরি ভাইরাস করে নিশপিশ
‘কি হলো, কি হলো?’

আরও উপদেশ পেলাম-
লবন পানি আর আকাশ ছোঁয়া মেহগনি
কিছুদিন থেকে- ঘুরে ফিরে, দূরে
যেভাবেই হোক বেঁচে থাকো, প্লিজ যেওনা মরে
আসলে এ পৃথিবীতে শেষকালে
কিছুতেই কিছু আর যায় নাকো দূরে
অথবা আগের মতো আপসে আসেনা আর ফিরে

চোখ বড়বড় করে
তারা সবাই মিলে দেখে
এক্স-রে মেশিনে তোলা ছবিতে
আমার অ-ফুল অবয়ব আর
তার অন্তর্গত জটিলতা
আমি মানিনা তাদের দেখা
এ দেখায় আমি একমত না

সবাই মিলে শেষে তারা
কোন রকম কনফিউশন ছাড়া
ওয়ান আফটার অ্যানাদার
কঠিন কর্কশ আর নিদারুণ প্রহসনে
আমার কবিতাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে
সেই থেকে
ভয় আমায় তাড়া শুরু করে

বাতাসে মৃত্যুর সুবাস অথবা এক মগ ঠাণ্ডা পানি
সব কিছুতেই এখন আমার ভয়
আমি যেন লক্ষ্যে স্থির অথচ ভীষন মৃত্যুগামী

তাই ঠিক করেছি-
জীবনের এই স্বল্প সময়ে অথবা স্বল্প সময়ের এই জীবনে
আমি আর তাদের কারো প্রতি কোন মনোযোগ দেবো না
বরং সমর্পণ করবো নিজেকে প্রকাশ করা শেষে
আমার সবচে পুরনো বিশ্বাসঘাতক
পাবলো নেরুদার কাছে

প্রাপ্তিসূত্র - https://www.etsy.com/listing/74528800/pablo-neruda-stencil-portrait-on-mixed
প্রাপ্তিসূত্র – https://www.etsy.com/listing/74528800/pablo-neruda-stencil-portrait-on-mixed

[ভালোবাসা]

*

হোয়াটস রং উইথ ইউ
হোয়াটস রং উইথ আস
কি
হচ্ছে কি এসব?

বুঝা গেলো-
কর্কশ গলায় লোকাল ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে চিল্লাচিল্লি করা
পরিচিত রকস্টারের ভুল করে ফেলে যাওয়া
গিটারের ছয় নম্বর তারে শক্ত করে প্যাঁচানো গলা
তাই নিঃশ্বাসের লেনদেনে হচ্ছে ঝামেলা
মারাত্মক শ্বাস কষ্টে আছে
আমাদের ভালোবাসা

ইনহেলারে পাফ দিলে কষ্ট কিছুটা কমে
একইভাবে ঠিক কোথায় টান পড়লে
ইনফেকশনটাও
মুছে যাবে চিরতরে

এসব ক্ষতি ও ক্ষত থেকে
স্বেচ্ছায় সাইড হয়ে গেলে
যখন নিজের সাথে শুধু আমি
তখনও যে বিপন্নতায়
আমাদের রক্তে পচন ধরে
পুনর্জন্মে আমরা আবার হংস মিথুন হতে চাই
সেই বিপন্নতার নাম খুঁজতে গেলে
আসে ভালোবাসা

হোয়াটস রং উইথ ইউ!
এমন লাগছে কেনো তোমায়
এটাতো তোমার চোখ না
চেহারাতো এমন ছিলো না তোমার
এই শরীরতো সেই ভিড়ের কোন একটা
কোন স্মৃতি ছাড়াই
সঙ্গম শেষে, যা আর
কখনো মনে পড়েনি

বাদামি রঙের বিস্কুটের বয়ামের মতো
শব্দহীন
বাতাসহীন
এমনকি অস্তিত্বহীন এক শূন্যতাই শুধু
তোমার থাকা আর না থাকা জুড়ে

তবুও তোমার মাঝেই
যৌথ খামারের প্লট বুকিং, আর
তোমাকে নিয়েই
ইট পাথরের ঠোকাঠুকি
তোমার স্পর্শের গভীরে
তোমার আলোয়
শুধু এবং শুধুমাত্র অন্ধকার
সময়ের দাবীতে বেড়ে উঠা
তোমার দুই স্তনের ভাঁজে
অটোমেটিক অর্ডারে যেই বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তাতে
কেন বসন্ত রাগের সুর প্রবাহিত হয়
সে নিজেও জানে না

হোয়াই, হোয়াই, হোয়াই
মাই লাভ, হোয়াই?

প্রাপ্তিসূত্র - http://addicted-to-cherries.deviantart.com/art/orgosolo-06-pablo-neruda-70957238
প্রাপ্তিসূত্র – http://addicted-to-cherries.deviantart.com/art/orgosolo-06-pablo-neruda-70957238

IMAG0048[ রবিউল আলম রবি – চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক। ]

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s