বিজন ধ্যানকেন্দ্র দেয়ালপত্রিকার শেষ সাক্ষী (প্রথম পর্ব ) / রনি আহম্মেদ

[ শিল্পী রনি আহম্মেদের ধারাবাহিক স্মৃতিগদ্য ]

প্রেমের কলঙ্কের মাঝে এমন সুখ আছে, যা বেহেশতের লোভকে ও ভুলিয়ে দেয়,,তাই তুমি লোভী না হয়ে প্রেমিক হও।
— সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)

(এটা একটা সময়ের গাথা, এখানে ২৫ /৩০ বছর বা ততোধিক সময়ের নানা গল্প , পুরানো অয়েল পেইন্ট এর ঘ্রাণ , টেক্সচার । …আর্ট, কালচার এন্ড লাভ। কারণ ভালবাসা এমন এক শক্তি যা টাইম স্পেইস এর বাইরে থাকে। জান্নাত থেকে দুনিয়ায় আসে এবং জান্নাতেই ফিরত। আর এই লেখা হলো হারানো জান্নাতের গোলাপ। এ সিটি অফ এন্ডলেস লাভ। যখন সমাজে মানুষের দেখা মিলতো। আমার অভিজ্ঞতার একটা বয়ান। যেখানে উঠে আসবে এমন সব ঘটনা যেসব সত্য কিন্তু একটা ড্রিম স্টেট থেকে দেখা। মেমোরি হলো জেগে থাকা স্বপ্নরাজ্যে ডুবে যাওয়া। এই লেখা সময়ের দীর্ঘনিঃশ্বাস বা এমন একটি গ্রহের কথা যার কোন একজিস্টেন্স আর নাই ,সমগ্র কসমোলোজিতে, কিছু গড পার্টিকেলে হয়তো আছে ।আমরা যখন লস্ট ইন স্পেইস টাইম, তখনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে একজন ফোন করে বললো পৃথিবীর শেষ প্লেন উড়ার বেশি দেরি নাই কারোরই ,এইটা শুনে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেলাম এবং লিখা শুরু করলাম।

/ রনি আহম্মেদ। )

বিজন ধ্যান কেন্দ্র, ওয়াল ম্যাগাজিনে একটি বছর ছিল পেন্সিলে লিখা , আরো কিছু বছর ছিল যার যার কালার টিউব বা জিঙ্ক প্লেট এ বা ট্যাপেষ্ট্রি তে ,কারো কারো মুখ গুলো ফুল এ সাজানো থাকতো, বকুল তলায় তেমন কেউ যাবে না অথচ আমরা ইমরান আর হিমুর জন্য প্রতীক্ষায় ছিলাম মনে রেখো যখন তিন মূর্তির ছায়া পানির উপর মাছের খোঁজে নামে নিঝুম দ্বীপে ,আত্মারা ভালোবাসতে আবারো আসে , আমি আর শুভ তো ভর্তি পরীক্ষায় এখনো ছবি আঁকছি চেয়ারম্যান এর রুমের পাশে কোচিং-এ পথিক নবীর আঁকা অদ্ভুত সাইকেডেলিক বোতলের কথা মনে আছে , ড্রাই পন্ড-এ একদিন আশীষ খন্দকারের নাটক হলো আর কেউ ফিরলো না ঘরে, আজকে শাহীন আসলো না কিন্তু শিবলীর জন্য গোলাপ ছিল আমাদের চোখে, দূর দেশ থেকে ভেসে আসা বৃষ্টি মোল্লার দোকান থেকে চা এর কাপ এনে আমাদের ঠোঁটে দিল, বৃষ্টিকেই ধন্যবাদ,লাটিমই. সিলভানাতে আমাদের মিটিং ছিল, বহু বছর ধরেই চললো , এখনও শেষ হয় নি , শুভর ছবিটা বিক্রি হলো, জানালা ভরা মহাকাশ, ইমরানের চুল কেটে দিলাম কিউবিস্ট ধারায় , এলায়েন্স ফ্রান্সাইসে তখন বিবি র ফ্যাশন শো, আমি আর ইমরান তো জাপানি ভাষায় কথা বলি , ভ্যান গাড়িতে ব্যান্ডানা বাধা আমাকে দেখা গেলো ,বিচিত্র ভাষায় বক্তৃতা দিলাম , সারা ইউনিভার্সিটি ঘুরে , কেউ বুঝলোনা, শুধু হাসলো, সেই হাসি রমনার গাছ গুলোর মনে আছে সাদা গাড়িতে নীলা আসলো ,হীরার আন্টি গুলো এখন আকাশের তারা , শিবলী গান বানালো নীলাকে নিয়ে ,লাকি আখন্দের সাথেই দেখা হলো রাস্তায় , ইউ আর এ গ্রেট ম্যান রনি, মনে করার মতো এই ছিল শেষ কথা , নীলা চলে যাবার পরও গানটা থাকলো , নীল নীল শাড়ী পরে, যাচ্ছ নাকি অভিসারে, গিটারটা এখনো তোমার ঘরে ?স্কেচ খাতা গুলো একদিন শাহবাগের দোকানগুলো ঘুরে আসলো ,ছফা ভাই বললেন,জীবনে টাকা পয়সার দরকার আছে , আমি বললুম আচ্ছা ,লুচির দোকানের বিল কি মিটানো হইসে? শুভ বা ইমরান কে জিজ্ঞেস করতে হবে ,আব্বাসের বাসায় যেতে হবে ,তুরাগ নদীর ধারেই, আমি আর ইমরান উত্তরা আর টঙ্গীর মাংসের দোকানে ছবি এঁকে আব্বাসের বাসায় সোজা, গরম পুরি চা আর সুররিয়াল আলাপ , তুরাগের নৌকাগুলো সবই শুনতো, আমি নিশ্চিত , পাবলিক লাইব্রেরিতে কনসার্ট ছিল অচেনা দেশি হার্ড রক ব্যান্ডের ,ক্লাস রুমে আইরন মেডেন এর কথা মনে আছে শুভ?ওয়ার ফেজ এর প্রথম অ্যালবাম ? তোদের লালবাগের বাসা আর বিরিয়ানি, প্রথম অয়েল পেইন্টিং তা ভ্যান গঘ টাইপ তোদের বাসায় করলাম, অন্তু এখন আমেরিকায় ,আমার স্কেচ খাতা গুলো অন্য জগতে ভরে উঠলো , ইমরান সাক্ষী ছিল, সাক্ষী ছিল অনেকেই , দোলনের কথায় আমরা হাসলাম,আজকে মনে হয় মিছিল হবে, গুলি বা লাশ পড়তে পারে ,রজার ওয়াটার এর গলায় একবার মিছিল করলাম,আমাকে বের করে দেয়া হলো ,রিক্সা নিয়ে টি এস সি আসলাম ,মূর্তি গুলো সেদিন টেনশনে ছিল কিছুটা, আমি বুঝলাম নোটন আসবেই,পকেট থেকে চুপসানো গোল্ড লিফ বের করবে ,শিফা এখন আমেরিকায় ,রোকেয়া সুলতানার এক্সিবিশন ছিল বেঙ্গল গলারিতে ,আমি জানতাম ভালোবেসে চলে যেতে নেই , আর ফারাহ আসতো

সকাল আটটায় ,হার্ট থ্রব ফাস্ট ফুড কাফেতে আমরা যেতাম ,আর আড়ং এর তিন তলায় ,চট্টগ্রামের বাটালিতে ,ফারাহ আর শামা দুই বোন ,ইয়াম ইয়াম এর একটা জয়েন্ট ধানমন্ডিতে , ওটা ছিল পার্টি প্লেস , দুঃখিনী দুঃখ করো না আর কিছু বলার ছিল না তোমাকে গানটা তখন রিলিজ হলো , লুব্রিকেটেড গৌট ব্যান্ড করলাম আর গান করা হলো, ফুল দিয়া যায় না কেনা মন ,any way এইসব নিজেকেই বলছি, আর ভাবছি জীবন একটি আশ্চর্য মেশিন ,মহান আল্লাহ পাকের রাহমাতের বাগান… আরো কিছু কথা আছে, বলবো, যখন জাদু ঘর থেকে বেরিয়ে আসা প্রাচীন রানীদের কণ্ঠস্বর শাহবাগে দাঁড়িয়ে থাকা মাখরাজ খানের কানে প্রবেশ করবে ।

বিজন ধ্যান কেন্দ্র ওয়াল ম্যাগাজিনে একটা জানালা আঁকা ছিল ,এক চুল উড়তে থাকা নারীর মুখে বসানো, সেই মুখের ভিতর দিয়ে দেখা গেলো একজন ব্যান্ডানা বাধা চিকন যুবক চোখে সানগ্লাস , bellbottom, খালি গা …উনার ক্যানভাস গুলো ছিল পিওর জগতের ছবি ..উনাকে মিঠু নামেই চিনতাম , উনি বলেছিলেন আমাকে…কিন্তু মনে নাই কি বললেন ,,উনি একসময় পাগল হলেন বলে শুনেছি .কিন্তু পাগল হলে মানুষ কোথায় যায় ? ইমরান বললো সোলো এক্সিবিশন করবে , আমি পোস্টার করে দিলাম আমার একটা ড্রয়িং দিয়ে, .এমন ঘটনাও ঘটে?একটা বাঘ আসলো , দুই মাইল লম্বা ,আকাশ থেকে ফেরেস্তারা ঘিরে ধরলো,..ইমরানের গলা লম্বা হলো জিরাফের মতো , ভুলটা আমারি ছিল হয়তো, ইমরান ছবি গুলা উল্টা করে ঝুলালো, up side down …আর আমার আঁকা পোস্টার উল্টা করে লাগলো, পেইন্টিং এর উপর পোস্টার উল্টা করে লাগালো ,নোটন সাদিকে নিয়ে, , সাদি বললো রনি তুই বিলাক (black ) আউট হইয়া গেসোস, .আমি তখন শুভকে নিয়ে জি সি আই এর গ্রন্থাগারে, আমাদের প্ল্যান ছিলো rainbow তে যাওয়া , কবির ভাই বললো তোমাদের উত্তরা তো গ্রাম। .আমি বললুম মাররিলিওনের নতুন টা দেন , কবির ভাই অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলেন এই কথার পর ,আমি ভাবলুম মালঞ্চেতে যাওয়া উচিত ,শুভ বললো ,এদের কলিজা সিঙ্গারা ফ্রী , আমি বললুম আচ্ছা , মালঞ্চ থেকেই আমরা শাহীনের বাসা ,শাহীনের বাসা সাদা কালো ,এক রুম সাদা অন্য রুম কালো ,শাহীন বললো হারামিরা দেরি করলি কেন, আমরা লাঞ্চ করলাম ,এর পর অনেক দিন পর আব্বাস ব্যারিস্টার হলো ,কিন্তু তার আগেই আমরা নিউ মার্কেট গেলাম , নীল ক্ষেতে কি কি বই কিনা হলো , তলকেনের সিলমাররিলিওন বইটা মাত্র চল্লিশ টাকায় পাওয়া গেলো ,সুজা কিনলো , ওটা খুলতেই বেরিয়ে আসলো লর্ড অফ দি রিং,এনিয়া কে নিয়ে আমার চিন্তা ছিল না , আমি জানতুম ও ভালো গাইবে ,এর পর আসলো লাস্ট টেম্পটেশন অফ খ্রিস্ট …ফারাহ বললো তুমি .ইদানিঙ ধাক্কা দিয়া কথা বলো,সেই ধাক্কায় দেখা হলো তিমার সংগে ,তিমার হার্টে ফুটা ছিল , আনন্দ সিনেমা হলের উপরে একটা চায়নিজ ছিল, আমরা ওখানে খেলাম , মিজু ভাইয়ের সাথে খাওয়া হবে না রাজশাহির অন্ধকার চাইনিজ গুলোতে, কিছুদিন পর তিমার বিয়া হলো ,ভালেন্টাইনের দিন দেখা গেলো ,আমি জীবন্ত গোলাপের পোশাক পড়া আপাদমস্তক , সারা শহর আমার প্রেমে পড়লো , আমিও পড়লাম ,সাদি বললো ব্ল্যাক আউট , ব্ল্যাক আউট। .আমি বললাম গোলাপ গোলাপ ,জুলি আসলো বহুদিন পর ,তনিমা কে নিয়ে ইমরান আসলো , আমি বললুম কি খাবি , বললো সময় নাই , ইমরান তখন উড়ন্ত মানুষ।.দূর আকাশে ওকে উড়তে দেখতাম , শুভ কে ববললাম , এবার বসন্ত কাল আর শেষ হবে না ,নীলা বললো লেটস গো টু সোনারগাওঁ, এর পর মেরি এন্ডারসন এ একটা চিল আমাদের মুরগির ঠ্যাং নিয়ে পালালো , ইমরান বললো পলগা কৈ ?আমি ববললাম পলগা রমনায় গাজা টানে , বড় কাজল লেদার জ্যাকেট থেকে সিগারেট বের করলো , জুলি বললো তুই একটা,..আমি অন্তনেওনির blowup , সাদি বললো ব্ল্যাক আউট ব্ল্যাক আউট ,ইঞ্জিনারিং ইনস্টিটিউটে রক স্ট্রাট র কনসার্ট হলো , আমার গলার পীচ হাই ছিলো , care ফুল with that axe ইউজিন , তীক্ষ্ণ চিৎকার , কিছু মানুষ মারা গেলো ,বাম্বার কন্সার্টে ওয়ারফেজ আসি আসি বলে তুমি আর এলে না , বড় কাজল এখন ডেনমার্কে ,জুলি বললো আজ আসব, শিওর ,রাস্তায় দেখা হলো রাস্তার সাথে …, ..আমি টুম্পার খোঁজ নিবো,ও এখন ইংল্যাণ্ডে , নোটনের বাসায় যা আড্ডা হলো , একটা দশ মাইল লম্বা অজগর শান্ত, এর পর স্পেন এ একটা পেইন্টিং এর দিকে চারঘন্টা তাকিয়ে থাকলাম বহু বছর পর…প্রথম এক্সিবিশন করলাম রোকেয়া সুলতানার সাহায্যে আলিয়ান্স এ। …মোহাম্মদ কিবরিয়া তিনবার আসলেন এক্সিবিশনে , শিশির ভট্টাচার্য একটা ইন্টারভিউ নিলেন আমার,..রাইসুকে দিলেন প্রিন্ট করতে , রাইসু অস্ট্রেলিয়া গেল, এর পর ১০০ ফুট ছবি আকলাম, ফরহাদ ভাই ,ফরিদা আপা মাসখানেকের জন্য ছবিটা নিলেন উবিনীগ এ শো করার জন্য , নূহ এর নৌকা ,নবী র আশীর্বাদে অনেক কিছু হলো…আকাশ বাতাস মহান আল্লাহর জিকরে ছড়িয়ে পড়লো।.একসময় সন্ধ্যা হলো , বহু দিন পর একদিন তনিমা আসলো , ইমরান বললো আমি তো নাই রে , আমাকে খুঁজিস না ,নীলাকে কিছু বলার ছিল না…এই শহর একটা বাতিঘর তোমাদের অশ্রুময় সমুদ্রে , ৫ বছর আগে নীলার কবর খুঁজে পেলাম, ..সুখের এই রজনী স্মৃতি হয়ে থাক ।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান