সন্ত পাখিরা জানে
সংক্রান্তির ধারাভাষ্য বেদনাভরাতুর౼ এই সত্যের মুখোমুখি হই। গোরের প্রকোষ্ঠ থেকে মুর্দারা শিখিয়ে-পড়িয়ে দিচ্ছে নগরের বিক্ষিপ্ত হাওয়ালেখ আর মেঘাচ্ছন্ন বিস্মৃতির পরিভাষা। ছায়াতীর্থ ভারী হয়; অদূরেই কুড়াচ্ছো তুমি, উঠানভর্তি রোদের ফেনোমেনা౼ কিংবা ভুরুকুঞ্চনের ভাঁজে-ভাঁজে পুঁতে রাখছো উদ্বায়ী সন্দর্ভের আয়ু।
নিরুদ্বেগ প্রতিসরণের দিকে ফিরি౼ চলে যেতে বাধা নেই অস্পষ্ট রেডলাইটের ইশারায়। যেখানে ঠেকেছে এসে উড়ুক্কু মেলোড্রামা౼ পরিত্যক্ত দেয়ালের মনোলগ। যেন অনিঃশেষ বোতাম খুলে যাওয়া! আমাদের অরণ্যরোদন-শেষে, সমুদ্র কি ফিরিয়ে দেবে সুসময়ের হাওয়া?
যখনই তূর্ণা নিশীথার সাইরেন ঘনীভূত হলো নৈর্ঋত আকাশে౼ মেগাস্থিনিস ছুঁয়ে গেল ক্ষত, মৃত্তিকার জীবাশ্ম-পিরিচে। কেশের গরিমা ধরে ঝুলে আছে স্বৈরশাসন। ফাঁক পেলে নড়েচড়ে বসি। অহেতুই ধোঁয়া ছাড়ি পুষ্পবনে…
পরিচিতা
বিদগ্ধ নন্দনের পানে তাকিয়ে ভেবেছি, সমুদ্র কতদূর? তারপর বোধিদর্পণে ডুবে যেতে দেখলাম হৃদয়ের আর্দ্র বনভূমি। আদিপৃথিবীর সর্পিল ধারাভাষ্য, অহমের ক্লান্ত অনিমিখে ঝরতে লাগলো বঙ্কিম বর্ষাতির ভূগোলে। শাড়ির সামুদ্রিকতার ভেতর একটা কিছু (সাংঘাতিক) ঘটিয়ে চলেছি যেন অদক্ষ ডুবুরির মতো। জীবনের অন্তর্মুখী নির্জনতায়, আশ্চর্য স্থিতির মনোটনি কার্যত হিম করে রাখে আত্মঘাতী বোধের দোলাচল।
দিনান্তের দীপ্তিরেখা বয়ে গেল মন্থর সমুদ্রের দিকে! লালিমার বিন্যাসে দূর থেকে দেখা হয় তাকে। ফেনাজল-সমুদ্র গায়ে জড়িয়ে সে এলো, পাণ্ডুর সন্ধ্যার মতো আচানক౼ একাকী। হয়তো সে এক অপসৃয়মাণ আলো౼ তারও আছে বিষাদ-রহিত পথ।
লাল পিয়ানোর মোড়
তারা ঝরে গেল সকরুণ ক্যানভাসে
আকণ্ঠ পান করেছি সমুদ্দুর
যিশু হেঁটে যান হৃৎকমলের পাশে
স্মরণে জাগছে পাহাড়-অনন্তপুর
কথা বলবার প্রসঙ্গ নেই কোনো
কথার কামিনী ফুটছে কি পাঁচ-সাত?
নতির লাগাম কণ্ঠেতে আটকানো
ফল্গুধারায় পেরুচ্ছি সব রাত
শুকনো পাতায় রাত্তির হয় ভোর
বন্ধ্যা বাতাস বইছে কী গান গেয়ে?
ফুলে ছেয়ে গেছে লাল পিয়ানোর মোড়
ভৈরবী রাগ মুয়াজ্জিনের মেয়ে
এলোমেলো কেশ উড্ডীন সুবাতাসে
আকাশগর্ভে মেঘের ভগাঙ্কুর
আফিম ঝরছে বৃষ্টির বিন্যাসে
কথায় আলাপ গড়ায় অনেক দূর…
দুর্বিনীতের কাব্য
সবিনয় চিত্তের গুণ টানা কখনও অভিনয়,
কিছুটা দেখার পরে প্রশ্নেরা কার্যত হয় বালি౼
সে ওজন যতই টানি, ততোধিক নষ্ট সময়;
ভেবে যাই বলিহারি౼ এ দুনিয়া জরুর হেঁয়ালি!
করোটির প্রকোষ্ঠ যার সয়লাব ধূর্ত ফিকিরে౼
ওরাও কষছে ছক সময়কে বদলে দেবার।
যা কিছু রাঘববোয়াল౼ মুরিদের পূর্ণ জিকিরে
সিদ্ধির দমে কেউ বনে যায় তরুণ ভলত্যেয়ার!
বাহাসের মজলিসে বেসামাল থিওরি খসিয়ে
টেবিল কাঁপাচ্ছে কেউ ঝেড়ে-কেশে বিদগ্ধ খেউড়;
আবডালে কেচ্ছা ফাঁদেন, বাল্মিকী রসিয়ে রসিয়ে।
একলা মাছরাঙার কী আরাধ্য বিরান হাওর!
নিভৃতি কখনও সুখের౼ হোক না সে ধাতব জলধি,
আমাকে এডিট করছেন আজ মাজিদ মাজিদি।
মোষের রেজিম ও বিবিধ ভাবনা
মসনভি বা জেনকবিতা,
মেরুন ব্যালেরিনা—
অনুবাদে হাত ততটা
মেলেনি তার ডানা।
এবার বীণায় জমুক ধুলো౼
একটানা সবগুলো
বিয়ার-ক্যানে বৃষ্টিজলের
সিম্ফনি মন্দ্রিল।
আমরা তখন টানছি বিড়ি
সাকুরার ঠিক নিচে౼
গোঁয়ার মোষের তপ্ত রেজিম
ঝুলছে নাকের কাছে।
উর্দিধারীর জিম্মি যারা౼
মস্ত তাদের দোষ!
চক্রব্যূহ গড়ছে দ্যাখো
শিঙেল শিঙেল মোষ!
“গেলাস পরিপূর্ণ করো
বাঈজিবাড়ির গানে”—
উন্নয়নের ভেল্কিবাজির
বিদগ্ধ দর্শনে।
ধ্যানের ভেতর হাতড়ে ফিরি
হরেক কানাগলি౼
বিদেশিনী গাছের ডালে
আড়ষ্ট বুলবুলি!
কিসের দর্পে কালনাগিনীর
ফণার পানে চাই?
শিরায় শিরায় আন্তঃনগর
ট্রেন চলে শাঁইশাঁই…
প্রবাসিনী
তুমি কি এক দূরের দেশের
হাওয়ায় মেশা ফুলের সুবাস
౼এই জানালায়?
শুকনো পাতা মর্মরিয়ে
সবিস্ময়ে দেখছি চেয়ে,
আঁচল তোমার যাচ্ছে ছেয়ে
কৃষ্ণচূড়ায়…
চেনা হরফ দিচ্ছে উঁকি
না পাঠানো তোমার চিঠির
অরক্ষিত বর্ণমালায়!
মহুয়াবন গন্ধে মাতাল
মন্দাকিনী উথাল-পাথাল
তোমার পালক পড়লো খসে
গুলবাগিচায়…
দেখা দিও পাতাঝরা
নূপুর জেনেছে বিস্মৃত সুরমালা
রঙধনু মেশে জলপ্রপাতের গায়
নিঃশ্বাসে কাঁপে গণমুক্তির ভাষা
শাশ্বত গান নীরবে অস্ত যায়
তত নাই, যত আছে বলে ছুটে চলা
আমার কণ্ঠে গোলাপের খঞ্জর
নজরানা নাই, দেখা দিও পাতাঝরা
জুজুর ভয়েতে বিস্তৃত চরাচর
মরুর কপোলে করুণ সন্ধ্যাতারা
প্রত্নপ্রতিম মেহদী ౼ কবিতা লেখেন, ঢাকায় থাকেন এবং নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন।