কারবালার গোলাপী আকাশ (সেনোজোয়িক পর্ব) – রবিউল আলম রবি

'নিঃসঙ্গ আগন্তুক' - নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩১ ; প্রাপ্তিসূত্র - http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/lonely-stranger-1931-1
‘নিঃসঙ্গ আগন্তুক’ – নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩১ ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/lonely-stranger-1931-1

বিস্কুটের আয়নায় হার্টলেস ফেউ

এই যে হাঁটছো, হেই ইউ-
কি দেখছো দূর উদাস?

এই রাস্তা আর রাস্তার গাড়ি
গাড়ি ভরা নিষ্প্রাণ
শার্ট-প্যান্ট-শাড়ি
তুমিও নও তার অজানা কেউ
বুকে ছুরি নিয়ে পিছু হাঁটে তোমার
হার্টলেস ফেউ
সুনসান রাস্তায় খুন হবে তুমি
জানবেনা কেউ

হেই ইউ, দূর উদাস
কলিকাল বলে, খুন হবার আগে
তোমার খুনেও একই উত্তাল ঢেউ
ঢেউ ভেঙ্গে গেলে গলিতে একা
অনুসরণের ফেউ

অলস রাতের গলিতে অলিতে
মৌ, মুখোশের আঘাতে
জুডাসের মাথার খুলি বাঁচাতে
সুনসান রাস্তায় নেই আর কেউ
শুধু ছুরি নিয়ে পিছু পিছু
হার্টলেস ফেউ

সাবধান, দূর উদাস
অতিথি পাখিও আদতে হাঁস
না’লত-এর রাস্তায়
জাফরান সুবাস
বাতাসের সাথে জুয়া খেলে
পুরান পরিহাস

হয় বারুদের অপচয়
কিংবা ফুলের ভয়
পায় কেউ কেউ
ছুরি বুকে পিছু হাঁটে
হার্টলেস ফেউ

(বিস্কুট গান গায়না
তবুও রাজ্যে বিস্কুট খাবার বায়না
হার্টলেস ফেউ আততায়ী
নাকি বিস্কুট খুনের আয়না?)


ক্ষুরের নিচে প্রানের অনুনয়

কথা-বার্তার মতো বিশৃঙ্খল নয়
তবুও কি এটা- শুধুই অকারন ভয়
নাকি ভুল বুঝে চুল কাটা ক্ষুরে
অবুঝ অনুরাগ চোখ পেতে রয়
গলাকাটা ভালোবাসার আকুতি
প্রাণের অনুনয়


সিলসিলায় জমা মিথ

১.
‘মনে লয় ভইরা দিয়া
পইড়া থাকি
বকুল তলায়’

তোমার আকঙ্খায় উত্থিত মেশিন
জায়গা বরাবর হান্দায়া দিতে, নাকি
প্রয়াত সরোবরে আপন গহবরে
তুমি জন্ম দিলা আবার নিজেই নিজেরে
কিন্তু তোমার বন্ধু অ্যালেক আবার
সে তো তোমারই সাগরেদ, ফলে
পেট ও পিঠের একই ভুল বারবার করে
চাঁদনি থাকতে কাম ফালায়া যে-ই সোনা রূপার ফারাক বুঝাইলা তারে
চাঁদ মাম্মা ডুইবা গেলে সে-ই খোদার আরস টাইনা নিচে নামায়া ধরে

হায়, ‘অখন্ড বিশ্বের অনন্ত আকাশ তলে
স্রষ্টার সৃষ্টি’ বুক পকেটে ভরে
পৃথিবীর সমস্ত বকুল আর উত্থিত মেশিন
কলাবাগানে আইসা নীরবে ঝরে পড়ে

আসো, পরের স্টেশনে যাই
এছাড়া ক্যামনে নিস্তার পাই-

২.
এ গল্পে ভইরা দেয়ার মেশিন
অথবা পইড়া থাকার কোন বকুল তলা নাই

এখানে স্রোত বিপরীত
কিংবা এইটাই ঠিক
পুরনো নৌকায় দুলতে কিংবা ভাসতে
না পারার আক্ষেপ দেখে- একলা নাবিক
তার কথা রাখেনাই মনে আইসবার্গ
চুদে দেয়া মেশিন টাইটানিক

কলাবাগান আর পোস্তগোলার যোগাযোগ
কি আদৌ কাল্পনিক!
কমন চিপায় পইড়া চাঁদ ও চাঁদনি বুঝায়
শুধু মেশিনটাই ঠিক
ষান্ডার তেল মেখে- এই সিলসিলা
স্রেফ জমে যাওয়া মিথ!

'মঙ্গোলিয়ার পেয়ালাধারী' - নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩৭ ; প্রাপ্তিসূত্র - http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/the-holder-of-the-cup-mongolia-1937
‘মঙ্গোলিয়ার পেয়ালাধারী’ – নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩৭ ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/the-holder-of-the-cup-mongolia-1937

স্মৃতি কেনা-বেচার বাজার

তামামশুদ কার দায়?
বারো-ভূতে মিলে মাটি খুড়ে মাটির নিচে যে মাছের সন্ধান পায়
সেই মাছ জলের অতল ছেড়ে যে ডাঙ্গায় সেখানে
নাড়ি কাটা যে ধন
তার জন্মের অনুক্ষন
যেনো মেঘে ঢাকা আমাবস্যায় স্মৃতির আলোর পাতা জালে
একে একে ধরা দেয় বিস্মরণের কানা মাছি
ভোঁ ভোঁ শব্দে এইসব কানামাছি কার গান গায়?
মগের মুল্লুকে জন্মদান
নাড়ি ছেড়ার আগে আগেই
যখন নাড়িতে নতুন প্রাণ
সুরের ভেলায় তখনি বাজতে শুরু করে
নতুন প্রানের গান
এই গান- জন্ম দেয়
মিলনে বিরহ দেয়
জখমে নতুন ঘা’য়
সুরে সুরে কাল পূরবী
করিম খাঁ স্থির তবুও ক্ষুর পায়ে লালন অবিরাম দাবড়ায়
কালপূরবীর পর বসন্ত রাগ
আহ! দুনিয়ার মসনদ, সেও সুরে সুরে
মিহি গলায় ইলিশ চোরা বিড়ালের আবদার
চলো মানুষের বাগানে
সেখানে আমোদে-প্রমোদে যাচ্ছেতাই
স্মৃতির বাজারে হরদম কেনা বেচা
চোখ থেকে চোখ- বাসি অনুযোগ
কতোদূর এইভাবে পালাই পালাই!


অপরিচিত জানাজায় মুর্দার জন্য মোনাজাত

কুয়াশার আঁধারে সে কি লাল!
দেখতে দেখতে কুয়াশা কাটে
এখন সকাল
ঘুম আসে, ঘুম চলে যায়
অকারনে
অসময়ে
শীতের বাতাস ঘরের পর্দা কাঁপায়
টেনশন ক’রনা
আমি কোন মৃতদেহ নই
শীত লাগলে এখনও আমার
চেনা গন্ধের নরম কাঁথা চাই
হয়তো এভাবেই
আমরা নকশীকাঁথার আদর এড়িয়ে যাই।


অপেক্ষার গান

‘তার ব্লু ডেনিমের সামনের ডান পকেটে রাখা
সিগারেটের প্যাকেটের পাশে দেশলাইয়ের বাক্সে
লাল বারুদ মাখানো যে তিনটা কাঠি আছে
তার যে কোন একটা হলেই আমার চলবে
সে আসছে-‘

গায়ে গ্যাসোলিন স্প্রে করে
অপেক্ষমান আততায়ী

'মরুর কবর' - নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩০ ; প্রাপ্তিসূত্র - http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/tombs-in-the-desert-1930
‘মরুর কবর’ – নিকোলাস রোয়েরিক, ১৯৩০ ; প্রাপ্তিসূত্র – http://www.wikiart.org/en/nicholas-roerich/tombs-in-the-desert-1930

[ তিন পর্বেই নিকোলাস রোয়েরিকের ছবি ব্যবহার করা হইল। তিনি রাশান শিল্পী, দার্শনিক, প্রত্নতাত্ত্বিক। গোটা দুনিয়া ঘুইরা বেড়াইছেন। তাঁর জন্ম রাশিয়া, ১৮৭৪ আর মৃত্যু ভারতে, ১৯৪৭।  নিকোলাস রোয়েরিক ও উইকিয়ার্টের প্রতি ভালবাসা – নয় নাম্বার বাসের হেল্পারগণ ]



IMAG0048

[ রবিউল আলম রবি – চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক। ]

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s