আমার দর্শন নাই। আমার আছে ভাষা। আমি কিছুটা লাঁকা পড়া লোক। আমি একমত না হইয়া পারিনা যে ভাষা আমাদের অবচেতনরে তাঁর ফাঁকফোকরগুলা দ্বারা কতটা নিয়ন্ত্রনে রাখে। আমি ভাষা স্থুল অর্থে বুঝাই না। বিলাইয়ের তাকায়ে থাকাও ভাষা। বাচ্চাদের অকারণ ইঙ্গিতও ভাষা। বাংলা ইংরাজি এগুলা ভাষার স্টুপিডিস্টিক শ্রেণীবিভাগ। বেইল নাই। ভাষা আমার ক্লোজফেরেন্ড।
স্টিফেন হকিং-এর মত দৃষ্টি নিয়া কইতেসিনা। দর্শনরে বাতিল করিনাই কিন্তু। তিনি কইসিলেন, “ফিলোসফি ইজ ডেড”, সেইটা তাঁর জ্ঞানের ক্ষমতারই প্রকাশ। আমি জ্ঞানের ধ্রুবকত্বের বিপক্ষে। জ্ঞান, তথাপি ভাষা পাল্টাইতেই থাকে। এইটাই বরং কনস্ট্যান্ট। আমি
লাইফের দিকে একটানা তাকায়া আছি। পাতা পড়ে, চোখের। তবে কম। ভাষারে নিয়াও একা বইসা থাকা আর কত? আমার বাইঁচা থাকা সমালোচনামূলক।
একটা বাঁশির সুর মন-মেজাজে অকারণ বাইজা যাইতেছে।
তবে, ভাষা আমার প্রেমিক না। আমার প্রেমিক আমার থেকে বয়সে বড়। তাঁর সাথে দেখা হঠাৎই হইয়া যায়। দেখা যায়, সে দামি সিগারেট টানতে পছন্দ করে নীল টি-শার্ট পিন্দা। হেহে।
আমি কি নীৎশের মত কিছু লিখতে চাচ্ছি? না। কারণ, ভাষা বা ধরেন এক্সপ্রেশন। নীৎশের যেটা খুব প্রিসাইস। বা তিনি ভাবতেন। আমার এপ্রোচ ক্লাউনের। নিজে যা লিখি তার উপরই নিজে হাইসা মরবো। কারণ, ভাষা তাঁর ফাঁকফোকর ধইরা রাইখা আগায়। (বা পিছায়; ডিপেন্ডস্) বুঝিবা একদিন এই স্পেসগুলাই খুব জোরে হাসতে থাকবে। আমার উপর
আমি টোটালিটির গান গাইনা। অপছন্দ করি। আমার লেখায় বা চিন্তায় কেউ মন্তব্য করতেসে, “ভাই খুব গুছানো লেখা”, এইটা আমার দুঃস্বপ্ন। আমাদের বিয়িং কোনো টোটালিটিতে বিলং করেনা। না করে ভাষা।(ইনস্ট্যান্সে করলে করতে পারে) ভাষারে জোর কইরা টোটালিটির দিকে ঠেইলা দেয়া তার অপরাপর সম্ভাবনারে খারিজ করে। বরং, ভাষা তাঁর স্পেসগুলার মাধ্যমেই ক্রিয়াশীল।
অর্থ খুঁজতে যাওয়ার এপ্রোচ নিয়া আমার ভাবার নাই। আমি মনে করি অর্থ নাই; আছে অনর্থ আর অনর্থেরও না-থাকা।
আসেন, হগলেরে সম্ভাবনায় থাকতে দেই।
আমি বিয়িং রে একটা প্রোগ্রামের মত দেখি। কীভাবে, বলি। ধরেন, একটা কম্পিউটার গেইম, যার ভিতরে আছে জীবন, যাপন, সুখ, বন্ধুত্ব, মারামারি, মরণ। কেউ একজন ধরেন এমন একটা গেইম বানাইলো। কয়েকজন খেললো সেই গেইম। এখন গেইমের ভিতর, এক লোক অপর লোকরে মাইরা ফেললো। গেইমের মধ্যেই অপর কিছু লোক বলতেসেন, ” আহা, মাইরা ফেললো লোকটারে, আহারে, নিরীহ লোকটা” , বা এই ধরনের কিছু। বাইরে যে গেইমটা খেলসেন, তার কাছে এইটার কোনো আকর্ষণ নাই , নন্দন নাই। এইটা তার কাছে প্রোগ্রামের একটা ফাংশন মাত্র। বিশেষ কিছুনা। তেমনই হয়তবা লাগে আমাদের অস্তিত্বকে বাইরে থেকে। অবশ্যই চইলা আসে প্রোগ্রামারের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেইটা আমি জানিনা, দিবনা, দিতে পারবোনা। এইটাই আমাদের ভাষার, তথাপি জ্ঞানের ফাঁকফোকর। এইখানে আমি অধিবিদ্যার আলাপ আনবোনা। দে-রি-দা’র কথা আসতে পারে। আমাদের যেইটা বুঝতে হবে দেরিদা, মানুষের কোনো এক মুহূর্তে বানানো, তারপর থেকে পশ্চিমে প্র্যািকটিস্ִড অধিবিদ্যার সমালোচনা করছেন। ধ্বংস করসেন তাকে। আমি কিন্তু মানুষের বানানো কোনো অধিবিদ্যার আলাপ করিনাই, ঐটা ভাষারই নিজস্ব। নিয়ন্ত্রনহীন।
আরেকটা উদাহরণ দেই? ধরেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ একটা। নিউক্লিয়ার অস্ত্র পরীক্ষা, টেস্টিং। অনেক থিউরি, তার সাথে ডাটা সব জুইড়া একটা পারফেক্ট পরীক্ষাও তথাপি পারফেক্ট না। এক্সপেরিমেন্টের ত্রুটি হালকা থাইকাই যায় থিউরির সাথে পর্যবেক্ষণের।
এইটার সাথে ভাষার স্পেসগুলার ক্রিয়ারে মিলাইলেও মিলাইয়া চাইতে পারেন। আমার প্রেমিকের সাথে দেখা হয়। বড়স্টেশনে। প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে আমরা কাঠে পেরেক মারি। নৌকা বানাই। আমি ভাবি, কাছে থাইকাও ক্রমশ দূরে দূরে বিচরণশীল যে ‘তুমি’, সেইটা কি সে-ই? সে তর্ক করে, বলে, ” তোমার লেখায় এত কম সমাজতন্ত্র আসে, আহা, ক্যানো যে…” আমি হাসি। কারণ সে বয়সে আমার সিনিয়ার। তাঁর ইংরেজি ঘুরে ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টে। বাতাসে দোল খায়। বড়স্টেশনে।
আমি নতুনরে কামনা করি। আমার সাহিত্য সমালোচনার গ্রাউন্ডও সেইটা বটে। আমি ভাষায় নতুনত্ব খুঁজি। বোধ বা ভাবনার ব্যপারটায় আমার আস্থা কম। দুইটা কি ততোধিক মানুষের বোধ একইরকম হইয়া যাইতেই পারে। তবে, লেখায় ভাষাটা বা প্রকাশভঙ্গিমা বা বলার এপ্রোচটা নতুন বা আলাদা হইলেই আমি সেই সাহিত্যকে ভালো বলি। এমন হইতেই পারে আমার এক লেখকের লেখা খুব ভালো লাগে, তবে তার লেখায় নতুনত্ব নাই। কবিতা, গল্পে নতুনত্ব কায়েম করার ওয়ে হিসাবে আমি ভাষাকেই দেখি। যে কারণে আমরা জীবনানন্দ থেইকা আলাদা(নতুন) বলবো উৎপলকে, উৎপল থেকে আলাদা বলবো মৃদুল দাশগুপ্তকে। গল্পের ক্ষেত্রেও উদাহরণ দেয়া যায়। হাসান আজিজুল হকের এপ্রোচ বেশি নৃতাত্ত্বিক, কম রাজনৈতিক, যেখানে ইলিয়াসের এপ্রোচ তো পুরাই রাজনৈতিক।(তাও মার্ক্সীয়।)
আমি অসুন্দরেরে সামনে আনতে চাই। কারণ, শিল্পের যেই বানানো সৌন্দর্যবোধ — তারে প্রশ্ন করা জরুরি। অসুন্দর আর সুন্দর তো আপেক্ষিক। স্পেসিফিক না। তাই, আনইউজুয়াল বইলা যেই ধারণা তা তো বিবেচনাহীন লাগে আমার।ধরেন গল্পে, কবিতায় একটা কাঠামো দাঁড় করায়া দেয়া, ” এইভাবে লেখা উচিত”; এগুলা তো ভাষারেই আটকাইয়া রাখে। তাই, মানুষেরে ভাষা নিয়া কাজ করতে আমি ইনস্পায়ার করতে আমি পছন্দ করি। কারণ চিন্তার যে অরিজিন, তারে গুতাইলে তো একটা উত্তর আহেনা গো, বরং আরো আরো সংকেতের দিকে সে আমারে তোমারে নিয়া যায়।
আমি আমার প্রেমিককে জিগাই, “ কবিতা ক্যামোন লিখতেছ ইদানিং? ” সে গম্ভীরভাবে গম্ভীরতা চোদায়। বলে, “একটা কবিতা লেখা যাবে, দাঁড় করানো যাবে; এমন আকাঙ্ক্ষা কিছু অতিরিক্ত দাড়ি-কমা-ড্যাশ-কোলন এনে দেয় চিন্তাভাবনায়। এই চিন্তামূলের থেকেই দূরে সরে এসে দাঁড়াতে হয়। জাহাজের ডেকে। শরীর থেকে শরীর পৃথক করে দিচ্ছে রৌদ্রসীমানা, ছায়াসীমানা। হয়তবা ঢেউ এসে এখনো নাড়াবে জাহাজটাকে। ঢেউয়ের দুই পা ফাঁক। তার চূর্ণ হয়ে যাওয়াকে তুলনা করা যেতে পারে। ডাস্টবিন, যোনিচিহ্ণ, পতনফুল”। আমি ব্যাঙ্গ করে কই, “কবিতা এতো স্ট্রিক্ট নাকি তোমার লগে?” সে হাসে। তার হাসি ব্রিটিশ অ্যাকসেন্টের ভাওয়েলের মতো। লম্বা।
আমার বন্ধুরা আমাকে উদাসীন ভাইবা থাকেন। ব্যপারটা এমন না। আমি ঘটনার ঘইটা যাওয়ার সম্ভাব্যতায় আস্থা রাখি। কিছু একটা ঘটলে মনে হয়, এইটাই ঘটার কথা; তার বিপরীত কিছু ঘটলেও মনেহয় এইটাও হইতে পারে। বা, এছাড়া আরো আরো সম্ভাবনা।
একদিন আমার প্রেমী আমারে কয়, “অন্ধকারে মদ খাইতে ভালো লাগে”। আমরা প্রায়ই মাছের আড়তের পাশ দিয়ে হাত ধইরা হাঁইটা যাই।

[পাট ওয়ারী – ছাত্র(আসলেই কি?), বেকার(টিউশনি করাইতে আগ্রহী) ]