তারা-মণ্ডল রূপিণী : পাল যুগের কয়েকটি ভাস্কর্যে মূর্ত তারার রূপবিশ্লেষণ /সৌরভ রায়

তারা বজ্রযানমতের মুখ্য দেবী। তাই মূর্তিতত্ত্বের বিচারে তারার রূপবিশ্লেষণ করতে গেলে বজ্রযান মূর্তিতত্ত্বের গোড়ার মুশকিলগুলো জানা জরুরী। সেই মর্মে কিছু হিসেব নিচে পেশ করা গেল।
 

“শুধু নেবেস্কি-য়োজকোউইটজের অপ্রধান তিব্বতি রক্ষক দেবতাদের মহাআকর গ্রন্থের ফর্দতেই ২,৯৭৬টি নাম, সাথে অন্ততঃ একটি করে মূর্তি বা ছবি।
চন্দ্র ও বীরের ২০ খন্ড দেবতাদের ছবির বইতে ৫,৫০০ টি ফটো প্লেটে রয়েছে প্রায় ৭৫৬ জন দেবতার ছবি, আর এই বইয়ের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে রয়েছে ৩০০ টি দেবতার নাম। কিন্তু  নেবেস্কি-য়োজকোউইটজের বইয়ের সাথে মিলিয়ে দেখলে মাত্র ৪৫ টি নাম মেলে।
দেবতাদের সংখ্যা এত বেশি আর তাঁদের রূপের তফাৎ এতই কম যে মূর্তিতাত্ত্বিক পথে ঠিক ভাবে তাঁদের শনাক্ত করা সহজ না। খুব চেনা দেবতা না হলে, আর বইয়ের ছবির সাথে না মেলাতে পারলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও ভুল এড়ানো কঠিন।”


বজ্রযান দেবকুলের ও তাঁদের রূপবিভেদের এই বাড়বাড়ন্তের ব্যাপারে নানা বিদ্বজ্জনের নানা মত।    নিচে আলোচিত কারণটি ধর্মতাত্বিক ও বুদ্ধের তিনটি কায়া বা ‘ত্রিকায়া’ সংক্রান্ত (কারণ সব বজ্রযান দেবতা বুদ্ধকায়াপ্রবাহসম্ভূত আর তাঁদের বিভিন্ন রূপ, যেমন তারার, সেই প্রবাহেরই মূর্ত রূপ)। 

বুদ্ধের এই তিন কায়ার মধ্যে সবচেয়ে উচ্চকোটিতে রয়েছে ‘ধর্মকায়া’ যা অসীম ও নিরাকার এবং যা একমাত্র বুদ্ধ্বত্বপ্রাপ্তরা প্রত্যক্ষ করতে পারেন এবং এটি সত্যেরই আরেক রূপ; নিম্নতর কোটিতে রয়েছে ‘সম্ভোগকায়া’ যা কোন আনন্দঘন মুহুর্ত বা নির্মল আলোতে প্রত্যক্ষ করা যায়; আর সবচেয়ে নিচে রয়েছে ‘নির্মাণকায়া’ – যে কায়া নির্মিত হয়েছে, যে কায়া স্থান ও কাল দ্বারা সীমাবদ্ধ ও সেই সীমিতরূপে প্রত্যক্ষ। মানুষী বুদ্ধদের ক্ষেত্রে ‘নির্মাণকায়া’ তাঁদের মরশরীর এবং অন্য সব দেবতাদের ক্ষেত্রে ‘নির্মাণকায়া’ হল যে রূপে তাঁরা উপাসকদের দেখা দেন। মূর্তিতত্ত্বের সব আলোচনা অতএব ‘নির্মাণকায়া’ – যে কায়া নির্মিত হয়েছে – মূলত তাতেই সীমাবদ্ধ। ‘ধর্মকায়া’ অরূপ, অতএব তা রূপবিশ্লেষণের আওতার বাইরে। ‘সম্ভোগকায়া’-র রূপবিশ্লেষণে্র প্রসঙ্গটি আরেকটু জটিল।

“নিরাকার ‘ধর্মকায়া’ সম্ভূত হয় বাস্তবতার পরম প্রকৃতিতে বুদ্ধের সম্যক দৃষ্টিপাত থেকে – এক অর্থে তা বুদ্ধের জ্ঞান – বাকি দু’টি সাকার কায়া বুদ্ধের করুণাসম্ভূত, যে করূণা অন্যের সহায়তায় সদাই উন্মুখ। অতএব, এই দু’টি সাকার কায়া অগণ্য এবং নানা স্থানে এবং নানা কালে যেখানে যখনই জীব নির্বাণপথের পথিক, সেখানেই দৃষ্ট। সেই কারণে, বুদ্ধের সাকার কায়া যদিও বুদ্ধের করূণাসম্ভূত, তার রূপ পরিবর্তন হয় উপাসকের পুণ্যের উপর নির্ভর করে।” (এভেনডন, ৪১৪)

উপরের আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে, উপাসকের ক্ষমতা রয়েছে কোন রূপে সে বুদ্ধকায়াকে উপাসনা করবে তা নির্বাচন করার, কিন্তু এই নির্বাচন ক্ষমতা তাঁকে সীমিত রাখে একটি রূপের মধ্যেই। কারণ নিরাকার কায়া বেশীর ভাগ সময়েই সাধারণ উপাসকের বোধের অতীত এবং আগ্রহের বিষয়ও নয়।

স্বনামধন্য আমেরিকান নৃতাত্বিক ডেভিড জি মেন্ডেলবামের মতে, যেকোনো ধর্মে দেবত্বের দু’টি মাত্রা থাকে, অলৌকিক ও লৌকিক। অলৌকিক দেবমণ্ডলী সদাশয়, মহাজগত পালনে রত ও অতিদীর্ঘ কালচক্রের অনুসারী। লৌকিক দেবমণ্ডলী ভক্তের দৈনন্দিন সুখ-দুঃখবিধান, আপাততুচ্ছ কিন্তু অপরিহার্য চাহিদাপূরণে রত, এবং নিয়মিত তোষণ ও পূজা ব্যতীত রুষ্ট এবং অমঙ্গলকারী।   

পূর্বভারতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে পাল ও সেন রাজত্বকালে বজ্রযানের প্রসারের গতি ধীরে ধীরে অলৌকিক থেকে লৌকিকের দিকে যেতে থাকে।
 
যদিও উপরের আধ্যাত্মিক ও নৃতাত্বিক ব্যাখ্যা আমাদের ‘তারা-মণ্ডল’ অভিযানে সহায়তা করে, কিন্তু দেবী তারার অগণন রূপের সমাবেশকে বুঝতে নিম্নোক্ত ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাও জরুরী।
 
“বৌদ্ধধর্মের মধ্যে দেবত্বনির্মাণ প্রক্রিয়া দ্বিধান্বিতভাবে শুরু হয়েছিলো যখন আদি বৌদ্ধধর্ম ধীরে ধীরে মহাযান হবার দিকে এগোচ্ছিল। খৃষ্টজন্মের পরবর্তী শতকগুলিতে ধীরে ধীরে বোধিসত্বদের আদিরূপের উদ্ভব হচ্ছিল,পরে এই দেবত্বনির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়, যখন যোগাচার দর্শন পূর্ণরূপে বিকশিত হয় এবং গুপ্তযুগের সমাজে মান্যতা পায়। কিন্তু এই দ্রুতি সব সীমা ছাড়িয়ে যায় যখন বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন নীতিপরিবর্তনের কারণে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম পালযুগে বিপুল বিস্তার লাভ করে…আদি দেবমণ্ডল বিস্তারিত হল এক বিরাট দেবসভায়…প্রতিটি দেবতাকে দেওয়া হল তাঁর নিজস্ব পবিত্র বীজ-মন্ত্র, বা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে প্রতিটি দেবতা হয়ে উঠলেন এক একটি বীজমন্ত্রের মূর্ত রূপ…এমনকি প্রতিটি বীজমন্ত্রের প্রতিটি অক্ষরের দেবরূপ গড়ে তোলা হল।প্রতিটি নক্ষত্র, রাশি, কাক, পারমিতা, বসিত, পুজোপকরণ (যেমন ফুল, ধূপ, দীপ, গন্ধ ইত্যাদি) এবং আয়ুধদের দেবরূপ দিয়ে ক্ষান্ত না থেকে বজ্রযানীরা সব প্রকারের উচ্চ ও নীচ মানুষী কামনার দেবায়ন করে ভিন্ন ভিন্ন রূপদান করেছিলেন…তদুপরি দেবমন্ডলে উপস্থিত আদি দেবতাদের প্রত্যেকের রূপের বহুধাবিভাজন করে নব নব দেবনির্মাণ করেছিলেন…”8


বজ্রযান দেবমূর্তির এই প্রাচুর্‍্যের মধ্যেও (যার মধ্যে তারার মূর্তির সংখ্যা অগণন) তারার মূর্তিতাত্বিক আলোচনা সীমিত ছিল বহু বছর – পুরাতাত্বিকরা ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে তারার বহু মূর্তি পূর্বভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎখনন আর সংগ্রহ করার পরেও। এর কারণ মূর্তিতাত্বিক ও ঐতিহাসিকভাবে ভাবনার খোরাক যোগায় আমাদের। 

“এতাবৎকাল সংগৃহীত বিবিধ প্রতীকময় এই সব মূর্তি, যা বহুক্ষেত্রে অদ্ভুত এবং বিচিত্র বহুকাল ধরে
অবহেলায় পড়েছিল, এমনকি ভারতীয় পুরাতাত্বিক সর্বেক্ষণ এগুলিকে অবজ্ঞা করত অনাকর্ষক হিন্দু মূর্তি হিসাবে কারণ এগুলো অনেক সময়েই পাওয়া গেছিল বিভিন্ন গ্রামদেবতার থানে ব্রহ্মণ্যতান্ত্রিক দেবতা জ্ঞানে পূজিত অবস্থায়।”
(এল এ ওয়াডেল, ‘দি বুদ্ধিস্ট পিক্টোরিয়াল হুইল অফ লাইফ’, পৃ ১৩৫, বাঁকা হরফ আমার)

বজ্রযান দেবমূর্তিকে হিন্দুমূর্তি হিসাবে ধরে নেবার এই ভ্রমকে নেহাৎ প্রাচ্যবাদী (orientalist)বলে অবজ্ঞা করা ঠিক হবে না। কারণ ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে, ব্রাহ্মণ্যধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম সারা পালযুগ ধরে পূর্বভারতের জনগণের মধ্যে প্রভাববিস্তারের জন্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রত ছিল। বজ্রযানমতের মূর্তিউদ্ভাবনের এই প্রাচুর্‍্যের অন্যতম কারণ ছিল মূর্তিবহুল ব্রাহ্মণ্যধর্মকে তার অস্ত্রেই পরাস্ত করার প্রচেষ্টা। বহু পণ্ডিতের মতে দেবীপূজনতন্ত্র যা ব্রাহ্মণ্যধর্ম আত্তীকরণ এবং শুদ্ধিকরণ  করেছিল কুষাণ যুগের শেষভাগে (খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী), বজ্রযান দেবীমণ্ডলীর অনুপ্রেরণা সেখান থেকেই আসছিল, যদিও এর পূর্ণবিকাশের পথে আংশিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল নারীশক্তির প্রতি আদি বৌদ্ধধর্মের সীমায়িত দৃষ্টিভঙ্গি।৪ক

অনাকর্ষক হিন্দু মূর্তি হিসাবে বজ্রযান মূর্তিরূপের এই অবহেলাকে পালযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের মূর্তিতাত্বিক সংগ্রাম তথা মূর্তিরূপলক্ষণের সংশ্লেষজনিত গোলমাল বলে ধরে নেওয়াও কিন্তু এক ঐতিহাসিক অতিসরলীকরণ। কারণ বজ্রযান মূর্তিরূপ ব্রাহ্মণ্যমূর্তিরূপের বিলম্বিত নকলনবিশি ছিল না। যথেষ্ট পুরাতাত্বিক ও লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তারার মূর্তিরূপ বহু আগেই পূর্ণবিকশিত ও পূর্ণপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।   

“তারার রূপ ও তাঁর দেবীলক্ষণ – বরমুদ্রা ও উৎপল – খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে নালন্দায় পূর্ণবিকশিত হয়েছিল…খুব সম্ভবতঃ তারাভজনা ও তাঁর উপাসনামন্ডলীর সূত্রপাত পূর্বভারতেই।”৪খ
   
এখানে আমাদের মনে রাখে হবে যে তারার এই রূপলক্ষণ গড়পড়তা ভারতীয় দেবীদের অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান – যাঁরা বিরাজমানা এক হাতে বরদানমুদ্রা, আরেক হাতে পদ্ম নিয়ে(যে ফুলের রূপার্থ ভারতীয় মূর্তিতত্ব ও সংস্কৃতিতে মহাভারতপ্রমাণ)। এক অর্থে এটি দেবীরূপের এক খসড়া, যার ওপর শতাব্দে শতাব্দে নানা পরিবর্তনের রং-রূপ ফলানো হয়েছে। বজ্রযান মূর্তিরূপতত্বের জটিল অথচ একরোখা স্বরুপ বুঝতে এটি বোঝা জরুরী – কারণ বজ্রযান দেবমন্ডলীর রূপ অনেক সময়েই একটি কেন্দ্রীয় রূপের নানা সূক্ষ ও বহুধাবিচিত্র রকমফের।   

ভারতীয় উপাসকমন্ডলীর দৃষ্টিতে বরদাত্রী, পদ্মপাণি দেবীর রূপ অপরিচিত নয়। পৌরাণিক দেবী লক্ষ্মী বা শ্রীর রূপকল্পনা কুষাণ-পূর্ব যুগ থেকেই এই গোত্রের।
    

এর থেকে নানা মূর্তিরূপসংক্রান্ত ধাঁধাঁর উৎপত্তি হয়, তার মধ্যে একটি সচিত্র উদাহরণ আমাদের
আলোচনায় প্রাসঙ্গিক।

চিত্র ১ অর্ধনারীশ্বর ও লক্ষ্মী / তারা (এপিঠ/ওপিঠ), স্যান্ডস্টোন, অষ্টম শতাব্দী, কনৌজ মিউজিয়ম

এই বিশেষ দোরোখা মূর্তিটি গুপ্তোত্তর কনৌজ থেকে, যার পিছন পিঠে লক্ষ্মী বা তারা, এক দ্বিভুজা দেবী – যাঁর এক হাতে বরদামুদ্রা আরেক হাতে পদ্ম, যা লক্ষ্মী আর তারা দুজনেরই রূপলক্ষণ। এর লিখন প্রায় অদৃশ্য তাই আমাদের ধাঁধাঁ থেকে যায় যে এই মন্দিরগাত্রের খোদাই মূর্তিটির পিছনপিঠে খোদাই কেন থাকবে। যদি দ্বিভুজা দেবী লক্ষ্মী হ’ন, তাহ’লে এটি কোনও হরিহর মন্দির থেকে সংগৃহীত হতে পারে। ইনি যদি বৌদ্ধ দেবী তারা হ’ন, তবে এর উৎসব্যাখ্যা মুশকিল। সামনের পিঠের অর্ধনারীশ্বর আর পিছনের পিঠের দেবীর ভাস্কর্যশৈলীও কাছাকাছি। সামনেরটি যদি অষ্টম শতাব্দীর ভাস্কর্যশৈলী হয়, পিছনেরটি আরেকটু পুরনো। তা’হলে কি প্রতিহার যুগে বৌদ্ধধর্মের ক্ষীয়মানতার সাথে সাথে তারার পুরনো মূর্তি উপড়ে এনে গুপ্তোত্তর শৈব মন্দিরের খোদাইকাজের রসদ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল?  


এখনও অব্দি আমরা তারার রূপের ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক উৎস নিয়েই আলোচনা করেছি, এবার তাঁর বৌদ্ধ ধর্মতাত্বিক উৎস নিয়ে আলোচনা করার পালা। নিচের নকশাটি এই বহুধাবিচিত্র বিষয়টিকে চুম্বকরূপে বোঝার জন্য জরুরী – হিন্দু আর বৌদ্ধ তান্ত্রিক দর্শনের তফাতগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার করে দেয়।


চিত্র ২
অগেহানন্দ ভারতীর  ”দি তান্ত্রিক ট্র্যাডিশন ‘ বই থেকে (বি  আই পাবলিকেশন, বম্বে , ১৯৭৬) ১৯৯-২০৮ পাতা দেখুন

বজ্রযানের আদি পুরুষ অর্থাৎ আদি বুদ্ধ এবং আদি প্রকৃতি অর্থাৎ আদি প্রজ্ঞা থেকে উদ্ভব হয় বজ্রযানের মুখ্য দেবমণ্ডলের অর্থাৎ পাঁচ ধ্যাণী বুদ্ধের – বৈরোচন, অক্ষভ্য, অমিতাভ, রত্নসম্ভব এবং অমোঘসিদ্ধি – যাঁদের সাথে আমরা পরিচিত। এই পাঁচ বুদ্ধের প্রত্যেকের নিজ নিজ রং, শক্তি, দিক, মুদ্রা, উপায় ও ঋতু রয়েছে।  

ধ্যাণী বুদ্ধেরা অক্রিয় এবং সতত গভীর ধ্যানে নিরত। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের এক একটি সক্রিয় বোধিসত্ব বর্তমান, যাঁরা যুগে যুগে সৃষ্টিকে রক্ষা করেন এবং যুগান্তে নিজ নিজ উৎসধ্যাণীবুদ্ধে প্রত্যাবর্তন করেন।  

অন্যান্য বজ্রযান দেবীদের মধ্যে মুখ্যত তারারা হলেন এক প্রকারের নারী বোধিসত্ব। নিচের চিত্রে আমরা দেখতে পাই যে তাঁরা পঞ্চধ্যাণীবুদ্ধ এবং তৎসংক্রান্ত ধর্মতাত্বিক ও রূপতাত্বিক কাঠামোর সাথে যুক্ত।   



চিত্র ৩
কুণাল চক্রবর্তীর  ‘ রিলিজিয়াস  প্রসেস : দ্য পুরানাস  অ্যান্ড  দি  মেকিং  অফ এ রিলিজিয়াস  ট্র্যাডিশন  ‘ বই থেকে (অক্সফোর্ড  ইউনিভার্সিটি  প্রেস, ২০০১) ১৪০ পাতা দেখুন


তারার উপাসনাপদ্ধতির নির্মাণ নানা দেশ-কাল জুড়ে হয়েছিল তাই তাঁর উৎস নিয়ে কাহিণীও নানারুপ (নারী উপাসিকাদের দেবীত্বপ্রাপ্তি, অবলোকিতেশ্বরের করুণাশ্রুবিন্দুর দেবীত্বপ্রাপ্তি২ক ইত্যাদি।)

কিন্তু যখন আমরা আমাদের আলোচনার সূচীমুখ শুধু পালযুগের কিছু তারার রূপে সীমাবদ্ধ রাখি তাহলেও নানা কাহিনীর এই পারস্পরিক এবং পরস্পরবিরোধী জাল আমাদের পথরোধ করে দাঁড়াতে পারে।

তাই, পালযুগের তারাদের রূপবিশ্লেষণের প্রক্রিয়াগত আদর্শ হিসাবে এরুইন প্যানোফস্কির তিন-ধাপ  আইকনোগ্রাফিকাল বিশ্লেষণপদ্ধতি আমাদের কাজে লাগতে পারে, আপাতদৃষ্টিতে তা খুব অনমনীয় মনে হলেও।
 
প্রথম ধাপ “প্রি-আইকোনোগ্রাফিক ডেসক্রিপশন” – রূপবিদ্যামূলক বিশ্লেষণের আগের ধাপে যা চোখে ধরে তার মামুলি বিবরণ – যেখানে ছবির বিষয়ের কোনও বিশ্লেষণ বা তার প্রসঙ্গের কোনও বিচার করা হয় না এবং সে বিষয়ে জানকারির কোনও প্রয়োজন পড়ে না, শুধু দৃশ্যমান বিষয় চিনতে পারলেই যথেষ্ট।

দ্বিতীয় ধাপ, “আইকোনোগ্রাফিকাল অ্যানালিসিস” বা রূপবিদ্যামূলক বিশ্লেষণ করতে হলে চিত্ররূপের বিষয়বোধ জরুরী। কারণ, “এর অন্তর্গত থাকে ছবি, গল্প ও রুপকের দুনিয়া” (প্যানোফস্কি ১৯৩৯, পৃষ্ঠা ১৪) যা প্রথম ধাপের বিশ্লেষণের সাথে তার প্রসঙ্গ, বিষয় আর ধারনাকে যুক্ত করে। এর জন্য অনেক সময়েই ছবির বাইরের বিভিন্ন লিখিত জ্ঞানের দরকার হয় কিন্তু তার সাথে সাথে চিত্ররূপের প্রতি অভিনিবেশও প্রয়োজন। 

“আইকোনোগ্রাফিকাল অ্যানালিসিস”-এর তৃতীয় ধাপ চিত্ররূপের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার (যাকে “আইকোনোলজিকাল অ্যানালিসিস” বা “রূপতাত্বিক বিশ্লেষণ”-ও বলা যায়) সবচেয়ে জটিল, কারণ তা সহজলভ্য নয়। “চিহ্নের গুরুত্ব”-এর জগতের সংশ্লিষ্ট এই ধাপের জন্য দরকার “মানবমনের মৌলিক লক্ষণের সাথে পরিচয়”, যাতে চিত্ররূপের গভীরতর অর্থ (যদি আদৌ থাকে) মানবচেতনার কোথা থেকে আসছে তা চিহ্নিত করা যায়।

…এই তিন-ধাপ বিশ্লেষণপদ্ধতি প্রয়োগের মুশকিল শুরু হয় প্রথম ধাপ থেকে, তার নাম দেওয়ার মুশকিল থেকে। কারণ এই তিনটি ধাপের বিভাজন এবং ক্রম কাগজে-কলমে খুব পরিষ্কার হলেও, মানবমন যেরকম দ্রুততা এবং অর্ধ-সচেতনতা বা অচেতনতার সাথে নানা চিহ্নকে পড়ে এবং তার সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করে, সে কথা ভাবলে বাস্তবে এই তিনটি ধাপকে আলাদা, সচেতন ও সংশ্লিষ্ট চিন্তাক্রমে ভাগ করা কঠিন।

উপরের আলোচনাকে মনে রেখে আমরা প্রথমে দেখবো মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম, নিউ ইয়র্কে সংরক্ষিত একটি পুঁথিতে তারার একটি ছবি।

চিত্র ৪ক, ৪খ
সহর্ষ ভক্তমন্ডলে বরদা হরিৎ তারা : ”অষ্টসহস্রিকা  প্রজ্ঞাপারমিতা ‘ পুঁথির  পাতা থেকে । দ্বাদশ শতাব্দীর  শুরুর দিকের পাল পুঁথি । তালপাতায়  জলরঙ্গে আঁকা 
/  পশ্চিম বঙ্গ বা বাংলাদেশে প্রাপ্ত  / পাতার মাপ  : ২ ৩/৪  ১৬ ৭/১৬ ইঞ্চি (৭ x ৪১.৬ সেমি )  /  ছবির মাপ :  ২ ১/২ x  ১ ১৫/১৬ ইঞ্চি (৬.৪ x ৪.৯ সেমি) / লীলা একেসন  ওয়ালেস কর্তৃক প্রদত্ত / অ্যাকসেশন নাম্বার : 2001.445i


প্রথম ধাপের “প্রি-আইকোনোগ্রাফিক ডেসক্রিপশন” হিসাবে আমরা উপরের ছবির আখ্যায় মিউজিয়ামের দেওয়া বিস্তারিত বিবরণকে গ্রহণ করতে পারি। দ্বিতীয় ধাপের  “আইকোনোগ্রাফিকাল অ্যানালিসিস” শেষে আমরা জানাব যে বরদানরতা হরিৎ বা সবুজ রঙের লৌকিক তারা অলৌকিক ধ্যাণীবুদ্ধ অমোঘসিদ্ধির থেকে উদ্ভূতা।  অমোঘসিদ্ধির বর্ণ হরিৎ, দিক উত্তর, ভূত ক্ষিতি এবং তিনি ঘ্রাণশক্তির অধিদেবতা। তৃতীয় ধাপের “আইকোনোলজিকাল অ্যানালিসিস” থেকে বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ তথ্য এই পাওয়া যায় যে, এই তারার হাতে লীলাকমল অনুপস্থিত কিন্তু তিনি রয়েছেন “শালভঞ্জিকা” ভঙ্গিমায়, যে ভঙ্গি ভারতের চিত্ররূপের ইতিহাসে বহুপ্রাচীন এবং যার তাৎপর্য উর্বরতা ও বরদা প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত।
 
চিত্র ৫
অষ্ট ধাতব  বজ্র তারা যন্ত্র

পরের  উদাহরণ১০ ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতার সংগ্রহ থেকে (অপ্রদর্শিত) যার সময়কাল নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে। ১৮৯৩ সালে চাঁদিপুরে (বর্তমানে ওড়িশায়) পাওয়া সাত ইঞ্চিখানেক লম্বা অষ্টধাতুর তৈরি এই বজ্রতারা-যন্ত্রের আটটি পাপড়ি খোলা-বন্ধ করা যায়। নলিনী কান্ত ভট্টশালীর আঁকা১১ নিচের নকশা অনুযায়ী পদ্মের মধ্যবর্তিনী হলেন বজ্রতারা ও তাঁকে ঘিরে তারার অন্য চারটি রূপ ও চারজন যোগিনী (যদিও এ নিয়ে মতভেদ বর্তমান)।  


চিত্র ৬
বজ্র তারা যন্ত্রের কুশীলবদের পরিচয়

এইপ্রথম ধাপের “প্রি-আইকোনোগ্রাফিক ডেসক্রিপশন”-এর পরের ধাপের বিশ্লেষণে এসে বলা যায়, বজ্রতারা পীত বা হলুদ বর্ণের তারার আরেক রূপ। তাঁর উদ্ভব ধ্যাণীবুদ্ধ রত্নসম্ভব থেকে। রত্নসম্ভবের বর্ণ পীত, দিক দক্ষিণ, ভূত তেজ এবং তিনি দৃষ্টিশক্তির অধিদেবতা। এই পদ্মযন্ত্রের মধ্যবর্তিনী বজ্রতারাকে দেখা যায় যখন পদ্ম পূর্ণপ্রস্ফুটিত, আর তিনি অদৃশ্য যখন পদ্মকলি মুদিত হয়। দৃশ্যমানতার এই ক্রমাগত রদবদল হয়তো উপাসককে তাঁর নির্বাণচেতনাশিখার কম্পমানতা মনে করিয়ে দেয়।

তৃতীয় ধাপের “আইকোনোলজিকাল অ্যানালিসিস” করতে হলে এই মন্ডলের শিল্পনৈপুণ্য ছেড়ে এর প্রতীকী   তাৎপর্‍্যের কথা ভাবতে হবে। এই পদ্মমণ্ডল একইসাথে দেবীর বসতি এবং মহাজগতের একটি হাতসই রূপ। বজ্রতারা, অন্যান্য তারা ও যোগিনীদের একটি হাতসই পদ্মের মধ্যে স্থাপন করে উপাসক যেন অসীম মহাজগতকে সসীম,  দেবমন্ডলের মানবায়ন এবং ক্ষুরধার নির্বাণপথকে আরেকটু চলনসই করে নেন।


চিত্র  ৭
তারা, পালযুগ, বিহার, একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দী , কৃষ্ণশিলা , ৮৩.৫x ৪৪.৫ সেমি, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, কলকাতা, এক্সেশন নাম্বার ৫৬৮১

তৃতীয় এবং শেষ উদাহরণে – একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর একটি কৃষ্ণশিলামূর্তি – যাওয়ার আগে এই তিনটি উদাহরণই কেন বাছা হ’ল, সে বিষয়ে কিছু কথা জরুরি। কারণ আপাতদৃষ্টিতে এই চয়ন খুব এলোমেলো – কারণ না এটি কালানুক্রমিক না তো শিল্পমাধ্যমভিত্তিক। কিন্তু এই আপাত-এলোমেলো চয়ন সচেতন, যা গতানুগতিক চয়নের মধ্যে আমাদের যে অদৃশ্য পক্ষপাত থাকে তা দূর করতে সচেষ্ট। সমসাময়িক পুরাতত্ব গবেষকরা ৫ক আমাদের মনে করিয়ে দেন কালানুক্রমিক এবং শিল্পমাধ্যমভিত্তিক উদাহরণের ওপর ভর করে রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে নিহিত পক্ষপাতগুলিকে – লিখিত পুঁথির ওপর অতিরিক্ত ভরসা, মূর্তির রূপ সময়ের সাথে সাথে জটিল হয়ে ওঠে এই অতিসরলীকৃত প্রতিপাদ্যে বিশ্বাস, এবং ইতিহাসতাত্বিক প্রতিপাদ্যের – ও এর চিত্রঐতিহাসিক সমান্তরাল – চিত্ররূপশৈলীর  গতবাঁধা জন্ম-বিকাশ-বিকৃতি-মৃত্যু প্রতিপাদ্যের প্রতি অতিনির্ভরতা। 

এই কৃষ্ণশিলামূর্তিতে তারা এক পদ্মবনের মধ্যে ললিতাসনে উপবিষ্টা, ওপরে পঞ্চধ্যাণীবুদ্ধ, দু’ পাশে দুই অধিদেবতা। যদিও তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অমোঘসিদ্ধি-সম্ভূতা, কিন্তু অন্যান্য ধ্যাণীবুদ্ধের সাথে তাঁর যোগাযোগ এই লেখায় আগেই উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম ধাপের “প্রি-আইকোনোগ্রাফিক ডেসক্রিপশন”-এ এটুকু বলা যায়।

দ্বিতীয় ধাপের “আইকোনোগ্রাফিকাল অ্যানালিসিস”-এ উল্লেখ করবো একটি কথিত কাহিনী। আমরা জানি, ঐতিহাসিকভাবে লৌকিক তারার উপাসনার জনপ্রিয়তা – যাঁর নাম শব্দতাত্বিক ভাবে ‘ত্রাণ’ শব্দটির সাথে  যুক্ত – অষ্টমহাভয় (যা অনেকের মতে তৎকালীন বিভিন্ন বাণিজ্যপথের বিপদের প্রতীক) থেকে তিনি ত্রাণ করেন বলেই। এখানে তারার উপবেশন মুদ্রা – এক পা মাটিতে ছোঁয়ানো, পদ্ম থেকে উঠে আসার জন্য তৈরি – ভক্তমানসের এই কল্পনার সাথে যুক্ত যে, দেবীকে বিপদে পড়ে ডাকলেই তিনি আসবেন, চোখের পলকে নিজের আসন থেকে ভক্তের পাশে এসে দাঁড়াবেন।

তারার চারপাশের না-ফোটা, আধফোটা ও পূর্ণপ্রস্ফুটিত পদ্মের প্রতীকময়তা বিভিন্ন – তা উপাসকদের আধ্যাত্মিক বিকাশের নানা পর্বকে কিংবা ত্রিকালকে চিহ্নিত করে – অতীত (পদ্মকলি), বর্তমান (আধফোটা পদ্ম) এবং ভবিষ্যৎ (পূর্ণপ্রস্ফুটিত পদ্ম)। অর্থাৎ তারার করুণাময় উপস্থিতি সর্বকাল ও সর্বদশার জন্য। 

তৃতীয় ধাপের “আইকোনোলজিকাল অ্যানালিসিস” করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তারার বিভিন্ন আদিরূপ ও তার নানা রকমফের, তাঁর বিভিন্ন ভক্তসম্প্রদায় ও উপাসকমন্ডলীর মিশ্রণ, বিভিন্ন তারারূপের মিশ্রণ এবং তৎসংশ্লিষ্ট চিত্ররূপ ও চিত্ররূপতত্ত্বের অন্তর ইত্যাদি মূল বিষয়ে। 

সব জনপ্রিয় দেবতাদের মতই, তারার অজস্র রুপভেদ বহু শতক ধরে ক্রমশঃ সব ভক্তের কাছে সবকিছুর বা কিছু না কিছুর পুণ্য ও গভীর প্রতীক হয়ে ওঠে। পূর্বভারতে তারার বর্তমান হিন্দু রূপের সূত্রপাত হয়েছিল খুব সম্ভব দশমহাবিদ্যামন্ডলে মহাচীনতারার অন্তর্ভুক্তি দিয়ে। 

এই সংক্ষিপ্ত রূপতাত্ত্বিক নকশা থেকে আশা করি বিচিত্ররুপিণী তারার নানারূপের উপনদী ও শাখানদীর বিন্যাস কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাবে।  


বাংলা অনুবাদের উৎস ইংরাজী লেখা-
https://www.academia.edu/12254481/On_the_Iconography_of_Vajrayana_Goddess_Tara

অন্তটীকা

১. এন ইন্ট্রোডাকশন অ্যান্ড বিবলিওগ্রাফি টু দ্য স্টাডি অফ মহাযান অ্যান্ড বজ্রযান আইকনোগ্রাফি, অথর(স): ডেভিড জোনস। সোর্স: নিউজলেটার (মিউজিয়ম এথনোগ্রাফারস গ্রুপ), নং ৩ (মার্চ ১৯৭৭),  পৃষ্ঠা ৫-৮, পাবলিশড বাই:   মিউজিয়ম এথনোগ্রাফারস গ্রুপ

২. তারা এন্ড টিবেটান বুদ্ধিজম: দি এমার্জেন্স অফ দি ফেমিনিন ডিভাইন, এলিসন মূল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্, এমোরি- আই বি ডি টিবেটান স্টাডিজ প্রোগ্রাম ধরমশালা, ইন্ডিয়া ( স্প্রিং ২০০৪), পৃষ্ঠা ১৫

২ক. ঐ, পৃষ্ঠা ১০

২খ. ঐ, পৃষ্ঠা ১২


৩. ট্রান্সেন্ডেন্টাল এন্ড প্র্যাগম্যাটিক এসপেক্টস অফ রিলিজিয়ন, ডেভিড জি ম্যান্ডেলবাম, আমেরিকান অ্যানথ্রোপলজিস্ট নিউ সিরিজ, ভলুম ৬৮, নং ৫ (অক্টোবর ১৯৬৬), পৃষ্ঠা ১১৭৪- ১১৯১


৪. ডেভেলপমেন্ট অফ বুদ্ধিস্ট আইকনোগ্রাফি ইন ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া:  এ স্টাডি অফ তারা, প্রজ্ঞাস অফ ফাইভ তথাগতস এন্ড ভ্রি কুটি, মল্লার ঘোষ, মুন্সিরাম মনোহরলাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৮০, পৃষ্ঠা ১


৪ক. ঐ, পৃষ্ঠা ১৪

৪খ. ঐ, পৃষ্ঠা ৩১

৫. স্যাক্রেড ট্রেসেস:  ব্রিটিশ এক্সপ্লোরেশনস অফ বুদ্ধিজম ইন সাউথ এশিয়া, জ্যানিস লিওষ্কো, অ্যাশগেট, ২০০৩,  পৃষ্ঠা ১০৬

৫ক. ঐ, পৃষ্ঠা ১০৭, ১১২

৬.  মথুরার সোঙ্খে এরকম এক গজলক্ষ্মীর মূর্তি পাওয়া যায়। হিষ্ট্রি অফ এনসিয়েন্ট অ্যান্ড আর্লি মিডিভাল ইন্ডিয়া, ফ্রম দি স্টোন এজ টু ডি ১২থ সেঞ্চুরি, পিয়ার্সন এডুকেশন প্রেস, ২০০৯, পৃষ্ঠা ৪৩৮


৭. দি বডি ইন ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড থট, নমন পি আহুজা, লুডিয়ন, ২০১৩। এক্সিবিশন ক্যাটালগ “দি বডি ইন ইন্ডিয়ান আর্ট এন্ড থট” ৫ অক্টোবর ২০১৩ – ৫ জানুয়ারি ২০১৪, BOZAR, ব্রাসেলস, লেখা পৃষ্ঠা ১৮৬ থেকে,  ছবি পৃষ্ঠা ২০৫ থেকে।

৭ক. ঐ, ছবি পৃষ্ঠা ২০৫ থেকে।


৮. রিলিজিয়াস  প্রসেস : দ্য পুরানাস  অ্যান্ড  দি  মেকিং  অফ এ রিলিজিয়াস  ট্র্যাডিশন, কুণাল চক্রবর্তী,    অক্সফোর্ড  ইউনিভার্সিটি  প্রেস, ২০০১, পৃষ্ঠা ১৩৯



৯. http://science.jrank.org/pages/9729/Iconography-Methodology.html  ( ১৫/০৩/২০১৫-তে )

১০. ছবি http://www.ucpress.edu থেকে ( ১২/০৩/২০১৫-তে )

১১. আইকনোগ্রাফি অফ বুদ্ধিস্ট এন্ড ব্রাহ্মিনিকাল স্কাল্পচারস ইন দ্য ঢাকা মিউজিয়াম, নলিণী কান্ত ভট্টশালী, ইন্ডোলজিকাল বুক হাউজ, ১৯৭২

————————————-

সৌরভ রায় । ভিজুয়াল স্টাডিস গবেষক, অনুবাদক এবং  সম্পাদক।


এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান